×

সাময়িকী

কবি সমালোচক শশাঙ্কমোহন সেন

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২১, ০৩:১৫ পিএম

কবি সমালোচক শশাঙ্কমোহন সেন

বাংলা সমালোচনা-সাহিত্য যাঁদের হাতে বিকশিত ও পুষ্ট হয়েছে কবি-সমালোচক শশাঙ্কমোহন সেন তাঁদের অন্যতম পুরোধাপুরুষ। বস্তুত তিনিই বাংলার তুলনামূলক সমালোচনা-সাহিত্যের জনক। অধ্যাপক আহমেদ শরীফ ‘বিশ শতকে বাঙালি’ গ্রন্থে লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথকে মাথায় রেখেও বলা চলে বাংলা ভাষায় প্রতীচ্য আদলের ও মানের সাহিত্য সমালোচনা প্রথম শুরু করেন কবিভাস্কর শশাঙ্কমোহন সেন (১৮৭২-১৯২৮), দ্বিতীয় ব্যক্তি মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২); তারপর আমরা শ্রী কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সুবোধ সেনগুপ্ত, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুুখ অনেকতায় বহু সমালোচক প্রাবন্ধিক পেয়েছি। সাহিত্যের মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণমূলক ইতিহাসকার রূপে পেয়েছি দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৬), সুকুমার সেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ এনামুল হক, প্রমথনাথ বিশী প্রমুখ। এঁদের অনেকেই সম্পূর্ণ কিংবা বিশেষ শাখায় মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণমূলক ইতিহাস রচনা করেছেন।” বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিত বিনয় সরকার যাঁকে অনেকে বাংলার বিশ্বকোষ হিসেবে অভিহিত করেছেন, তিনিও শশাঙ্কমোহন সেনকে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যের পথিকৃৎ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরও অভিমত, “মোহিতলাল মজুমদার শশাঙ্কমোহনের পরবর্তী ধাপ।” (বিনয় সরকারের বৈঠকে, পৃ. ৭৪৫) শশাঙ্কমোহনের ‘বঙ্গবাণী’-ই বাংলা তুলনামূলক সমালোচনা-সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে এই গ্রন্থ প্রকাশিত হলে তৎকালীন প্রসিদ্ধ সাময়িকী ‘প্রতিভা’তে ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী এভাবে শশাঙ্কমোহন সেনের মূল্যায়ন করেছিলেন, “যাহার আবির্ভাবে ইউরোপ ও আমেরিকায় কাব্য, নাটক, উপন্যাস প্রভৃতির ন্যায়, সমালোচনাও সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীর স্থান অধিকার করিয়াছে; যেরূপ সমালোচনা সম্পর্কে সাহিত্যের মধ্য দিয়া জাতীয় জীবনের বিশেষত্বের বোধ জন্মে, বিশ্বসাহিত্যের সহিত পরিচয় সংস্থাপিত হয় এবং সংস্কারগত সংকীর্ণতা ঘুচিয়া গিয়া মানবমনের পরিধি বিস্তৃত ও সাহিত্যরুচি উদার হইয়া ওঠে ও সমালোচনা মৌলিক সাহিত্যসৃষ্টির গৌরব লাভ করে- বাস্তবিকপক্ষে এ পর্যন্ত বঙ্গসাহিত্যে তাহার অত্যন্ত অভাবই ছিল বলিতে হইবে- শশাঙ্কমোহন সেই অভাব পূরণ করিলেন।..... বিশ্বসাহিত্যের সমালোচনার ইতিহাসে শশাঙ্কমোহন, সাঁবু (Saint Beuve), তাঁ (Taine), ব্রুনেতিয়ের (Brunetiere), ম্যাথু আর্নল্ড বা হার্ডার, হেগেল যুগের জার্মান সমালোচকগণের, কোনো একজনের শিষ্য, না উহাদের সকলের মতের ভালোমন্দের সমষ্টির ফল, বা উহাদের সকলের সারভাগ মন্থনপূর্বক অভিনব আদর্শের স্রষ্টা, এক্ষণে তাহার বিচারের অবকাশ নাই। কিন্তু এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যাইতে পারে যে, তাঁহার সমালোচনা সাহিত্যের মৌলিক সৃষ্টি।” (প্রতিভা, আশ্বিন-কার্ত্তিক, ১৩২২) ‘বঙ্গবাণী’তে শশাঙ্কমোহন যে সমালোচনা-আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন তা ছিল অনন্য ও বহুমাত্রিক। সাহিত্যসৃষ্টিকে তিনি বিশ্লেষণ করেছেন কালের একটা পটভূমিতে স্থাপন করে। সাহিত্য যে কোনো স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার নয়, এর একটা স্থান-কালের ব্যাপার আছে, সামাজিক পটভূমি আছে তা শশাঙ্কমোহনের সমালোচনাতেই প্রথম পরিস্ফুট হয়। তিনি মার্ক্সীয় পদ্ধতির শ্রেণীসংগ্রামের ব্যাখ্যার আশ্রয় না নিলেও কবি-সাহিত্যিককে এবং তাঁদের কাব্য ও সাহিত্যকর্মকে কালের আলোকে বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁর ‘বাণীপন্থা’ যা ধারাবাহিকভাবে ‘নব্য ভারত’, ‘প্রতিভা’ ও ‘গৃহস্থ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, তাকেই বাংলা ভাষায় সাহিত্য-সমালোচনার ক্ষেত্রে প্রথম সার্থক ঐতিহাসিক-সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এক্ষেত্রে তিনি নীরেন্দ্রনাথ রায়, গোপাল হালদার ও বিনয় ঘোষের পূর্বসূরি। ‘বঙ্গবাণী’তে অন্তর্ভুক্ত ‘বঙ্গসাহিত্যের জাগরণ’ ও ‘বঙ্গসাহিত্যের বিকাশ’ প্রবন্ধ দু’টিতে তিনি বাংলার প্রাচীন সাহিত্যকে- মঙ্গলকাব্য ও বৈষ্ণব পদাবলীকে সমাজ মানসের স্ফুরণ হিসেবেই দেখেছেন (তখনও বৌদ্ধ চর্যাপদ ও দোহা আবিষ্কৃত হয়নি)। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, “মনসামঙ্গল ও চণ্ডীমঙ্গল বাঙ্গালীর নিজস্ব বলিয়াছি। উহারা সর্ব্বতোভাবে বঙ্গদেশজাত এবং উহাদের সংস্কৃত সম্পর্কও সামান্য। প্রাচীন বঙ্গদেশের সমাজ ও পরিবারের রীতিনীতি এই সকল কাব্যে নানাদিকে সুস্পষ্ট ও উজ্জ্বল মূর্ত্তি ধারণ করিয়াছে। আবার এই সকল কাব্য নাগরিক জীবনের এবং রাজসভারও সৃষ্টি নহে। গ্রামদেশে প্রাত্যহিক জীবনের ছায়ায় বসিয়া মানবজীবনের সুখদুঃখ রসে গভীরগাহী, সবল সুস্থদেহ বাঙ্গালী কবি আপনার হৃদয়মধ্য হইতে এই স্বভাবসঙ্গীত উৎসারিত করিয়াছেন।

