×

মুক্তচিন্তা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কোন পথে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ১২:১৭ এএম

সম্প্রতি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার গণভবনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। জাতিগত নিধনের শিকার জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে মিয়ানমারের ১ মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার সেনাপ্রধান বলেছেন, রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয়। বাংলাদেশ সরকার ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী আবাসনের জন্য ভাসানচরে স্থান দিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট ছাড়াও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। করোনা ভাইরাস থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং এর প্রভাব মোকাবিলা করে অর্থনীতি সচল রাখতে প্রণোদনা প্যাকেজ ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য অন্যান্য অর্থ সুবিধা দিয়েছে সরকার। রোহিঙ্গা সংকটের গ্রন্থিমোচনে তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হোক। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রায় চার বছর ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গারও প্রত্যাবাসন হয়নি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বাস্তবে কিছুই করছে না মিয়ানমার; এমনকি জাতিসংঘকে দেয়া প্রতিশ্রুতিও মানছে না দেশটি। এর মধ্যে মিয়ানমারে ঘটে গেছে সামরিক অভ্যুত্থান। জান্তাপ্রধান রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সব সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাবাসন প্রসঙ্গে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার সকালে গণভবনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৫তম অধিবেশনের সভাপতি ভলকান বজকির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় ভলকান বজকি এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে, তার প্রশংসা করেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের দিক থেকে সবচেয়ে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল ছিল কক্সবাজার। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে দীর্ঘ সময় ধরে আশ্রয় দেয়ায় সেই পরিবেশ আজ ধ্বংসপ্রায়। স্থানীয় জনজীবনেও নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। এই অবস্থায় সরকার ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়, যদিও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৮ হাজার রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় সেখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য যেসব আয়োজন করা হয়েছে এবং সেখানে ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বজকি তারও প্রশংসা করেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভলকান বজকি বলেন, সংকটের সময়ে উদ্বাস্তুদের কীভাবে সহযোগিতা করতে হয়, ভাসানচর তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এক প্রশ্নের জবাবে বজকি স্বীকার করেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে। একটি গ্রুপ হচ্ছে আসিয়ান গ্রুপ এবং আরেকটি কোর গ্রুপ। সাম্প্রতিক সময়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গা শুধু নয়, কয়েক দশক ধরে আসা আরো অনেক রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তারা এখন বাংলাদেশের সমাজে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাই রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে হবে। দ্রুত প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করতে হবে। তার আগে পর্যন্ত তাদের কোথায় রাখা হবে, কীভাবে দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যাবে, সেসব ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনমান রক্ষায় পর্যাপ্ত উদ্যোগ নিতে হবে। কাজেই চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ সুসম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখা হবে, এটাই কাম্য। আর কে চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App