×

অর্থনীতি

ব্যবসায়ীরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন: অর্থমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২১, ০৬:২৮ পিএম

ব্যবসায়ীরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন: অর্থমন্ত্রী

২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটোত্তর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ব্যবসাবান্ধব বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার মতে, বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, ফলে সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন।

শুক্রবার (৪ জুন) দুপুরে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান প্রমুখ।

বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। বাজেটের পুরোটাই হলো ব্যবসায়ী বান্ধব। আমি মনে করি, যে বাজেট ব্যবসায়ী বান্ধব হলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন। আর ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেওয়ার মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। সেই উৎপাদনটি ঘটাবে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী। মানুষের কর্মসংস্থান না করা হলে কিভাবে তারা এগুলো করবেন? সেজন্য আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরাই এ কাজটি করবেন। সেজন্য ব্যবসায়ীদের আমরা সুযোগ দিয়েছি, আমরা কমিটেড।

কালো টাকার সুযোগ না রাখার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা নিয়ে আমি কখনো কথা বলিনি। আমাদের বাজেটে আমরা যেই প্রিভিউশনটি রেখেছিলাম তা হলো অপ্রদর্শিত আয়। কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ব্যাপক ডিফারেন্স। কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, আর অপ্রদর্শিত টাকা আমাদের সিস্টেমের কারণে সৃষ্টি হয়।

বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য রেখেছি, আইনটিকে আমরা সহজ করব। আমরা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যদি আমরা আইনটিকে সহজ করতে পারি, ট্যাক্স পেয়ারদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রেভিনিউ জেনারেশন অনেক বৃদ্ধি পাবে। রেভিনিউ জেনারেশন বাড়াতে পৃথিবীর অনেক দেশ চেষ্টা করেছিল। এমনকি আমেরিকায়ও কোনো একসময় ৭৫ শতাংশ ট্যাক্সের পরিমাণ ছিল, সেটা এখন নেই। বেশি করে ট্যাক্স আদায় করা যায় কি না সেটি সবাই চেষ্টা করেছিল।

সংবাদ সম্মেলনে রেকর্ড ঘাটতির বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ঘাটতি বাজেট নতুন নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশ, ঘাটতি বাজেট হবে। তবে সংশয় আছে ঘাটতির পরিমাণ নিয়ে। তবে আমি কনফিডেন্ট, অর্থমন্ত্রী এটিকে মোকাবিলা করতে পারবেন। আমরা একটি অনুমানের জগতে আছি। সেটাকে নিয়ে তর্ক করে কোনো লাভ হবে না। তিনি আরও বলেন, অর্থের জোগান দেওয়া অন্যতম একটি বিষয়। যারা বাইরে থেকে আমাদের ধার দেবে, তাদের বাজার বেশ ভালো। বিদেশ থেকে যারা ধার দেয় তাদের কথাবার্তা ও আচরণে সেটি আমরা দেখেছি। আমাদের রেকর্ডও ভালো। আমরা সে ধরনের গ্রাহক নই। কোনো সময় আমরা এগুলো মিস করিনি। আমরা সবকিছু পজিটিভলি করেছি বলেই পজিটিভলি গ্রোথ ধরে রাখতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় করোনার মধ্যেও আমাদের ২৩০০ ডলারের কাছাকাছি।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের সম্ভাবনাময় খাত কৃষি। এখন সময় এসেছে আমাদের আমদানি কমানোর। এখন আমরা উৎপাদন করতে চাই। আমরা উৎপাদনে দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিতে যাচ্ছি। এজন্য রপ্তানিতে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আর আমদানিতে ট্যারিফ বসানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, গত দুই-তিন বছর ধরেই পোল্ট্রিখাত অনেক লোকসানে আছে। আবার একটি গাভি থেকে দৈনিক ২০ থেকে ৩০ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে আমরা চাই উৎপাদন বাড়ুক এবং উদ্যোক্তারা আরও সুযোগ পান। এতে আমাদের উৎপাদন বাড়বে, আমদানি কমবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা। তবে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হলেও এর প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। গত এক বছরের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিশাল এই তারল্যের একটি বড় অংশ বিলবন্ডে বিনিয়োগ হলেও এখনও ৪০ হাজার কোটি টাকার তারল্য রয়েছে।

স্বাস্থ্যখাতের কেনাকাটায় অনিয়ম রোধ ও বাজেটের বরাদ্দ টাকা খরচের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর এ বিষয়ে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় নতুন বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি। এক বছরে আমরা যে পরিমাণ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে পারবো তার চেয়েও বেশি টাকা বাজেটে রাখা হয়েছে। ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয়, অন্যখাত থেকেও টাকা আনা যাবে। অর্থসচিব বলেন, স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের একটা অংশ অব্যবহৃত থাকে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের সঙ্গে যারা জড়িত- সেখানে একটা সমস্যা আছে। যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য জিনিসের ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। নতুন অর্থবছরে এ দুটো নিয়ে আমরা কাজ করবো। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।

আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্যখাতে যে কেনাকাটা হয় সেটা অনেকটা সাপ্লাইয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে হয়, আমরা সেটা ডিমান্ড সাইডে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন থেকে অ্যাসেসমেন্ট করা হবে, এই মূহূর্তে সারা দেশে যত সরকারি হাসপাতাল আছে সেখানে স্বাস্থ্য সেবার জন্য যেসব যন্ত্রপাতি দরকার, সেগুলোর কী অবস্থা এবং গ্যাপ কোথায় আছে; আমরা যদি সেটা বের করতে পারি তাহলে ডিমান্ড সাইড থেকে কেনাকাটার চাহিদা বের করতে পারবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App