×

জাতীয়

খালেদার হার্ট ও কিডনির সমস্যা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২১, ০৯:১০ এএম

নতুন শর্তে বিদেশযাত্রার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে পরিবারের দেনদরবার

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে কাতরাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও বাস্তবে তার শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার হার্ট এবং কিডনি বেশ ভালো মাত্রায় ‘এফেক্টেড’। এমন অবস্থায় দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে জোর দিচ্ছেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ নিতে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে ফের যোগাযোগ শুরু করেছে খালেদা জিয়ার পরিবার। নতুন কিছু শর্ত নিয়ে দুপক্ষে চলছে দেন দরবার। দলীয় সূত্র এমনটাই নিশ্চিত করেছে।

খালেদা জিয়া কেমন আছেন এবং তার কী ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে, এসব বিষয়ে নীরব দল এবং পরিবার। শারীরিক অবস্থার সঠিক খবর না আসায় দলীয় প্রধানের অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে কিনা- এমন প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিদেশ নিতেই জোর করে খালেদাকে অসুস্থ বানানো হচ্ছে কিনা, এমন সন্দেহ অনেকের।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজেকে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতির দিকে থাকলেও পুরোপুরি সেরে উঠতে তার সময় লাগবে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শ্বাসকষ্ট নেই তবে শরীরের তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। এ ছাড়াও পোস্ট কোভিড জটিলতায় তার হার্ট ও কিডনি এফেক্টেড। এসব নিয়ে চিকিৎসকরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, চিন্তিত।

বিদেশে চিকিৎসার আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্য সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার ব্যাপারে নতুন করে ফের সরকারের কাছে আবেদনের প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার পরিবার ভালো বলতে পারবে।

খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরও তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি প্রতিদিন ব্রিফিং করে জানাতেন চিকিৎসকরা। কয়েকদিন হাসাপাতালের বিছানায় তার ছবি ঘুরে বেড়াত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দলীয় নেতাকর্মীরা সেই ছবি দিয়ে ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়ে দোয়া চাইতেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে খালেদা জিয়ার হাসপাতালের কোনো ছবি প্রকাশ করতে কড়াভাবে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের প্রধান এজেন্ডা হিসেবে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টি রাখা হলেও এ নিয়ে কথা বলতে চান না ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য কেউ খালেদা জিয়ার বিষয়ে মিডিয়াসহ কোথাও কোনো কথা বলবে না। এ কারণেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা এ বিষয়ে গণমাধ্যমে মুখ খুলছেন না। নির্দেশ অনুযায়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কয়েকবার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে এসেছেন। এর বাইরে হাসপাতালে নিয়মিত যাচ্ছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যিনি খালেদা জিয়ার চিকিৎসক দলের সদস্যও।

খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রথম অবস্থায় ফুসফুসের জটিলতাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ফুসফুস থেকে পানি (ফ্লুইড) বের করার জন্য একটি টিউব লাগানো হয়েছিল। সেটাও খুলে ফেলা হয়েছে। তবে এখন তার অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে না তেমন। এখন হার্ট ও কিডনির জটিলতাই বেশি দুর্বল করে দিচ্ছে খালেদা জিয়াকে। সিসিইউ থেকে বেডে নেয়ারও সাহস পাচ্ছে না চিকিৎসকরা। কবে নাগাদ বাসায় ফিরতে পারবেন তিনি সে বিষয়েও স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কথা বলা নিষেধ আছে। চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করে যাচ্ছেন।

চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার কিডনি ও হার্টের অবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কিন্তু কিছু করার নেই। আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে বৈঠক করে। সেখানে তার অন্যান্য শারীরিক অবস্থার রিপোর্টগুলো নিয়ে সস্তষ্ট থাকলেও কিডনি ও হার্টের রিপোর্ট নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। তাই আমরা তার বিদেশে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।

তবে এভার কেয়ার হাসপাতলের তথ্য অনুযায়ী খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল এবং তিনি স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছেন। তার ফুসফুসের পানি বের করার কৃত্রিম নল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি চাইলেই কেবিনে যেতে পারবেন কিন্তু তার পরিবারের একটি আবেদনের কারণে তাকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি না মিললেও হাত গুটিয়ে বসে নেই পরিবারের সদস্যরা। ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার ও বোন সেলিনা ইসলাম এ বিষয়ে তৎপর রয়েছেন। ওদিকে লন্ডন থেকে বিষয়গুলো তদারকি করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানা গেছে, নতুন কিছু শর্ত নিয়ে দেনদরবার চলছে। এখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোন দেশে নেয়া হবে তাকে। সরকার চায় খালেদা জিয়া দুবাই গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসুন। এই প্রস্তাবের পরিপেক্ষিতে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি, নির্দিষ্ট টাইম ফ্রেম বেঁধে খালেদার চিকিৎসা সম্ভব নয়। হিসাব-নিকাশ মিললে তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। তবে পুনরায় আবেদন করা হবে কি না, তা নির্ভর করছে ওই হিসাব এবং সরকারের ‘সবুজ সংকেতের’ ওপরই। খালেদা জিয়ার পাসপোর্টও মিলবে ওই সংকেতে।

সূত্রের দাবি, হাসপাতাল থেকে ‘সুস্থ’ হয়ে বাসায় চলে গেলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নাও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবার। তাইতো হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

এদিকে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কিংবা বিদেশ যাত্রার তৎপরতা কোনোটার সঙ্গেই দল সম্পূর্ণ অন্ধকারে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। নেতাদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে নানা বিষয়ে খতিয়ে দেখাটা অমূলক নয়। কারণ এখন এক ধরনের সমঝোতা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া চলে গেলেও সরকারের কোনো সমস্যা না-ও থাকতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা নিয়ে সরকারের আগাম চিন্তা থাকা স্বাভাবিক বলে কেউ কেউ মনে করেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও বিদেশে যাওয়া, এর কোনোটির বিষয়েই জানা নেই। আগে চিকিৎসকরা জানাতেন এখন তারাও তো কথা বলতে চান না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App