×

মুক্তচিন্তা

সমাধান কী?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১, ১২:২৮ এএম

সমাধান কী?

বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ কীরূপ ভয়াবহ অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিবেচনা করলেই পরিলক্ষিত হয়। ২০২০ সালের জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ঢাকায় প্রতিদিনে গড়ে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ৩৯টি, প্রতি ৩৭ মিনিটে ১টি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, গত ৭ বছরে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে বেড়েছে ১৭ শতাংশ, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। করোনা মহামারির আগেও গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে বিবাহবিচ্ছেদের কোনো আবেদন জমা পড়েনি, তবে জুন মাস থেকেই শুরু হয় এর ভয়াবহতা। এক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় বিবাহবিচ্ছেদের সর্বমোট আবেদনের ৭০ শতাংশ আবেদন করা হয়েছিল স্ত্রী কর্তৃক। অর্থাৎ সাধারণ ধারণা করা যায়, করোনাকালীন সময়ে যখন পুরুষদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায় তখন সংসারে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হলে তা বিবাহবিচ্ছেদের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে যখন ব্যক্তিত্বের সংঘাত, রুচি ও মনোভাবের সংঘাত, আর্থিক সংকট, নিরাপত্তা বোধের অভাব ও নানাবিধ অসামঞ্জস্যতার সৃষ্টি হয় তখনই তা বিবাহবিচ্ছেদে রূপ নেয়। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বামীর বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব, স্ত্রীর বিলাসবহুল জীবনযাপন, যৌতুকের দায় চাপানো, একে অপরের প্রতি নেতিবাচক সন্দেহ প্রবণতা এবং স্বামীর মাদকাসক্তে আসক্ততার ফলে বিবাহবিচ্ছেদ দিন দিন বেড়েই চলছে। তবে বর্তমান সময়ে নারীর ক্ষমতায়ন এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিক অংশগ্রহণের ফলে অধিকাংশ নারী স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছায় চলাচলে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, যার ফলে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে থাকে। এছাড়া আজকাল প্রেমকেন্দ্রিক সম্পর্কে জড়িয়ে আবেগের বশবর্তী হয়ে অভিভাবকদের অবর্তমানে কিছু বিবাহ সংঘটিত হয়ে থাকে, পরবর্তীতে যখন বাস্তবিক জীবনের সঙ্গে চলতে গিয়ে হোঁচট খায় তখনই তা বিবাহবিচ্ছেদে রূপ নেয়। সব বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ দাম্পত্য জীবনে মনের শক্তি ও কার্যক্রমকে বুঝতে না পারার ব্যর্থতা। বিবাহিত আমেরিকানদের দুই-তৃতীয়াংশের বক্তব্য হচ্ছে যে, তারা তাদের বিবাহিত জীবনে অনেক সুখী। বিবাহ জীবনকে সফল করে তুলতে হলে কী কী প্রয়োজন তা জানার জন্য সমাজবিজ্ঞানী জেনেট এবং রবার্ট লয়ার এমন ৩৫১ পারিবারিক যুগলকে প্রশ্ন করেন। তার মধ্যে ৫১ জন বলেন, বিবাহিত জীবনে তারা সুখী ছিল না। তবে ধর্ম, পারিবারিক প্রথা ও সন্তান-সন্ততির দিকে তাকিয়ে বিবাহ জীবন চালিয়ে যায়। অবশিষ্ট ৩০০ দম্পতি সুখী দম্পতি। যদি মনে করা হয় বিয়েটা ভেঙে যাবে তাহলেই বিচ্ছেদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই এসব মনোভাব কখনোই আনা যাবে না দাম্পত্য জীবনে। এ সমস্যা মোকাবিলায় আমাদের সংস্কৃতিকে গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে এবং আমাদের পারিবারিক জীবনের সুন্দর ও গৌরবময় অতীতকে সবার মাঝে ফুটিয়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তবে সামাজিকভাবে যদি আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হয় তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা অনেকাংশেই কমে যাবে। উভয়ের মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত হলে অচিরেই এ সমস্যার সমাধান মিলবে।

মাহমুদুল হাসান ইজাজ :  শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App