×

মুক্তচিন্তা

উপকূলে ত্রাণ সুপেয় পানি দেয়া হোক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২১, ১২:০৪ এএম

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। কোথাও নড়বড়ে বেড়িবাঁধের কারণে আবার কোথাও বেড়িবাঁধ উপচে নদীর লোনা পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। এসব জায়গায় দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার পানির সংকট। সারা বছরই এখানে খাবার পানির সংকট থাকলেও দুর্যোগ কিংবা বর্ষাকালে ভাঙনের ফলে এটি আরো প্রকট আকার ধারণ করে। যে কারণে ইয়াস-পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় জনপদে নিরাপদ পানির অভাবে দেখা দিয়েছে নানা চর্মরোগ। গত বছর আম্ফানের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এ বছর ইয়াসের প্রভাব যেন উপকূলীয় মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপার সাইক্লোন আম্ফানে উপকূলের বেড়িবাঁধ ভেঙে সর্বত্র লোনা পানি ঢুকে পড়েছিল। বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ভেসে যায়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় জনপদের একমাত্র পানির উৎস পুকুরগুলো। ফলে খাওয়া কিংবা অন্যান্য কাজের জন্য ব্যবহৃত পানির ব্যাপক সংকট দেখা যাচ্ছে। দূর গ্রাম থেকে এক কলস পানি আনতে একজন নারীর তিন থেকে চার ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। দেখা যায়, শুধু পান করার কাজে ব্যবহার করলেও পরিবারে লোকসংখ্যা বেশি থাকায় দিনে দুবার পানি আনতে যেতে হয়। এ সময় অন্যান্য কাজে এই পানি লাগানো তাদের কাছে বিলাসিতা বা কিছুটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। পরিমিত পানির যে ব্যবহার সেটিও তারা করতে পারছে না। একজন মানুষের যে পরিমাণ পানি পান করার কথা সংকট থাকায় সেটিও তারা পারছে না। দেখেছি সরকারি বা বেসরকারিভাবে পানির জীবাণু কাটানোর জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কথা হলো, সেই পানিই যদি না থাকে তাহলে এসব সামগ্রী দিয়ে কী হবে! তবে ভালো লাগল সেদিন দেখলাম টিম পজিটিভ নামে একটি সংগঠন এই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। তারা এসব জনপদের মানুষদের নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য একটি ব্যবস্থা করেছে। যানবাহনে করে পানি নিয়ে সেখানে তারা বিতরণ করছে। নিশ্চয় সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর এ কাজটি প্রশংসিত হয়েছে। আসলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব মানুষ সারাজীবনই অবহেলিত। দুবেলা আহারই মাঝে মধ্যে তাদের কাছে অনেক বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। তার ওপর সৃষ্টিকর্তার দেয়া এই বিশেষ নিয়ামতই পান করা যখন অলীক স্বপ্ন হয়ে সামনে আসে তখন বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই যেন আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায়। মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে সরকারি-বেসরকারিভাবে এখনই ত্রাণের পাশাপাশি সুপীয় পানি দেয়া শুরু করতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ জনপদে সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করলে দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়। উপকূলীয় গাবুরা, পদ্মপুকুরসহ শ্যামনগর, আশাশুনির বেশ কয়েকটি জায়গায় খাওয়ার পানির অতীব প্রয়োজন। তবে আশার খবর হলো, এসব বিষয় নিয়ে টনক নড়েছে জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় এনজিও কর্মকর্তাদের। জেলা প্রশাসন থেকে বলছে, উপকূলীয় দুই উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে খাবার পানির তীব্র সংকট নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এসব এলাকায় সরকারি একাধিক প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে খাবার পানির সংকট কিছুটা কমবে। তবে এলাকায় সুপেয় পানি সংকট দূর করতে পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প প্রয়োজন বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, দুর্যোগপ্রবণ বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে খাবার পানির সংকট নিরসনে ইতোমধ্যে প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি রিভার্স অসমোসিস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। আরো কয়েকটি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে যে যাই বলুক না কেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া এই বিপুলসংখ্যক মানুষের সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এজন্য সরকারকে উপকূলীয় জনপদ নিয়ে কাজ করার সময় সুপেয় পানির কথাটাও ভাবতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনার ফলে এ সংকট দূর করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। রিয়াদ হোসেন শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App