যুব সমাজ কোন পথে হাঁটছে
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১, ১২:৩৭ এএম
মাদকদ্রব্য আমাদের সমাজে চরম বিরূপ প্রভাব যে ফেলে তার প্রমাণ রয়েছে অসংখ্য। দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে প্রায় প্রতিনিয়তই মাদকের কারণে পরিবার ও সমাজের ওপর দিয়ে বয়ে যায় দুর্ভোগের কালো ছায়া। মাদকাসক্ত ব্যক্তির হাতে মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রতিনিয়তই। মাদকের কারণে আমাদের দেশে অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হচ্ছে। আমরা যদি কয়েক বছর আগের দিকে তাকাই তবে এ ধরনের ভূরিভূরি ঘটনার প্রমাণ আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মাদকাসক্ত ঐশী রহমানের কথা দেশের কোনো মানুষের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশে কমপক্ষে ৬৫ লাখ মানুষ সরাসরি নানা ধরনের মাদক সেবন করে থাকে। এদের মধ্যে শতকরা ৮৭ ভাগ পুরুষ ও ১৩ ভাগ নারী মাদক গ্রহণ করে। অর্থাৎ মোট মাদকসেবীর মধ্যে ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার পুরুষ এবং ৮ লাখ ৪৫ হাজার নারী মাদক সেবন করে থাকে। এর মধ্যে শিশু বিশেষ করে পথশিশুরা রয়েছে। আর মাদক ব্যবসার সঙ্গে নানাভাবে জড়িত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। আমাদের দেশে অবৈধভাবে মাদক আমদানির জন্য প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি দেশীয় মুদ্রা পাচার হয় বলে বেসরকারি সংস্থা ‘ফ্যামিলি হেলথ ইন্টারন্যাশনাল’-এর গবেষণালব্ধ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ওই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, প্রতি বছর শুধু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে এ দেশে প্রবেশ করে। আমাদের দেশে আনুমানিক ৩২ রকম মাদকের খোঁজ পাওয়া যায়। তবে সরকারের কঠোর ও জোরদার পদক্ষেপের কারণে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য আমদানি, বিক্রি ও সেবন আগের তুলনায় অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু মাদক আমদানি, বিক্রি ও সেবন পুরোপুরি রোধ করা যায়নি। বাংলাদেশে মাদকাসক্তির প্রধান শিকার যুব ও তরুণ সমাজ। যুব ও তরুণ সমাজ জাতির প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত। তরুণ ও যুবকরাই দেশের সার্বিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই পরিবার থেকে নিতে হবে উদ্যোগ। বিশেষ করে ১৪-২৪ বছর বয়সি সন্তানরা কখন ও কোথায় যাচ্ছে, কার কার সঙ্গে মেলামেশা করছে সেসব বিষয়ে অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। এছাড়া মাদকাসক্তির যেসব কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হতাশা। হতাশা রোধে যুব ও তরুণ সমাজের জন্য নিয়মিত লেখাপড়া, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা, বই পড়ার দিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বোপরি যুব ও তরুণ সমাজের মনে ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে পারলে মাদকের করাল গ্রাস থেকে যুব ও তরুণ সমাজ রক্ষা পাবে। মাদকের কারণে এদেশে সৃষ্টি হচ্ছে সামাজিক অস্থিরতা। মাদকের ভয়ংকর আগ্রাসন থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের পাশাপাশি মাদকবিরোধী গণসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। সরকার বা কোনো একক সংস্থার পক্ষে মাদকবিরোধী সংগ্রামে শতভাগ জয়ী হওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব মানুষকে মাদকবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতে হবে। কোনো এলাকায় মাদকের আখড়া বলে বিবেচিত হলে তা ধ্বংসকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তবেই সম্ভব একটি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে চরম ঘৃণার চোখে দেখা হয়। এতে সমাজের ভালো থেকে মন্দই বেশি হয়। কেউ জন্ম থেকে মাদকাসক্ত হয় না। যেসব কারণে একজন মানুষ মাদকাসক্ত হয়ে উঠে তার কারণ চিহ্নিত করে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে মাদকের করাল গ্রাস থেকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এছাড়া সমাজ থেকে মাদক উচ্ছেদে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নয়, দেশের সব সচেতন নাগরিককে ভূমিকা নিতে হবে।’
ইসমাইল মাহমুদ : ভানুগাছ রোড, শ্রীমঙ্গল-৩২১০ [email protected]