×

সাময়িকী

পারমিতার জগৎ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২১, ০৩:৩৬ পিএম

পারমিতার জগৎ

আবার পড়লাম কবিতাটা; হস্তাক্ষর পারভিনের, কিন্তু মনে হলো কবিতাটা সবুজেরই লেখা। বুকের ভেতর খচখচ করে উঠলো; পারভিন কি লিখেছে এ কবিতা? অসম্ভব! তাহলে কি সবুজ লিখেছে এ কবিতা পারভিনকে নিয়ে? পারভিনের বাড়ি তো দুর্গাপুরে ফাড়ংপাড়ার পাহাড়ে! পারভিন কি তাহলে পাহাড় দুহিতা? মাধুকরী পড়ার আগ্রহ হারিয়ে গেল; আরও একবার পড়লাম কবিতাটা। তারপর বইটা কবিতাসমেত যথাস্থানে রেখে দিলাম। মাথার মধ্যে তখন শুধু ঘুরছে- “তুমি পাহাড়ের কন্যা হলে আমি মেঘ শ্রীকৃষ্ণ-বালক মেঘবতী হও যদি নদীতীরে বংশীধারী আমি গো-পালক।” আমার অনুপস্থিতি কালে সবুজ কি পাহাড় দুহিতা পারভিনের প্রেমে মজে গেল? আমার কবি কি আমায় ভুলে পারভিনকেই ভালোবাসলো? তাই কি সবুজের জন্য পারভিনের এতো উদ্বেগ? অন্য মন প্রতিবাদী হলো, এসব কী ভাবছি আমি! কেনো জানি না আমার বুক ভেঙে কান্না এলো।

বেশকিছু প্যাকেট আর শপিংব্যাগ হাতে পারভিন ফিরে এলো ঘরে। কিছুটা অবাকই হলাম আমি। ও-কি শপিং করে ফিরলো? ওর মুখে তৃপ্তির হাসি, ওর হাসি দেখে বুকের ভেতর ছোট্ট মোচড় খেলো একটা। বুকের কথা বুকে রেখে মুখে হাসি এনে বললাম, “কিরে এতোসব কী এনেছিস? মার্কেটে গিয়েছিলি না-কি?” পারভিন হাতের ব্যাগগুলো বিছানায় রেখে বললো, “জরুরি কিছু কেনাকাটা ছিলো, ফেরার পথে গাঙ্গিনার পাড় হয়ে এসব কিনে আনলাম।” আমার পাশে বসলো পারভিন। “তোর কাজ হলো? দেখা হয়েছে সবুজের সাথে?” আমার প্রশ্নে অবাক হলো পারভিন, “কী বলিস! ব্যর্থ হয়ে ফিরবো? দেখা হয়েছে কবির সাথে। কিছুক্ষণ কথাও হলো, তবে একান্তে কথা বলার সুযোগ হয়নি বেশি; সারাক্ষণই কেউ না কেউ সামনে ছিলো। তুই যে ওকে দেখতে গিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিস, সে কথা বলছি কবিকে। তোর জন্য একটা চিঠি দিয়েছে।” আমি ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠলাম, “চিঠিটা দিচ্ছিস না কেন?” পারভিন রহস্য করে বললো, “অস্থির হচ্ছিস কেনো? কিন্তু তোর হয়েছে কী? মনে তো হয় আরও কিছু সংকট ঘিরে আছে তোকে!” আমি ওকে বৈশাখ উদযাপনের জন্য ছাত্রদের সাথে আমার কথোপকথনের ঘটনাটি বললাম। পারভিন কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে বললো, “ওদের উৎসব ওরা করবে! আমাদের কেনো চাঁদা দিতে হবে! আমরা দেবো না এক পয়সাও!” ফ্রেশ হতে চলে গেল পারভিন। আমার মনে সামান্য দুশ্চিন্তা জমা হলো, সবুজ কী লিখেছে আমায়? চিঠিটা না দিয়েই কেনো পারভিন বাথরুমে চলে গেল? তাহলে কি অস্বস্তির কিছু লিখেছে সবুজ? পারভিন কি আমায় কষ্ট পাবার জন্য প্রস্তুত করছে? বাথরুম থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেই বললো, “সরি দোস্ত! চিঠিটা তোকে না দিয়েই চলে গেলাম! এই নে তোর চিঠি।” চিঠিটা মেলে ধরলাম চোখের সামনে- “পারমিতা তুমি সুদূরের দ্বীপে জোনাকের আলো, আমি সন্ত্রস্ত পতঙ্গ; তুমি বিস্যুভিয়াসের জ্বালাময় লাভাস্রোত, আমি রাতের নদীতে জন্মান্ধ ধীবর! কী করে তোমার সীমায় যাবো সে কলা আমার জানা নেই।” এর পরের অংশ কবিতার মতো করে লেখা।

