×

মুক্তচিন্তা

ইউনিক আইডি তৈরিতে চরম ভোগান্তি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২১, ১২:২৬ এএম

ইউনিক আইডি তৈরিতে  চরম ভোগান্তি

সরকার সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সঠিক ডাটাবেজ তৈরির উদ্দেশ্যে সব শিক্ষার্থীর তথ্য সংগ্রহ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রত্যেকটি স্কুল ও কলেজকে। সরকারের দেয়া আদেশ অনুযায়ী স্কুলগুলো থেকে যখন শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরি করার জন্য একটি ফরম প্রদান করা হয়েছে, তখনই মূলত ভোগান্তির শুরু। এই ফর্মে ব্যক্তিগত এবং শিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। যেহেতু এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে, তাই তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। সুতরাং ইউনিক আইডিতে তাদের জন্ম নিবন্ধন চাওয়া হয়েছে। মূল সমস্যা এখানেই কারণ যে জন্মনিবন্ধন ইউনিক আইডির ফরমের সঙ্গে প্রদান করতে হবে তা অবশ্যই অনলাইন নিবন্ধনকৃত জন্ম নিবন্ধনের কপি হতে হবে। যেহেতু আমাদের বেশির ভাগ স্কুল বা কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থী গ্রামীণ জনপদের তাই এদের বেশির ভাগেরই জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি নেই। ফলে অনলাইন কপি জোগাড় করার জন্য তাদের যেতে হচ্ছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোতে একেকটি জন্ম নিবন্ধন করতে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০০০ বা ১৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। যা গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই হতাশাব্যঞ্জক এবং ভোগান্তির। একদিকে গ্রামের পরিবারগুলো আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে অন্যদিকে জন্ম নিবন্ধন তৈরির ফি দিতে গিয়ে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে পরিবার এবং শিক্ষার্থীর মনে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে যা মোটেও উচিত নয়। আবার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে কোনো একটি সেবা নিতে গেলে কমপক্ষে এক সপ্তাহ ঘুরে ঘুরে তারপর তাদের কাছ থেকে সেবা নিতে হয় আর ঘুষের ব্যাপার তো আছেই, যেটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। আমার গ্রামের প্রায় প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী আমার কাছে তাদের হতাশার কথা এবং অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কথা জানিয়েছে। এমনকি তারা এটাও জানিয়েছে যে, এই কাজ করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভবই বটে। এই ইউনিক আইডি তৈরিতে আরো একটি তথ্যের প্রয়োজন সেটি হলো রক্তের গ্রুপ। আর রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার জন্য গ্রামের শিক্ষার্থীদের যেতে হয় স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। এখানেও অরাজকতার ছড়াছড়ি। একেকজনের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করতে খরচ হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা। যা প্রান্তিক পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত করছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফরমগুলো ফটোকপি করতে গেলে ২ টাকা পৃষ্ঠার বদলে ৫ অথবা ১০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। ফলে সরকারের ইউনিক আইডি তৈরি করার এই উদ্যোগটি প্রান্তিক এলাকার শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, যা কখনোই কাম্য নয়। এভাবে ইউনিক আইডি তৈরির নামে কোমলমতি শিশুদের মনে আমরা মানসিক চাপের সৃষ্টি করছি, যার ফল খুব বেশি ভালো নয়। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে বিশেষভাবে নিবেদন, ইউনিক আইডি করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ও সহজলভ্য ফরম ও কাঠামো তৈরি করুন, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে খুব সহজেই ইউনিক আইডি তৈরি করতে পারবে। ফলে কমে যাবে ভোগান্তি। শিক্ষার্থীরা হতে পারবে মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপমুক্ত। একটি কথা সবারই মনে রাখা উচিত যে, সেবা বিকেন্দ্রীকরণ এবং শুদ্ধাচার নিশ্চিত করা গেলে সরকারি সব সেবা খুব সহজে কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই পাওয়া সম্ভব। সরকারের উচিত, এ বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারি সব সেবা প্রদান করা। (সরকারিভাবে আপাতত ইউনিক আইডির কার্যক্রম স্থগিত করা হলেও গ্রামের স্কুলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি ফরম এবং এগুলো পূরণ করার জন্য যাবতীয় তথ্য ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করার জন্য বিশেষভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে, ফলে শিক্ষার্থীরা ওপরে উল্লেখিত ভোগান্তিতে পড়েছেন)

মো. বিল্লাল হোসেন : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App