দুই. শশাঙ্কমোহন কেবলমাত্র প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অভিনব ব্যাখ্যাকারই ছিলেন না, মধুসূদন-সমালোচনারও তিনি পথিকৃৎ। তিনিই প্রথম সমালোচক যিনি মধুসূদনকে তাঁর অন্তর্জীবনের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। কিশোর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ‘ভারতী’ পত্রিকায় মধুসূদনের যে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, তার যোগ্য প্রত্যুত্তর তৎকালীন কোনো সমালোচকই দিতে সক্ষম হননি। বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক তারাপদ ভট্টাচার্যের মতে, এর ফলে প্রায় দীর্ঘ ৪৪ বৎসর মধুসুদন অনেকটা অবজ্ঞাত বা অবহেলিত থেকে যান। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে শশাঙ্কমোহন ‘গোপাল দাশ চৌধুরী অধ্যাপক’ হিসেবে মধুসূদন সম্পর্কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যে বক্তৃতা দিন তা-ই ‘মধুসূদন : তাঁর অন্তর্জীবন ও প্রতিভা’- এই নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থেই শশাঙ্কমোহন মধুসূদনকে বাংলা সাহিত্যের অনন্যসাধারণ স্রষ্টা এবং তিনিই যে বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত মহাকবি তা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে ষোল বছর বয়সে ১২৮৪ সালে, আবার ১২৮৯ সালে মধুসূদন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ‘ভারতী’তে যে আলোচনা করেছিলেন তার মূল বক্তব্য ছিল- একটি মহাকাব্য এক বা একাধিক মহাবীরকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হয়। তেমন মহৎ চরিত্র ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ কোথায়? তিনি লিখেছেন, “হীনক্ষুদ্র তস্করের ন্যায় অথবা পুত্রশোকে অধীর হইয়া লক্ষণের প্রতি শক্তিশেল নিক্ষেপ করাই কি একটি মহাকাব্যের বর্ণনীয় হইতে পারে যাহাতে তিনি উচ্ছ্বসিত হৃদয়ে একটি মহাকাব্য লিখিতে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইতে পারেন?...দেখিতেছি ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’ ঘটনার মহত্ত্ব নাই, একটা মহৎ অনুষ্ঠানের বর্ণনা নাই। ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র পাত্রগণের চরিত্রে অনন্যসাধারণতা নাই, অমরতা নাই। মেঘনাদবধের রাবণে অমরতা নাই, রামে অমরতা নাই, লক্ষণে অমরতা নাই, এমনকি, ইন্দ্রজিতেও অমরতা নাই।... এখনকার যুগের মনুষ্য চরিত্রের উচ্চ আদর্শ তাঁহার কল্পনায় উদিত হইলে তিনি আরেক ছাঁদে লিখিতেন।” এখনকার যুগের মনুষ্যচরিত্রের উচ্চ আদর্শের যে-কথা কিশোর বা নবযুবক রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন সেই আদর্শেই তিনি সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর ‘ভাষা ও ছন্দ’ কবিতার রাম চরিত্র, “সম্পদে কে থাকে ভয়ে, বিপদে কে একান্ত নির্ভীক; কে পেয়েছে সবচেয়ে, কে দিয়েছে তাহার অধিক?” কে সে- “অযোধ্যার রঘুপতি রাম।” এই রামচরিত্র মুখ্যত রাল্মীকির রামায়ণ থেকে আহৃত। মধুসূদনের রাম বা রাবণ বাল্মীকির নয়, তা মধুসূদনের নিজেরই সৃষ্টি।

