×

জাতীয়

ছিনতাইকৃত গাড়ি ঘুরতে আসা প্রবাসীদের কাছে বিক্রি করত তারা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২১, ০২:৫৯ পিএম

ছিনতাইকৃত গাড়ি ঘুরতে আসা প্রবাসীদের কাছে বিক্রি করত তারা

গ্রেপ্তারকৃত ছিনতাইকারীরা ও জব্দকৃত গাড়ি

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিজান চালিয়ে গাড়ি ছিনতাই চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে হয়েছে। তারা হলেন-মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, কামাল মিয়া, মো. আল আমিন ও মোবারক। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা গাড়ি ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য।

বিদেশ থেকে আত্মীয় আসবে, তাই তাকে আনতে বিমানবন্দরে যেতে হবে এমন কৌশল খাটিয়ে প্রাইভেটকার ভাড়া করতো। পরে তা নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে চালকের হাত পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি ছিনতাই করতো চক্রটি।

শনিবার (৫ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, একটি দস্যুতার মামলায় রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এ চক্রটির সন্ধান মিলেছে। তারা ধীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রাইভেটকার চুরি করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। অন্য মামলার তদন্তে তাদের চক্রের সদস্য হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য বেরিয়ে আসে।

হাফিজ আকতার বলেন, উত্তরা পূর্ব থানায় একটি দস্যুতা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে একটি চক্র আছে যারা কৌশলে প্রাইভেটকার বাগিয়ে নেয়। পরে অল্পদামে ওইসব গাড়ি বিদেশ থেকে দেশে কয়েক মাসের জন্য ঘুরতে আসা ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে হাবীব মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলার একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আরও ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, কামাল মিয়া, মো. আল আমিন ও মোবারক। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজতে থাকা ছিনতাইকৃত ১টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করে ডিবি।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গত ২১ এপ্রিল গ্রেপ্তারকৃত মো. হাবিব মিয়া তার বিদেশ ফেরত এক আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হাইএইস মাইক্রোবাস ভাড়া করে। পরদিন ২২ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশার গ্রেপ্তারকৃত হাবিবের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে ৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ওইদিন রাতে ১১টায় তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশে গ্রেপ্তারকৃতরা লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশারের হাত-পা বেঁধে ফেলে মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ তারা নিয়ে নেয়।

এরপর তারা মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন গাউছিয়া নরিকান্দী রোডে নিয়ে যায়। সেখানে চালক মো. আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে সোনারগাঁওয়ের দিকে চলে যায় তারা। পরে হাবিব গাড়িটি চালিয়ে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে গিয়ে সেখানে অবস্থানরত মিজানের কাছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। এরপর মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ার বিনিময়ে ওই গাড়িটি চালাতো।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার কে এম হাফিজ বলেন, এই চক্রটি এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ গাড়ি চুরি করেছে তার তদন্ত চলছে। তবে তারা জানিয়েছে, তাদের ছিনতাইকৃত প্রাইভেট কারগুলো তারা সিলেটে বেশি বিক্রি করেছে। কারণ, সিলেটে বিদেশ ফেরত বহু দেশি নাগরিক আসে কয়েক মাসের জন্য। ওই প্রবাসীরা কয়েক মাসের জন্য অল্পদামে গাড়ি কিনতে চায়। আর এ চক্রটিও ওই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছিল। তবে প্রবাসীরা গাড়ি কেনার সময় বুঝতে পারে না গাড়ি চুরিকৃত কিনা। যদিও পরবর্তীতে ফেঁসে যাচ্ছে তারাই। তাই গাড়ি কেনার আগে অবশ্যই বিআরটিএর অনুমোদন আছে কিনা এবং কার নামে অনুমোদন রয়েছে সেগুলো যাচাই বাছাই করার অনুরোধ করছি।

তিনি বলেন, এ চক্রটি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে গ্রামের বিভিন্ন সহজ সরল মানুষদের কাছ থেকে অব্যবহৃত সিম কিনে ব্যবহার করতো। তারা মনে করতো সেসব সিম ব্যবহার করলে তাদেরকে ধরা যাবে না। তাই নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম অন্যকে না দেওয়ার অনুরোধ করেন ডিবির এই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App