×

অর্থনীতি

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১, ০৮:৪১ এএম

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে প্রাধান্য দিতে হবে

রাশেদ খান মেনন

কোভিড মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে আগামী ৩ জুন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এ রকম এক সংকটময় সময়ে কোনো এমপি এমনকি সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই বাজেট পেশ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ১৪ দলীয় জোটের সদস্য ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। এবারের বাজেটে তৃণমূল স্তরের মানুষের চাহিদা কতটা প্রতিফলন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ কোভিড মহামারির এ সময়ে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতকে বেশি প্রাধান্য দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। গত রবিবার ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বাজেট নিয়ে একদিনও অর্থমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। তাই বাজেটে কী হচ্ছে তা আমরা জানি না। গত দুবছর ধরে সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই বাজেট প্রস্তুত ও পেশ করা হচ্ছে। তাই আমরা বাজেট সম্বন্ধে বেশ অন্ধকারে রয়েছি বলা যায়। তবে যতটা শুনেছি বাজেটে জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা এই, গত বারে আমরা দেখলাম বাজেটে জীবনের চেয়ে জীবিকার তাগিদই বেশি এসেছে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি বেশিই প্রাধান্য পেয়েছে। মেনন বলেন, করোনাকালে যে দ্বিতীয় ঢেউ যাচ্ছে তাতে দেখছি চিকিৎসা খাত ভালো অবস্থানে দাঁড়াতে পারল না। এ খাতের একটা বড় ধরনের সংস্কার হওয়া দরকার। স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বেশি হওয়া দরকার। সেই সঙ্গে কীভাবে এটা বাস্তবায়ন হবে তার পরিকল্পনাও জরুরি। তার জন্য একটা কর্তৃপক্ষ তৈরি করা দরকার। কেননা, এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও এই মন্ত্রণালয় দিয়ে সেটা বাস্তবায়ন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না, কোনো কাজ হয়েছে বলে জানা নেই, হবে বলেও মনে হয় না। সেজন্য আলাদা একটা সেটআপ প্রয়োজন, যারা কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি কাজ করবে। মেনন বলেন, এর পরে আসে শিক্ষা খাত, এবারে শিক্ষা ব্যবস্থা কোভিডের কারণে ভেঙে পড়েছে। আমরা এ খাতে গতবারে জিডিপির ৩ শতাংশ বরাদ্দ দিয়েছিলাম। এবারে আমাদের দাবি ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ বা মোট বাজেটের ২০-২৫ শতাংশ। এবার তো শিক্ষা খাত আরো বেশি সমস্যায় পড়েছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রায় দেড় বছর ক্লাসের বাইরে। সেজন্য শিক্ষা খাতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। যেমন অনলাইন ক্লাসের জন্য স্মার্টফোন, সেই সঙ্গে ইন্টারনেট ইত্যাদি। এগুলোর ব্যবহার করতে হলে শিক্ষার্থীদের ঋণ দিতে হবে। এজন্য বাজেটে বরাদ্দ দেয়া ও স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট চার্জ কমানো বিশেষ প্রয়োজন। তিনি বলেন, প্রতি বছর শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেখানো হয় তা তথ্যপ্রযুক্তিকে যুক্ত করে। এবারে প্রযুক্তি খাতকে আলাদা করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে শিক্ষায় আসলে কতটা বরাদ্দ সরকার দিয়েছে। আর কৃষিতে আমাদের সর্বাধিক বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। কেননা, গত দুই বছর এই কৃষিই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। শুধু সারের দাম কমালে হবে না, কৃষককে বাঁচাতে সব ধরনের প্রণোদনা দিতে হবে। তবে খাদ্য অব্যবস্থাপনার জন্য খাদ্য সংকট তৈরি হতে যাচ্ছে। খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্য নাই হয়ে গেছে। তাই যদি হয় তাহলে আমাদের বাইরে থেকে খাদ্য কিনতে হবে। মেনন বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবমতে গত দুই বছর করোনাকালে তিন হাজারের উপরে কোটিপতি ব্যাংকার বেড়েছে। কিন্তু ৫ লাখ কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে যা থেকে তারা সহায়তা পেত। তারা আরো দরিদ্র হয়ে পড়েছে। তাই কৃষকদের সব ধরনের সুবিধা দিতে বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। মেনন মনে করেন, এসব অতি ধনীর কাছ থেকে টাকা আনতে হবে। কেননা, গত দুই বছরে ধনীর সংখা বেড়েছে শুধু তাই নয়, তাদের লাভের পরিমাণও বেড়ে গেছে। তিনি এসব ধনীকে চিহ্নিত করে তাদের কাছ থেকে আমেরিকান স্টাইলে ‘ওয়েল ট্যাক্স’ আদায় করে বাজেট ঘাটতি পূরণের কথা বলেন। তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি কমানো দরকার। সেক্ষেত্রে ট্যাক্স না বাড়িয়ে ট্যাক্সের আওতায় আরো বহু ধনী ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা খাতে আরো বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। করোনার কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের আয় বাড়াতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। তাছাড়া যেসব প্রবাসী শ্রমিক কোভিডের কারণে দেশে ফিরে এসেছে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বাজেটে বরাদ্দ দিতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App