রবীন্দ্রনাথের কবিহৃদয়ে অবশ্য অচিরেই তাঁর ‘মেঘনাদবধ’ ব্যাখ্যা ত্রুটি ধরা পড়েছিল। ১৯১২ সালে ‘জীবনস্মৃতি’তে তিনি লিখেছিলেন, “অল্পবয়সে স্পর্ধার বেগে মেঘনাদবদের একটি তীব্র সমালোচনা লিখেছিলাম। কাঁচা আমের রসটা অম্লরস, কাঁচা সমালোচনাও গালিগালাজ। অন্য ক্ষমতা যখন কম থাকে তখন খোঁচা দিবার ক্ষমতা খুব তীক্ষè হইয়া উঠে। আমিও এই অমর কাব্যের উপর নখরাঘাত করিয়া নিজেকে অমর করিয়া তুলিবার সর্বাপেক্ষা সুলভ উপায় অšে¦ষণ করিতেছিলাম। এই দাম্ভিক সমালোচনাটা দিয়া আমি ভারতীতে লেখা আরম্ভ করিলাম।” পরবর্তীকালে ‘সাহিত্যসৃষ্টি’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রায় বিংশতি বাক্যে ‘মেঘনাদবধ কাব্যে’র যে অসাধারণ ব্যাখ্যা প্রদান করেছিলেন তা তাঁর কৈশোরের কাঁচা সমালোচনার স্খলনই শুধু ছিল না, তাতে মেঘনাদবধ কাব্যের অমর ঐশ্বর্যও ফুটে উঠেছিল। কিন্তু তাঁর এই ব্যাখ্যা তখনকার গীতিকবিতা-প্রভাবিত পাঠকসমাজে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথের কাঁচা বয়সের মেঘনাদবদ সমালোচনাই দীর্ঘকাহিনী-কাব্যবিমুখ সাহিত্যরস-পিপাসুদের মধুসূদনের অমর প্রতিভার সঙ্গে আত্মিক পরিচয় সাধনের ক্ষেত্রে দুর্লঙ্ঘ্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শশাঙ্কমোহনের মহৎকীর্তি এই বাধার অপসারণ। তিনিই দেখালেন মধুসূদন অমর কবি, আধুনিক বাংলা কাব্যের কাব্যের ভগীরথ।