যা-কিছু বলিনি কোনোদিন মনে করো কথা ছিলো না তা কোনো কালে; বলেছি যতটা তার সব কি আমার ছিলো? যে-কথা বলেনি জাতক জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ তাই-কি বলেছেন গল্পের ‘কঙ্কালে’? ‘অমিত’ বলেনি যা-কিছু শেষের কবিতায় লাবণ্যের কানে ভ্রমরেরা আজো সে কথা শোনায় মেঘদূত যা বলেনি ভিন্নদেশে পাহাড়ের কানে মৃত্তিকাকে তাই বলে অনুপম বিরান উদ্যানে; স্পার্টাকাস-সাহসী লোরকার কথা আজো সংগোপনে সাহসীরা জীবনানন্দের গান আজো গায় পাখি মনে মনে আমরা তো নতুন-পুরোনো কথার মালা সাজাই কাব্যবুননে; রফিক-শফিক-বরকত-জব্বার আজো কথা বলে শহিদ মিনারে আজো অভিমান খোঁজে খঞ্জনারা নদীর কিনারে। আগামীর মানুষেরা যেনো কিছু কথা খুঁজে পায় মানুষেরা যেনো নতুন শব্দের অভিধানে অভিমান ভাঙে তাই আসে নতুন জলের ধারা আমাদের ফেলে যাওয়া গাঙে। কথা শেষে যতবার যতিচিহ্ন দিয়ে করো ভাবের প্রকাশ পৃথিবীর পরম্পরা মনে রেখো সেখানেই সর্বনাশ! চিঠিটা পড়া শেষ হলে আমি কিছুক্ষণ নির্বাক-অপলক বসে থাকলাম। পারভিন নিজের বিছানা থেকে উঠে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে প্রশ্ন করলো, “কিরে কী হয়েছে? কী লিখেছে কবি?” আমি কোনো উত্তর না দিয়ে কাগজটা ওর হাতে দিয়ে দিলাম। ও আবার নিঃশব্দে নিজের বিছানায় ফিরে গিয়ে চিঠিতে মনোযোগ দিলো। পারভিন চিঠি পড়ছে, আমি ওর চেহারায় ভাবান্তর আবিষ্কারের চেষ্টা করছি। ও এবার চিঠি থেকে চোখ তুলে তাকালো আমার দিকে। ভাবলাম, ওর পড়া শেষ হয়েছে, এবার ও কিছু বলবে; কিন্তু ও কিছুই বললো না, পুনর্বার চিঠিতে মনোযোগী হলো। দু’জন চুপচাপ। চিঠি পড়া শেষ করে কাগজটা আমায় ফিরিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে নিজের বিছানায় ফিরে চাদর জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আমি চুপচাপ বসে থাকলাম। কতক্ষণ দু’জন নিশ্চুপ ছিলাম জানি না। টের পাইনি আমার দু’চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে আমার, কিন্তু টেবিলে হাত রেখে নিজের মুখটা হাতের উপর আড়াল করে নিঃশব্দে কাঁদলাম। কখন পারভিন শয্যা ছেড়ে উঠে এসে আমার মাথায় হাত রাখলো টেরও পেলাম না। পারভিনের স্পর্শে যখন মুখ তুলে তাকালাম, পারভিন আমার মাথাটা নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো। আস্তে আস্তে বললো, “কী বুঝলি কবির চিঠি পড়ে?” আমি ওর চোখে তাকিয়ে বললাম, “কিছুই বুঝিনি। তুই কিছু বুঝলি?” উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার প্রশ্ন করলাম, “কী কথা হলো? তুই তো আমায় কিছুই বললি না ফিরে এসে?” পারভিন আমার কথায় সামান্য অপ্রস্তুত হলো যেনো, বললো, “আসলে বলার মতো কিছু ঘটেইনি, কী বলবো! আমি তোর ডিরেকশন অনুযায়ী কবির বাসার দরোজার সামনে গিয়ে নামলাম রিক্সা থেকে, দরোজায় কড়া