×

জাতীয়

রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২১, ১১:৪৬ এএম

রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারহানুজ্জামান রাকিন।

রাজধানীতে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( নোবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছেন। তার নাম ফারহানুজ্জামান রাকিন। সোমবার (৩১ মে) সকাল ১১ টার দিকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিজ বাসায় বাথরুমের শাওয়ারের সঙ্গে ডিশ তার বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।

খোঁজ পেয়ে রাকিনের পরিবার স্থানীয় ডাক্তার ও আশেপাশের লোকজন ডেকে এনে দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। এরপর ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলামসহ ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম। তারা ময়নাতদন্তের জন্য রাকিনের লাশ ওইদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করেন। রাকিনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া থানার শ্রীরামপুর গ্রামে। তার বাবা মনিরুজ্জামান প্রবাসী। মা ও বোনের সঙ্গে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় থাকতেন রাকিন।

সূত্র জানায়, গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে ছোটবোনের (এইচএসসি পরিক্ষার্থী) মোবাইল ফোন ক্রয় নিয়ে মা ও বোনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হয় রাকিনের। দীর্ঘ সময় ধরে চলছিল এই দ্বন্দ্ব। রাকিনের কলেজ পড়ুয়া ছোটবোন মায়ের কাছে মোবাইল ফোন দাবি করে। এসময় মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে রাকিন তার মাকে মোবাইল কিনে দিতে নিষেধ করেন। তিনি চেয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর মোবাইল কিনে দিতে। এসব বিষয় নিয়েই মা ও বোনের সঙ্গে রাকিনের মনোমালিন্য হয়। যা চরম আকার ধারণ করে। তিনি তার ছোটবোনের অসদাচরণ সহ্য করতে পারেননি। একপর্যায়ে পরিবারের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভাতিজাকে এভাবে মরতে দেখে হতাশ রাকিনের আপন চাচা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রাকিন আমার আপন ভাতিজা। আমাদের পরিবারের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একমাত্র সন্তান। সে যখন নিখোঁজ হয় তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি, থানায় গিয়েছি। সবার সহযোগিতায় তাকে খুঁজে বের করেছি। এসব আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ছোটবোনের মোবাইল ফোন ক্রয় নিয়ে ওর মনোমালিন্য হয় পরিবারের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে এই মনোমালিন্য চলছিল। এই মনোমালিন্য থেকে এটা হতে পারে বলে আমার ধারণা। আমি ওর(রাকিন) আম্মুকে বলেছিলাম, রাকিন যদি আপনার আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকে আপনি সরি বলে ফেলেন তাকে। রাকিনের বোনকেও বলেছিলাম। আপনারা একটু নরমাল হলে ও ঠিক হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করল রাকিন। এসব ছাড়াও আত্মহত্যার পেছনে অন্য কারণ থেকে থাকলে সেটাও বের হবে আশা করি একদিন। এতোকিছু হবে আমরা ভাবতেও পারিনি। আমার ভাতিজাকে আমরা বাঁচাতে পারলাম না। ভাইয়ের বুক খালি হলো। নিজের ছেলের আত্মহত্যার বিষয়টি প্রবাস থেকে জানতে পেরে অনেকটাই সেন্সলেস আমার ভাই। আমরা আতঙ্কিত।

এ ব্যাপারে রাকিনের মায়ের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

জানা যায়, এর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ি যাওয়ার কথা বলে নোয়াখালী পৌর শহরের রশিদ কলোনীর মেস থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। কোথাও তার সন্ধান না পেয়ে নোয়াখালীর সুধারাম থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার বন্ধুরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাকিনের পরিবার ও পুলিশের প্রচেষ্টায় কয়েকদিন পর খোঁজে পাওয়া যায় তার। সন্ধান পাওয়ার পর রাকিন প্রথমে তার ফুপু এবং নানার বাসায় বেশ কয়েকদিন থেকে আবার নিজ বাসায় ফিরেন। এরপর আবার পুরোনো বিষয় নিয়ে ঝামেলা বাঁধে পরিবারের সঙ্গে। এসব বিষয় নিয়েই হতাশায় ভুগে রাকিন আত্মহত্যা করেছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে এ প্রতিবেদককে।

রাকিনের আত্মহত্যার বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬ টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় স্থানীয় কবরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। রাকিনের বন্ধু ও পরিচিতজনরা মেনে নিতে পারছেন না রাকিনের এই মৃত্যু।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, রাকিনের আত্মহত্যার বিষয়টি আমরা জেনেছি৷ এর আগে সে যখন নিখোঁজ হয় তখন পুলিশসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তাকে উদ্ধার করেছি আমরা। পারিবারিক এসব সমস্যা তো পরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এসব বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। তবুও পরিবার থেকে কেউ বললে তাকে আমরা কাউন্সিলিং করতাম। একটা মেধাবী ছেলে এভাবে আত্মহত্যা করল। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।

ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) কাজী শাহান জানান, আলামত দেখে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন এটি আত্মহত্যা। তারা বলছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টসহ অন্যান্য বিষয় হাতে আসলে তারা প্রকৃত ঘটনা বলতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App