×

জাতীয়

পোশাকের রঙ বদলাতে ট্রায়াল দিচ্ছে পুলিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২১, ০৯:৪৫ পিএম

পোশাকের রঙ বদলাতে ট্রায়াল দিচ্ছে পুলিশ

নারী পুলিশ সদস্যরা। ফাইল ছবি

পোশাকের রঙ বদলাতে ট্রায়াল দিচ্ছে পুলিশ
পোশাকের রঙ বদলাতে ট্রায়াল দিচ্ছে পুলিশ

বাংলাদেশ পুলিশ

আধুনিক বিশ্বের পুলিশের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকে পরিবর্তন আনার চিন্তা শুরু হয়েছে। এতে পুলিশের একরঙা পোশাক আর থাকবে না। মিশ্র রঙের প্রভাবের দেখা মিলবে পুলিশের এই নতুন পোশাকে। এ জন্য ৭ ধরনের পোশাক বিবেচনায় নিয়ে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সেগুলো পড়তে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত এসব কর্মকর্তা গত কয়েকদিন ধরে নতুন ধরনের এসব পোশাক পরে অফিস করছেন। মূলত এসব পোশাকে পুলিশকে কেমন দেখায় তার ধারণা তৈরি করতেই এসব পোশাক কর্মকর্তাদের পড়ানো হচ্ছে। তবে নতুন ধরনের পোশাক চূড়ান্ত করতে ড্রেস রুলস বদল করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই পুলিশ এর অফিসিয়াল ব্যবহার শুরু করতে পারবে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশনায় হেডকোয়ার্টার্সের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে।

হেডকোয়ার্টার্সে একাধিক বৈঠকের পর সাত ধরনের পোশাকের ট্রায়াল কার্যক্রম চলছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার পদমর্যাদার চারজন কর্মকর্তা আজ বুধবার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত নতুন পোশাকে ঋতু বিবেচনায় শার্ট হাফ এবং ফুলহাতা দুই ধরনের হবে। প্যান্টে বেল্ট পড়তে হবে না। শার্ট ইন করতে হবে না। জর্ডান পুলিশসহ ৭টি দেশের পুলিশের পোশাককে অনুসরণ করে এর চেয়েও আধুনিক এবং উন্নতমানের কাপড়ের পোশাক তৈরির চেষ্টা করছে বাংলাদেশ পুলিশ। এজন্য বিশ্বের কয়েকটি দেশের পুলিশের পোশাকের নমূনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কর্মকর্তাদের অফিসিয়াল পোশাক বদলের চিন্তাভাবনা করা হলেও পরে তা বাহিনীতে কার্যকর করা হবে। পুলিশের ইউনিট এপিবিএন এবং এসপিবিএন এর পোশাক বদলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নতুন পোশাকে হাতের ডান বা বাম পাশের কনুইয়ের উপর রেঞ্জ, জেলা বা ইউনিটের মনোগ্রাম অথবা নাম সংযুক্ত রাখার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

পুলিশের সব ইউনিটের পোশাক একই রংয়ের করার পরিকল্পনা চললেও বাহিনীটির বিশেষায়িত অঙ্গ র‌্যাবের পোশাক আগের মতো থাকার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও এখনো এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। নতুন পোশাকের কাপড় হবে খুবই উন্নতমানের। বাহিনীর নিজস্ব গার্মেন্টস বা টেক্সটাইল মিল তৈরি করে সেখান থেকে নতুন পোশাকের কাপড় কেনার কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য পুলিশ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মাধ্যমে গাজীপুরে একটি গার্মেন্টস অথবা টেক্সটাইল মিল তৈরির পরিকল্পনা করছে পুলিশ সদর দপ্তর। আর এই বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শককে (ডিআইজি)। পুলিশের নিজস্ব ছাপাখানা গড়ারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়টি দেখভাল করতে বলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারকে। এছাড়া জুতাসহ অন্যান্য সরঞ্জামও একই উৎস থেকে কেনা বা সংগ্রহ করতে পারবেন পুলিশ সদস্যরা।

জানা গেছে, পুলিশের পোশাকের কাপড়ের মান নিয়ে মাঠ পুলিশের অভিযোগ রয়েছে। পুরানো এ অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে সাবেক আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পোশাকের মান আরও উন্নত করতে বেশকিছু প্রস্তাবনার পাশাপাশি পোশাক সরবরাহে সিন্ডিকেটের অভিযোগ এড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ড. বেনজীর আহমেদ আইজিপির দায়িত্ব নিয়ে পুলিশের পোশাকসহ অন্যান্য সরঞ্জাম উন্নতমানের করতে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি পুলিশ সদর দপ্তরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।

ব্রিটিশ আমল থেকে পুলিশের পোশাক ছিল খাকি রংয়ের। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনেক আগেই পোশাকের রং বদলে গেছে। এর মধ্যে ২০০৪ ও ২০১৬ সালে দু’বার পুলিশের কয়েকটি ইউনিটের পোশাকের রং পরিবর্তন করা হয়েছিল। মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দুই রংয়ের পোশাক দেওয়া হয়। তবে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও ব্যাটালিয়নভেদে পোশাকের ভিন্নতাও রয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন ব্যাটলিয়নের (এসপিবিএন) পোশাক সম্পূর্ণ ভিন্ন রংয়ের।

২০০৪ সালে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করে মহানগরগুলোয় হালকা জলপাই রংয়ের করা হয়। জেলা পুলিশকে দেওয়া হয় গাঢ় নীল রংয়ের পোশাক। র‌্যাবের কালো ও এপিবিএনের পোশাক তৈরি করা হয় খাকি, বেগুনি আর নীল রংয়ের মিশ্রণে। এসপিবিএনের পোশাকের জামার রং করা হয় ধূসর। এভাবে পুলিশের পোশাক বিভিন্ন রংয়ের ও কাপড়ের হওয়ায় অপরাধীরা তা নকল করে ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। সারাদেশে এ ধরনের অনেক ঘটনার প্রমাণ মিলেছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেককে।

২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের পোশাক বিধি সংশোধন করা হয়। নতুন বিধিতে পুলিশের ক্যাপ, ব্যাজ ও বেল্ট থেকে নৌকার মনোগ্রামের সঙ্গে বৈঠাও বাদ দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে সেই বিধি পরিবর্তন করে ১৯৮৫ সালের বিধি বহাল করে সরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App