×

জাতীয়

গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উধাও, দেখভালও নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২১, ০৯:০০ এএম

সরকারের দেয়া শর্ত শতভাগ পূরণ করার অঙ্গীকার করেই গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনেই যাত্রী পরিবহনের প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সরকারকে আশ^স্ত করে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই সব ধরনের গণপরিবহন থেকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গণপরিবহন চলাচল করার কারণেই করোনা এখন বড় শহর থেকে জেলা শহর হয়ে গ্রামের সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সংক্রমণের ভয়াবহতার কারণে বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় পর্যায়ে লকডাউনের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়ার সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সতর্ক করলেও গণপরিবহনের বর্তমান চিত্র পুরোপুরি উল্টো। রাজধানীর বাস টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড ফেরিঘাটসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দূরপাল্লার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা এবং ব্যক্তিগত দূরত্ব বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশনা থাকলেও তা কেউই মানছেন না। পাশাপাশি দুই সিটে যাত্রীদের পরিবহন করতে দেখা গেছে। অনেক ক্ষেত্রে দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার বাস ছাড়া নগর পরিবহনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। রাজধানীর ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, কাওরানবাজার, কাকরাইল, মালিবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার চিত্রই দেখা যায়। গণপরিবহনে চালক ও সহকারী এবং যাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ধরনের অনীহা দেখা গেছে। পরিবহন কোম্পানির পক্ষ থেকে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিতের নির্দেশনা থাকলেও তা এখন আর কোথাও নেই। পাশাপাশি সিটে যাত্রী বসানোর পর দাঁড়িয়েও যাত্রী পরিবহন করা এখন প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। কোনো গাড়িতেই জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করা হয় না।

যাত্রী ও বাসের লোকজন একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। গাজীপুর পরিবহনের চালক বাবুল তার থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছেন। তিনি জানান, ইঞ্জিনের গরমের কারণে একটানা বেশি সময় ধরে মাস্ক পরে থাকা সম্ভব হয় না, তাই মাঝে মাঝে খুলে রাখেন। যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলা হলেও তারা পরেন না। তাদের আবার জোর করা যায় না। সিট খালি না থাকলেও যাত্রীরা জোর করে বাসে উঠে পড়ে। যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।

এদিকে যাত্রীরা বলছেন, পরিবহন কোম্পানিগুলোর লোকজনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই স্বাস্থ্যবিধি ভেঙে পড়েছে। সুশান্ত দাস নামের এক যাত্রী জানান, বাসের স্টাফরা মাস্ক ছাড়াই যাত্রী বাসে তুলছে, হাত ধরছে। আবার মাস্ক না পরেই যাত্রীদের মুখের কাছে গিয়ে কথা বলছে। যাত্রীরা গরমের কারণে মাস্ক অনেক সময় খুলে রাখে। তবে অনেকেই মুখে মাস্ক রাখেন। অফিস টাইমে নগর পরিবহনে গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়া হয়।

হেলথ এন্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এখন একটি জটিল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় শহরে সংক্রমণ বেশি ছিল। সীমান্তবর্তী জেলা বা অঞ্চলে সংক্রমণ কম ছিল। আবার উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বেশি হয়েছে। কিন্তু আমরা এখন দেখছি, সীমান্তের জেলা শহর ও অঞ্চলে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ নানান পেশার শ্রমজীবী মানুষসহ বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা দেখছি এই জটিল করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণেই পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ফের করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলতে হবে। কোথাও কোনো জনসমাগম করা যাবে না। বিশেষ করে গণপরিবহনসহ পাবলিক প্লেসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো কঠোর হতে হবে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, গণপরিবহন চালুর আগে আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সারাদেশের পরিবহন কোম্পানিগুলোকে এবং মালিকদের সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দেশনা পাঠিয়েছি। দূরপাল্লার সব গণপরিবহনে এখনো যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আমাদের চালক ও সহকারীরাও আক্রান্ত হতে পারে। সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। টার্মিনালে যাত্রী উঠানোর আগে সব বাসেই জীবাণুুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়। তবে শহরের গণপরিবহনে কিছু কিছু অনিয়ম হচ্ছে। যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় কোনো কোনো সময় এই অবস্থার সৃষ্টি হলেও এখনো অর্ধেক যাত্রী নিয়েই গণপরিবহন চলছে।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে যাত্রীবাহী লঞ্চে। এখানে কারো মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা থাকলেও আগের মতোই গাদাগাদি করে যাত্রী নেয়া হয়। লঞ্চের ডেকের যাত্রীরা কোনো ধরনের শারীরিক দূরত্ব না মেনেই শুয়ে-বসে যাচ্ছে। কারো মুখেই মাস্ক নেই। শিমুলিয়া ও পাটুরিয়াসহ ফেরিঘাটগুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি কেউ মানছে না।

স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করা হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন সরকারের কর্মকর্তারা। কিন্তু বাসে বা লঞ্চে তা মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। প্রথম কয়েক দিন বিআরটিএ-র মোবাইল কোর্ট গাবতলী ও মহাখালীতে তৎপর ছিল। কিন্তু দিনে দিনে এই তৎপরতাও উধাও হয়ে গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App