নাড়লাম, কবির ছোট বোন আমায় নিয়ে গেলো কবির কাছে। অবশ্য আমি যখন ওদের বাসার দরোজায় অপেক্ষা করছিলাম, তখন আমার মনে হয়েছিলো, তোর মেজ’পার শ্বশুড়বাড়ির জানালা থেকে কেউ আমায় ফলো করছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক ছিলাম ওদের বাসায়, প্রায় সারাক্ষণই ঘরে কেউ না কেউ ছিলো; সঙ্গতকারণেই আমাকে তার চিকিৎসা আর শুশ্রƒষার কথা বলতে হয়েছে; অবশ্য কবিতার কথাও কিছু বলেছি। বড় ভালো ওদের পরিবার। কবির বোনটা তো খুবই লক্ষ্মী, কবির সাথে খুব ভাব ওর। যতটা সময় আমি কবিকে একা পেয়েছি, ততক্ষণই আমি তোর কথা বলেছি। কবিকে বলেছি, এসে যেনো তোকে একবার দেখে যায়।” আমি অস্থির হয়ে উঠেছিলাম, পারভিনের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে প্রশ্ন করলাম, “কবে আসবে বললো কিছু?” পারভিন যেনো আমায় আস্বস্ত করতে বললো, “বললো তো জলদিই আসবে। কিন্তু সময় তো একটু লাগবেই। এখনো তো বাসা থেকে বাইরে যায়নি। কবির বোন কিন্তু তোর প্রশংসা করলো।” আমি হাসলাম, “কী বললো ও? আসলেই ও খুব লক্ষ্মী মেয়ে, খুবই মিষ্টি মেয়ে একটা, আমায় পছন্দ করে খুব, আমিও ওকে লাইক করি খুব। বাচ্চা মেয়ে, কিন্তু খুবই বুদ্ধিমতি।” এবার পারভিন আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললো, “দেখতে হবে না বোনটি কার? অমন পণ্ডিত ভাইয়ের বোন যদি বুদ্ধিমতি না হয়, তাহলে কি মানায়! মাটি-মানুষ আর বিশ্ব-প্রেক্ষাপট সম্পর্কে কবির প্রজ্ঞায় আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেছি।” গল্প করতে করতে কখন যে রাতের খাওয়ার সময় পার হয়ে গেল, টেরই পাইনি দু’জন। খালা এসে যখন তাগাদা দিয়ে বললেন, “ও পারমিতা খালা, তোমরা কি আইজ খাইতা না! রাইত কয়টা বাজে খবর আছে? আইজ কী খাইতা না-নি? না খাইলে কইয়ালাও! ডাইনিং তো হগলে বন্দ কইরালবো!” দু’জন কথা বন্ধ করে খেতে গেলাম। রাতের খাবার খেয়ে ফিরলাম ঘরে। আবার নতুন করে সবুজের পরিবার নিয়ে আমাদের কথারা ডালপালা ছড়ালো। পর দিন যেহেতু ক্লাসের তাড়া নেই, আমরা দু’জন রিলাক্স মুডে কথা বলে যাচ্ছি, আড্ডার মগ্নতায় এতোটাই ডুবে গেলাম, দু’জনের কারুরই মনে রইলো না, ঘুমাতে হবে। অনুচ্চকণ্ঠে আমাদের আড্ডা এগিয়ে চললো। হোস্টেলের বাইরে তখন নিস্তবদ্ধতা। আমাদের আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ শিয়ালের চিৎকার একটুক্ষণের জন্যে চমকে দিচ্ছে; ক্রমশ শিয়ালের চিৎকার এতোটাই ঘন হয়ে এলো, শিয়ালের চিৎকারও যেনো নৈঃশব্দ্যের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেল। হঠাৎ সমস্ত নৈঃশব্দ্যের স্তব্ধতা ভেঙে প্রচণ্ড শব্দে বোমার আওয়াজ! কেঁপে উঠলো হাসপাতালের নিস্তব্ধতা। ক্রমাগত চললো কখনো গুলির শব্দ, কখনো বা বোমার শব্দ, সাথে মানুষের আর্তচিৎকার! আমরাও অস্থির হয়ে উঠলাম।

