×

জাতীয়

এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া ইসির ওপর নগ্ন হামলা: সুজন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২১, ০৯:২০ পিএম

এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া ইসির ওপর নগ্ন হামলা: সুজন

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের ওপর সরকারের নগ্ন হামলা বলে অভিহিত করেছেন নাগরিক সংলাপে বক্তারা।

রবিবার (৬ জুন) সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন-এর পক্ষ থেকে ‘সরকার কর্তৃক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার উদ্যোগ ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক এক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন, সুজন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য বিচারপতি জনাব এম এ মতিন। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক সোহরাব হাসান ও আবু সাঈদ খান, সুজন-এর কোষাধক্ষ্য আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাজনীতিবিদ রাজেকুজ্জামান রতন ও রুহিন হোসেন প্রিন্স, সুজন-এর জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন প্রমুখ।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন প্রকল্পটি প্রায় গত ১৩ বছর যথেষ্ট দক্ষতার সাথে আয়োজন সম্পন্ন করে আসছে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার সঙ্গে যুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে অর্পণ করা হলে নির্বাচন কমিশনের একটি বৃহৎ অংশ সরকারের উল্লিখিত মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত হবে, যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা খর্ব হবে, যা মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এতে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও ব্যবহারে জটিলতা সৃষ্টি হবে। বিদ্যমান আইনে অন্য কোনো সংস্থাকে ভোটার তালিকা সরবরাহ সংবিধান সম্মত হবে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পত্র কার্যকর করলে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হবে। কাজেই সরকারকে এ বিষয়ে আরও বিশদভাবে ভাবতে এবং অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিষয়টি অনেকগুলো শঙ্কার উদ্রেক করে। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সরকার প্রধান এরকম নির্দেশনা দিতে পারেন কি না। এটি কমিশনের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হামলা। আমাদের দেশে ভোটার ডাটাবেজ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয়েছে, অন্য দেশে বিষয়টা উল্টো। তাই এখানে এনআইডির সঙ্গে ভোটার তালিকার বিষয়টি সম্পৃক্ত। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভোটার ডাটাবেজ যদি সরকারের নিয়ন্ত্রণে যায় তাহলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের একটা সুযোগ থেকে যায়, দুর্নীতিরও সুযোগ তৈরি হয়।

আবু সাঈদ খান বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি কোনো কাজে সফলতা দেখায় সেটাও ধরে রাখা উচিত।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার তা কীভাবে ব্যবহৃত হয় তা তো দেখছি, এখন আরও ব্যাপক হবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশি হয়রানি ও আর্থিক বাণিজ্য বাড়বে।

সোহরাব হাসান বলেন, তিন বছর ধরে আমরা দেখছি সরকার কমিশনকে অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের বেশি কিছু মনে করে না। কমিশনকে আগে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

আসিফ নজরুল বলেন, কমিশনের বোঝা উচিত তারা নিজেদের কোথায় নামিয়েছে। কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই এটা ঠিক, কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়ে গেলে আরও শংকাজনক ও বিপদজনক হবে। কারণ, কমিশন তো নিজে সরাসরি গত নির্বাচনে এজেন্টদের, ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়নাই। এই কাজগুলো করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের অধীনে পুলিশ। তাদের হাতে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজ চলে গেলে আমাদের জন্য অনেক ভীতিকর।

শাহদীন মালিক বলেন, কী উদ্দেশ্যে এটা হস্তান্তর করা হচ্ছে। কমিশনের হাতে থাকলে কী অসুবিধা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের কাছে গেলে কী সুবিধা তাও জানানো হয়নি। এটি পরবর্তী নির্বাচনের নতুন তরিকার পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।

শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নিবন্ধন কমিশন নামে একটি নতুন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এই দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

এম এ মতিন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের ওপর কেউ আস্থা রাখতে পারছেন না। এখন যে ক্ষমতাটা সেটা সাংবিধানিক ক্ষমতা আর আইন করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিলে সেটা সাবঅর্ডিনেট হয়ে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App