×

মুক্তচিন্তা

ঝুঁকির মুখে শিক্ষা খাত, ভাবতে হবে ভিন্ন মত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১, ১২:৩৪ এএম

ঝুঁকির মুখে শিক্ষা খাত, ভাবতে হবে ভিন্ন মত

করোনার থাবায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি লণ্ডভণ্ড হয়েছে। করোনা মহামারিতে প্রায় ১৫ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরাসরি পাঠদান। বন্ধ আছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা। থেমে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম। স্কুল-কলেজে অভ্যন্তরীণ কিছু পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু তাতে শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্দেশ্য পুরোপুরি পূরণ হচ্ছে না। ক্লাস বন্ধ থাকায় সরকার সংসদ টেলিভিশন, বেতার ও অনলাইনে ক্লাস নেয়ার উদ্যোগ নেয়। তবে সব শিক্ষার্থী এ সুবিধা পাচ্ছেন না। শহুরে কিছু শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করতে পারলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার কারণে মোটেও অনলাইন ক্লাস করতে পারেননি। মফস্বলের শিক্ষকরাও অনলাইন ক্লাস নেন না। ফলে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এই বন্ধের ফলে চরম ক্ষতির শিকার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী ও ৫০ লাখ শিক্ষক। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিও কম নয়। করোনার প্রভাবে ব্যাপক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বেড়েছে বাল্যবিয়েও। শহুরে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে দেখা দিয়েছে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যাও। করোনায় শিক্ষা খাতের ব্যাপক ক্ষতির চিত্রও উঠে এসেছে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার ভিন্ন ভিন্ন জরিপে। গণসাক্ষরতা অভিযানের সমীক্ষা অনুযায়ী ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ও দূরশিক্ষণ বা বেতার, টেলিভিশন, অনলাইনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেয়া পাঠদানের আওতায় এসেছে। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৯২ শতাংশ আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনের পাঠদানের আওতায় এসেছে। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা এ সময় বাইরে ঘোরাঘুরি করছে, টিভি দেখে সময় ব্যয় করছে। করোনার সময়ে কয়েকজন অভিভাবক একটি বিষয়ে তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তা হচ্ছে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও শিক্ষার্থীদের বাসায় অবস্থানের কারণে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর ব্যবহার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সামগ্রী হাতের কাছে পেয়ে তার অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে আমাদের ছাত্রসমাজ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিজিটাল ডিভাইসের স্ক্রিন বা মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকায় চোখের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। ফলে অল্প বয়সি বাচ্চাদের আজকাল ভারী চশমা ব্যবহার করতে দেখা যায়। ইন্টারনেট আসক্তির কারণে শিক্ষার্থীদের অনিদ্রা, ক্ষুধামান্দ্য, হজমে সমস্যা, ঘাড় ও কোমর ব্যথা, মোটা হয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই আসক্তি তাদের খিটখিটে মেজাজ, অল্পতেই ধৈর্যচুতি, টেনশন বোধ, বিষণ্নতা, পারিবারিক সৌজন্যবোধের অভাবজনিত বিভিন্ন মানসিক সমস্যা তৈরি করছে। এছাড়া মোবাইল ব্যবহার করে করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট ব্যবহারজনিত আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে, যা তাদের পড়ালেখা থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। এই আসক্তি থেকে বের হতে না পারলে শিক্ষার পরিণতি হবে আরো ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার এই সংকটকালীন চর কিংবা হাওর অঞ্চলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে আশঙ্কাজনক হারে। কেউ মাদকে যুক্ত, কেউ অবসাদে ভুগছে। আর এই বাস্তবতাই বলে দিচ্ছে, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কাই বেশি। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, কীভাবে তাদের সক্রিয় করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

গোপাল অধিকারী : লেখক ও সাংবাদিক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App