॥১০॥ একদিন পর কলেজে গিয়েই বুঝলাম পরিবেশ বেশ উত্তপ্ত। সেদিন রাতের আতশবাজি আর হট্টগোল নিয়ে তদন্ত চলছে। যে শঙ্কা আমি করেছিলাম, তাই হলো। রাতে হঠাৎ হাসপাতাল এলাকায় অমন বিকট শব্দে বাজি ফোটানো কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমি এমনিতেই বিষাদগ্রস্ত ছিলাম, আগের দিন পহেলা বৈশাখ সারাদিন ঘরে শুয়ে কাটিয়েছি। পারভিন আমায় জোরাজুরি করেছিলো পান্তা-ইলিশ-পাটশাক খাবার জন্য ক্যান্টিনে যেতে, আমি যাইনি। পারভিনের সঙ্গ আমায় কষ্ট দিচ্ছিলো খুব, বারবার মনে হচ্ছিলো, ও বন্ধু হয়ে প্রবঞ্চনা করছে আমার সাথে। দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছিলো আমার, আমার অনুপস্থিতিতে ও আমার সবুজকে কেড়ে নিয়েছে আমার কাছ থেকে, ওদিকে মেজ’পার বাসায় আমাকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে; অন্যদিকে সবুজের সাথে আমি দেখা করবার সুযোগ পাচ্ছিলাম না; সব মিলিয়ে অস্থির সময় কাটছে! বুঝতে পারছিলাম না, কী করবো। নববর্ষের দিন এই প্রথম একাকী বিষাদে কাটালাম ঘরে। বিকেলে অবশ্য পারভিন আমায় সাহস দিয়ে বলেছিলো, “তুই এতো ভেঙে পড়ছিস কেনো! দু’টো দিন ধৈর্য ধর, সব ঠিক হয়ে যাবে। কবি তো এখন চাইলেই ছুটে আসতে পারছে না। নিশ্চয়ই সে তোর কাছে আসবে। তাছাড়া আমি তো আছিই, আমি কবির সাথে তোর সাক্ষাতের ব্যবস্থা করবো। মনটা শক্ত কর, চল যাই বাইরে একটু হেঁটে আসি।” আমি পারভিনের কথার উত্তর দিলাম একটু বাঁকা করে, “দেখ পারভিন, আমি সমতলের মেয়ে, নদীতীরে বাড়ি, জোয়ার-ভাটা বুঝি, পলিমাটি বুঝি। তুই পাহাড়ের মেয়ে, তোর মধ্যে পাহাড়ের দৃঢ়তা আছে; তোর মতো দৃঢ়তা আমি কোথায় পাবো? আমি তো জোয়ারে ডুবে যাই, ভাটায় জেগে উঠি; বন্যায় তলিয়ে যাই আবার জল সরে গেলে পলি নিয়ে ভেসে উঠি। আমি কি চাইলেই তোর মতো হতে পারি?” আমার বাঁকা কথায় পারভিন একটুক্ষণ চুপ করে থাকলো। জানি না ও আমার কথার গূঢ় অর্থ বুঝতে পারলো কি-না। মৃদু হেসে বললো, “বাপরে বাপ! রীতিমতো দার্শনিকের মতো কথা বলছিস! তাহলে তুই যাবি না আমার সাথে?” আমি স্বাভাবিক গলায় বললাম, “না-রে পারভিন তুই যা, আমার ভালো লাগছে না। আমি একটু শুয়ে থাকবো।” অগত্যা পারভিন একাই বেরিয়ে গেলো।

