×

সম্পাদকীয়

কিশোর অপরাধ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২১, ১২:১৩ এএম

শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়া কিশোরদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা দেয়া, যৌক্তিকতা বিচার না করেই সব আবদার পূরণ করা এবং সন্তান কী করছে সে বিষয় পর্যবেক্ষণ না করায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন। প্রতিদিন গণমাধ্যমে কিশোর অপরাধের খবর আমরা পাচ্ছি। রাস্তাঘাটে ছিনতাই, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, বাধা দিলে রক্তারক্তি, খুুনাখুনি পর্যন্ত করছে। সামনে আমরা এক ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছি মনে হয়। প্রশাসনের তৎপরতারও কম নয়। তাও কোনোভাবেই যেন তাদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। গতকাল ভোরের কাগজে একটি খবরে বলা হয়, র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি চলছে অভিযানও। এর সঙ্গে পাড়া-মহল্লায় যেসব রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের প্রয়োজনে কোমলমতি কিশোরদের আশকারা দিয়ে অপরাধ করাচ্ছে, তাদেরও তালিকা হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত তালিকা তৈরি হোক। যে কোনোভাবে তাদের দমন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কিশোররা আগামীর ভবিষ্যৎ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রাজধানীতে প্রতি মাসে গড়ে ২০টি হত্যার ঘটনা ঘটছে। এর বেশিরভাগ ঘটনায় কিশোর অপরাধীরা জড়িত বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। আবার ২০১৮ সাল থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীতে হওয়া ৩৬৩টি ছিনতাইয়ের নেপথ্যেও ছিল কিশোর অপরাধীরা। ঢাকার শিশু আদালতের নথি অনুযায়ী গত ১৫ বছরে রাজধানীতে কিশোর-তরুণদের সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ৮৬টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। আর পুলিশের তথ্য মতে, গত ১৭ বছরে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের হাতে ১২০ জন খুন হয়েছে। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের। কারণ পরিবারই একটি শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। পরিবার যদি তার সন্তানদের ব্যবহার ও আচরণ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কী কী দরকার সে অনুযায়ী তাদের লালনপালন করে তাহলে সেগুলো একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটি পরিবারের প্রবীণদের উচিত অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, নৈতিকতা শেখানো এবং তাদের ক্রিয়াকলাপের ওপর নজর রাখা। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের জন্য উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App