×

জাতীয়

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, ১১ বছরে গচ্চা ৫৯৩ কোটি টাকা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২১, ১০:৩৮ এএম

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প, ১১ বছরে গচ্চা ৫৯৩ কোটি টাকা

মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প।

ঠিকাদারের অদক্ষতা ও পেট্রোবাংলার গাফিলতি।

২০০৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার পর থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫৯৩ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসি)। দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে দেশের একমাত্র কঠিন শিলা কোম্পানিটির পক্ষে দেশের মধ্যেই কঠিন শিলার ৬ হাজার কোটি টাকার বাজারে বড় ধরনের লাভবান হওয়ার সুযোগ ছিল। অথচ যথাযথ প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে বড় ক্ষতি আর গুরুতর অব্যবস্থাপনার নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বিগত দুই বছরে যথাক্রমে ৭ কোটি ও ২২ কোটি টাকার লাভ দেখাচ্ছে কোম্পানিটি। তবে ধারণকৃত বিপুল সম্ভাবনা আর ইতোমধ্যেই ঘটে যাওয়া সর্বনাশের বিপরীতে সেটি নিতান্তই সিন্ধুতে একটি বিন্দুমাত্র। এ পর্যন্ত ঘরোয়া বাজারে মাত্র ৬ শতাংশ দখল করতে পেরেছে তারা। অথচ প্রতি বছর ২০-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে কঠিন শিলার বাজার, যে চাহিদা মেটাতে পাথর আমদানি করতে হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। মধ্যপাড়ায় এ সর্বনাশের মূল কারণ পেট্রোবাংলার অব্যবস্থাপনা ও খনির কার্যকর ঠিকাদার জারমানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামের (জিটিসি) চূড়ান্ত অদক্ষতা।

২০১৩ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় বছরে খনি থেকে ৯২ লাখ টন গ্রানাইট পাথর উত্তোলনের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। অথচ ২০১৯ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে হওয়া পর্যন্ত মাত্র ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টন পাথর উত্তোলন করে তারা। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহে বিলম্বের কারণে চুক্তিমেয়াদের একটা বড় সময় অলস বসে থাকে জিটিসি। সময়মতো টাকাও দেয়া হয়নি তাদের।

জিটিসির সঙ্গে মূল চুক্তির মেয়াদ দুই বছর আগে শেষ হলেও নতুন কোনো বিকল্প ঠিকাদার না মেলায় চুক্তির মেয়াদ প্রলম্বিত করতে বাধ্য হয় পেট্রোবাংলা। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, খনির উৎপাদন ভালো হচ্ছে বিধায় আমরা বর্তমান ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছি। তবে কার্যক্রমের ওপর নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান ঠিকাদারের কাজে কোনো ত্রুটি ঘটলে আমরা নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেব। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আনিসুর রহমান অবশ্য মধ্যপাড়ার এ ব্যর্থতার জন্য খনির ডেভেলপার কোরিয়ার সাউথ-সাউথ করপোরেশনকেই (নাম-নাম) দায়ী করেন।

তিনি বলেন, ১৯৯৪ সালে নাম-নামের সঙ্গে চুক্তি হয়, ২০০১ সালে তারা খনিটি হস্তান্তর করবে, যদিও সেটি হস্তান্তর করতে ২০০৭ সাল পেরিয়ে যায়। এ সময়ে কয়েক দফায় তারা ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ২০ লাখ টন পাথরউত্তোলন করা হলেও ক্ষতি ছাড়িয়ে যায় ১৩২ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে জিটিসির চুক্তি অনুসারে ছয় বছরে তাদের ৯৩ লাখ টন পাথর উত্তোলনের কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে মাত্র ৪১ শতাংশ সাফল্য অর্জন করে তারা। অথচ এ সময়ে চুক্তিতে উল্লিখিত অর্থের অর্ধেক ৭১২ কোটি টাকা তুলে নেয় তারা। দীর্ঘ সময় ক্ষতির মধ্যে থাকলেও গত তিন বছরের লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছি আমরা, বলেন আনিসুর রহমান।

তবে জ্বালানি ও খনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম জানান, দক্ষ ঠিকাদার ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাবেই ক্ষতির মুখে পড়েছে খনিটি। উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারলেই সেটিকে আবার লাভজনক স্তরে তুলে আনা সম্ভব। এজন্য ঠিকাদার এবং ব্যবস্থাপনা, দুই জায়গাতেই পরিবর্তন আনতে হবে।

এদিকে, জিটিসির বর্ধিত মেয়াদও ফুরিয়ে যাচ্ছে চলতি বছর জুলাই মাসে। অথচ দুই বছর খোঁজাখুঁজির পর উপযুক্ত কোনো ঠিকাদার এখনো খুঁজে পায়নি পেট্রোবাংলা। আনিসুর বলেন, গত বছর টেন্ডার আহ্বান করেছি। দেশ-বিদেশে ভালো সাড়া পেয়েছি। মহামারির কারণে আপাতত প্রক্রিয়াটি স্থগিত রয়েছে। চলতি মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই নতুন ঠিকাদার মিলে যাবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

তবে কোম্পানির সূত্র বলছে, ঠিকাদার পাওয়া না গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে খনির উৎপাদন কার্যক্রম। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে গায়ে জং ধরানো ছাড়া কোনো কাজে আসবে না কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App