ক্লাস নেই চল্লিশ মিনিট তবু আমি ক্লাসেই বসে ছিলাম একা একা। রেজা এসে সামনে দাঁড়ালো। রেজা আমার সহপাঠী, জামালপুরের ছেলে, মেডিকেল কলেজের প্রথমদিকে দু’চার দিন আমার কাছে ঘেঁষতে চাইলেও ইদানিং আমার থেকে নিরাপদ দূরত্বেই থাকে সবসময়। আমিও ওকে এড়িয়ে চলি। কোন ধরনের ভূমিকা ছাড়াই কথা বললো রেজা; “দেখো পারমিতা, তোমাকে একটা ব্যাপারে সতর্ক করতে এলাম। তুমি কি জানো, পরশু রাতের ঘটনা নিয়ে জোর তদন্ত চলছে। কর্তৃপক্ষ এখনো জানে না, রাতের বোমাবাজির সাথে কারা যুক্ত ছিলো। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তোমাকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে।” রেজা একটু থামলো, সে সুযোগে আমি কথাটা শেষ করতে চাইলাম, “আমি কী জানি? আমি তো পরশু থেকে ঘর থেকেই বেরুইনি।” রেজা আবার বলতে শুরু করলো, “তা ঠিক আছে, কিন্তু পরশু সকালে ওরা তোমার কাছে গিয়েছিলো নববর্ষ পালনের প্রস্তাব নিয়ে।” আমি সামান্য প্রতিবাদ করে বললাম, “ওরা মানে! তুমিও তো গিয়েছিলে সাথে।” রেজা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য বললো, “আরে না-না আমি তো ওদের সাথে ছিলাম না। তোমার কাছে যাবার সময় আমায় সঙ্গে নিয়ে গেলো, হয়তো ভাবলো তুমিও জামালপুরের মেয়ে, আমার বাড়িও জামালপুর, তাই সঙ্গে নিয়ে গেলো। নইলে আমি তো সবসময় তোমার কাছ থেকে দূরে দূরেই থাকি; কিন্তু তোমার গতিবিধির উপর আমার নজর রাখতেই হয়।” আমি রেজার কথায় একটু ধাক্কা খেলাম, “আমার গতিবিধির উপর নজর রাখতে হয় মানে? তুমি কি গোয়েন্দা না-কি?” রেজা এবার রহস্যের হাসি হাসলো, “তাও বলতে পারো। আমাদের নেতার নির্দেশ, যেনো তোমার দিকে নজর রাখি।” আমি বিস্ময়ে তাকালাম রেজার চোখে, “নেতার নির্দেশ মানে! কে তোমাদের নেতা?” রেজা এবার বীরের ভঙিমায় বললো, কেনো, সুমন ভাইকে তুমি চেনো না?” মুহূর্তে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। কিছু একটা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলাম। রেজা ওরা কথা বলতে শুরু করলো, “যাক ওসব প্রসঙ্গ। এখন তোমাকে যা বলতে এসেছি, সেটা শোনো মনোযোগ দিয়ে। কর্তৃপক্ষ তোমায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে; তুমি সোজা বলে দিও, রাতে তুমি ঘর থেকে বেরোওনি। তুমি কিছু জানো না। আমরা যে তোমার কাছে গিয়েছিলাম, আগ বাড়িয়ে আবার সেসব বলতে যেও না।”

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App