কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের শরীরে আঘাতের চিহ্ন কোনো পায়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড। সোমবার (৬ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক গত ২০ মার্চ ঢামেকের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. হাফিজ সর্দার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি  প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে তারা নির্যাতনের চিহ্ন না পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন।

কার্টুনিস্ট কিশোরের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, এ বিষয়ে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। আদালত খুললে আমরা বিষয়টি ভালোভাবে দেখে ওপেন কোর্টে শুনানি করবো।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর নির্যাতনের ঘটনায় গত ১০ মার্চ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অজ্ঞাত সদস্যদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এরপর গত ১৪ মার্চ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ, কান, পা ও শরীরের যেখানে আঘাত পেয়েছেন বলে কিশোর জানিয়েছেন, সেগুলো পরীক্ষা করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালককে নির্দেশ দেন।

নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগে কিশোর বলেন, গত বছরের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাসার কলিংবেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। দরজা খুললেই অপরিচিত একজন আমাকে বলে, দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি খুলে প্যান্ট পরে আসেন। সঙ্গে একটি ভালো শার্ট পরেন। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা আমাকে পরিচয় দেয়নি। তাদের আলাপ-আলোচনায় একজনকে জসিম বলে ডাকতে শুনি। সবাই ঘরে ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন। তারা আমাকে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে পারেননি। বাসা থেকে আমার মোবাইল, সিপিইউ ও যত ধরনের ডিজিটাল ডিভাইস ছিল তা অবৈধভাবে নিয়ে যায়।

কিশোর আরও অভিযোগ করেন, আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামানো হয়, তখন বাসার সামনে ৬/৭টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। আমার বাসার সামনে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং একটি গাড়িতে আমাকে ওঠানো হয়। আমি তখন চিৎকার করতে থাকি। কিন্তু গাড়িতে তারা অনেক জোরে শব্দ করে গান বাজাচ্ছিল। হয়তো এজন্য আমার চিৎকার বাইরে শোনা যাচ্ছিল না।

তিনি বলেন, একপর্যায়ে আমার কানে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হয়। এরপর আমি বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাতের লাঠি দিয়ে আমার হাঁটুতে আঘাত করা হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি আমি। এভাবে ২ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা কার্টুনিস্ট কিশোর ১ মার্চ হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ মার্চ তাকে ছয় মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। গ্রেপ্তারের ১০ মাস পর ৪ মার্চ দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ থেকে মুক্তি পান তিনি।