তিন. শশাঙ্কমোহন কেবলমাত্র মধুসূদন বা বঙ্কিমকেই নন, রবীন্দ্রনাথকেও বিশ্বসাহিত্যের পটভূমিতে স্থাপন করে তাঁর সমগ্র সাহিত্যকৃতিকে তুলনামূলক-সমালোচনার মানদণ্ডে বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির চেষ্টা করেন। ১৯০৫ সালে যখন রবীন্দ্রনাথের অনেক মুখ্য লেখাই প্রকাশিত হয়নি, সেসময়েই শশাঙ্কমোহন উপলব্ধি করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ বিশ্বসাহিত্যের মহত্তম স্রষ্টাদের অন্যতম। তিনিই বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের সমভূমে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রবীন্দ্র-সাহিত্য সমালোচনার ধারা গ্রন্থের গবেষক-লেখক আদিত্য ওহদেদার লিখেছেন, “রবীন্দ্রকাব্যকে সমগ্র দৃষ্টিতে বিচার করার প্রথম প্রয়াস যদি করেন মোহিতচন্দ্র, গোটা রবীন্দ্রসাহিত্যকে এরকম একটা বিচার প্রথম করেন শশাঙ্কমোহন সেন (১৯৭৩-১৯২৮)। ইনি ‘সাহিত্যে’ এই সময় (১৩১২) ‘বঙ্গ সাহিত্যের বর্তমান অবস্থা’ নামে যে প্রবন্ধ লেখেন তাতে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-কৃতির একটা মূল্যায়ন করেন। তিনি জানালে, রবীন্দ্রনাথ আপনার প্রতিভাবলে বঙ্গসাহিত্যকে পৃথিবীর অন্যান্য সাহিত্যের সমক্ষ করে তুলেছেন। তাঁর ভাষায় : ‘কবি রবীন্দ্রনাথ মৌলিক প্রতিভার অধিকারী। এখনও তাঁহার সমালোচনার সময় আসে নাই। সেসময় বহু দূরবর্তী থাকুক, বঙ্গসাহিত্য রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার প্রভায় কৃতার্থ, সমৃদ্ধ ও গৌরবান্বিত হউক।

‘বঙ্গসাহিত্যের বিকাশ’ প্রবন্ধ থেকে অতি-দীর্র্ঘ এই উদ্ধৃতি দিয়ে আদিত্য ওহদেদার শশাঙ্কমোহন কীভাবে রবীন্দ্র-প্রতিভাকে বিশ্লেষণ করেছেন, রবীন্দ্রনাতের অসাধারণ ব্যাপ্তি ও গভীরতা শশাঙ্কমোহনের দৃষ্টিতে কীভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করেছেন। এই দীর্ঘ উদ্ধৃতি এখানে উৎকলন করা সম্ভব নয়। আমরা তাই ‘স্বাধীনতা’ বলতে শশাঙ্কমোহন কী বুঝিয়েছেন তা বোঝার জন্য এই অংশটুকু উদ্ধৃত করছি : “রবীন্দ্রনাথ প্রথমেই ছন্দের বন্ধন কিংবা ভাষার সৌকুমার্যের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখাইয়া কবিতা লিখিতে আরম্ভ করেন; তাঁহার উদ্দেশ্য ছিল ভাবপ্রকাশ। যে রূপেই হউক, ভাবপ্রকাশ করিতে পারিলেই কবিতা হইল, ইহাই তাঁহার আদিম আদর্শ ছিল। ওই আদর্শের বশীভূত হইয়া তিনি প্রকৃত কবিতাও লিখিয়াছিলেন, অনেক তুচ্ছ জিনিসও লিখিয়াছিলেন। কারণ, তখন তিনি ভাবকে স্বাধীন প্রণালীতে আপনার আয়ত্তাধীন করিতেছিলেন। যখন কবি কোনোও সুন্দর ভাবকে বশীভূত করেন, তখন সেই ভাব যে ছন্দে বা যে ভাষায় প্রকাশিত হয়, তাহা কবিতা। কিন্তু ভাবকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত না করিয়া, অথবা ভাবের আভাষমাত্র ধরিয়া, উৎকৃষ্ট ভাষায় অনবদ্য ছন্দোবন্ধে গ্রথিত রাশিরাশি পুঁথিও কবিতা নহে। উহা কেবল দুর্ব্বলতার, দরিদ্রতার এবং ভাবোন্মাদের পরিচায়ক। রবি কবির কিশোর বয়সের প্রায় সমস্ত কবিতাই শেষোক্ত শ্রেণীর। তিনি পরিণত বয়সে উক্ত দোষ পরিহার করিয়াছেন। রবীন্দ্রনাথ যখন ক্রমে ভাবের উপর প্রাধান্য ও প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত করিলেন, তখন ভাষা ও ছন্দ তাঁহার হস্তে আপনি আসিয়া ধরা দিয়াছে, তাঁহার চির জীবনের সাহিত্য-সাধনা সফল করিয়াছে।” (বঙ্গসাহিত্যের বিকাশ, বঙ্গবাণী পৃ. ১০৮)।

:: ড. অনুপম সেন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App