×

সারাদেশ

আড়তদারের ‘অন্যায়’ আবদারে ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আমচাষিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২১, ০৪:৪১ পিএম

আড়তদারের ‘অন্যায়’ আবদারে ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আমচাষিরা

সাপাহার আম বাজার

আড়তদারের ‘অন্যায়’ আবদারে ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আমচাষিরা

আম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষক।

আড়তদারের ‘অন্যায়’ আবদারে ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আমচাষিরা

নওগাঁ জেলার সাপাহার আম বাজার জমে উঠেছে। প্রতিদিনই বাজারে আসছে নানা জাতের আম। ছবি: ভোরের কাগজ

আড়তদারের ‘অন্যায়’ আবদারে ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে আমচাষিরা

নওগাঁ জেলার সাপাহার আম বাজার জমে উঠেছে। প্রতিদিনই বাজারে আসছে নানা জাতের আম। তবে স্বস্তিতে নেই আমচাষিরা। আম বাজার সমিতি ও আড়তদারদের ‘অন্যায়’ আবদারে বিপুল ক্ষতি ও হয়রানির মুখে পড়েছে তারা।

৪০ কেজিতে মণ হলেও আড়তদাররা চাষিদের কাছ থেকে নিচ্ছেন ৪৫ থেকে ৫২ কেজি আম। তবে বাড়তি আমের দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে অনবরত ঠকেই যাচ্ছেন তারা। আম বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আড়তদাররা বলেন, পরিবহনে অনেক আম নষ্ট ও পচে যায়। তাই কৃষকদের কাছ থেকে একটু বেশি আম নেওয়া হয়।

জানা গেছে, এ ব্যাপারে প্রশাসনের নেই কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। আমচাষিরা বলছেন, প্রশাসন যদি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করত তবে এতটা বেপরোয়া হতে পারত না আড়তদাররা।

[caption id="attachment_288695" align="aligncenter" width="700"] আম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কৃষক।[/caption]

এবার সাপাহার আমবাজার সমিতি ২৭০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাজারের বিভিন্ন আড়তদার মালিক কমিশন ও খাজনার নামে এ টাকা আদায় করবে আমচাষিদের কাছ থেকে। জানা গেছে, তাদের দেওয়া হবে না কোন রশিদ ও ভাউচার। এর বাইরে বিনামূল্যে ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার মণ আমও নিবে বলে অভিযোগ আম চাষিদের।

আমের মৌসুমে সাপাহার বাজারে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত আম কেনা-বেচা হয়ে থাকে। এই হাটে দিনাজপুর, জয়পুরহাট, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে আম নিয়ে আসেন আমচাষিরা।

উপজেলার আমচাষি এনামুল হক (ছদ্মনাম) ভোরের কাগজকে জানান, আমাদের আম চাষে অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্যে আম বাজারজাতকরণ একটি বড় সমস্যা। এদিকে বর্ষা মৌসুমে আমশ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়। তাই অধিক পারিশ্রমিক দিয়ে আম ভাঙতে হয়। সারাবছর আমবাগানের পরিচর্যা করতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে আম উৎপাদন করে যখন ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়ি। তখন বুক ফেটে কান্না করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না।

আমবাজার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা ভোরের কাগজকে জানান, এ বছর বড় আকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আমের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এজন্য লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবার এই বাজারে ১৫ লাখ মেট্রিক টন আম কেনাবেচা হওয়ার কথা রয়েছে।

তিনি জানান, ৪৫ কেজিতে মণ। প্রতি মণে ৭০ টাকা কমিশন দিতে হবে আমবিক্রেতাকে। এই টাকা আড়তদার নিয়ে নেবেন। খাজনা দিতে হবে মণে ২ টাকা করে। খাজনার টাকা পরে হাট ইজারাদারকে দিয়ে দেওয়া হবে।

বুধবার হাট ইজারাদার আবুল কাসেম ভোরের কাগজকে বলেন, আমবাজার সমিতির সন্ত্রাস বাহিনী নিয়ে গঠিত। ৫০ থেকে ৫২ কেজিতে মণ নিচ্ছেন। প্রতি মণে কমিশনের নামে ৭০ টাকা চাঁদা আদায় করছে। আমরা হাটমালিক হলেও তারা আমাদের খাজনা উঠাতে দেন না। খাজনার টাকাটাও আমাদের ঠিক মতো দেন না। তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই পেরে উঠা যায় না। গত বছর মাত্র ১২ লাখ টাকা খাজনা বাবদ টাকা দিয়েছেন।

[caption id="attachment_288698" align="aligncenter" width="700"] আম[/caption]

আমবাজার সমিতির সভাপতি দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাপাহারে ১৫ লাখ মেট্রিক টন আম কেনাবেচা হবে। মণে ৫ কেজি বেশি নিলে বিনামূল্যে ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫ শত মণ আম বেশি নিবে তারা। কমিশন হিসেবে ২৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং খাজনা নেবেন ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মোট ২৭০ কোটি টাকা নিবেন তারা। এই টাকা না দিলে আম কেনাবেচার কোনো উপায় নেই আমচাষিদের। যে টাকার কোনো রশিদ বা ডকুমেন্ট দেওয়া হয় না।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে নওগাঁয় ২৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৪ মেট্রিক টন হিসাবে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন। বাগানগুলোতে গুটি আম, গোপালভোগ, রানীপছন্দ, খিরসাপাত/ হিমসাগর, নাগ ফজলী, ল্যাংড়া, ফজলী, আম্র্রপালি, আশ্বিনা, বারী-৪ ও ঝিনুক জাতের আম চাষ করছেন চাষীরা।

সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ভোরের কাগজকে বলেন, আম বিক্রয় করার সময় মণে ৭০ টাকা ও ওজনে ৫ কেজি বেশি নেওয়ার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিছু জানে না। এটি আম ক্রেতা-বিক্রেতার বিষয়। কাউকে হয়রানি বা অত্যাচারের অভিযোগ পেলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App