×

জাতীয়

ইসি নাকি স্বরাষ্ট্র, কার হাতে যাবে এনআইডি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২১, ০৮:২৮ এএম

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম ইসির হাতে থাকবে নাকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগে যাবে, তা নিয়ে টানাপড়েন চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে দেয়ার বিষয়ে গত ১৮ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তারপরই শুরু হয় টানাপড়েন। এ বিষয়ে ইসির কর্মকর্তা-কর্মী সমিতি দুই দফা সিইসি কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে প্রতিবাদ জানান। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্রে হস্তান্তরের জন্য।

তবে সরকার চাইলেও তা সাংবিধানিক সংস্থার অধীনেই (ইসিতে) রাখার পক্ষপাতী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। এর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। গতকাল রবিবার চার শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মী সিইসির সঙ্গে দেখা করে দুই পাতার একটি প্রতিবাদলিপি দেন। এর পরেই সিইসি এমন মন্তব্য করেন।

সিইসি বলেন, আমাদের সঙ্গে পরামর্শ বা আলোচনা না করেই এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চিঠি দিলেই সঙ্গে সঙ্গে স্থানান্তর করা যায় না। এটি জটিল কাজ। আমরা মনে করি, এনআইডি ইসির কাছে থাকা উচিত। পাশাপাশি ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড ইসির অধীনে থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ও মো. শাহনেওয়াজ। সাবেক আইজিপি ও বর্তমান এমপি নূর মোহম্মদ জানান, ভোটার লিস্ট ও এনআইডি একে অন্যের পরিপূরক; সেক্ষেত্রে সেটআপ চেঞ্জ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এনআইডি কার্যক্রম ইসির পরিবর্তে স্বরাষ্ট্রের হাতে দিতে চাইলে জটিলতা বাড়বে। এটি শুরু হয় ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বৈদেশিক অনুদানে পরিচালিত একটি প্রকল্প। ছবিযুক্ত ভোটার কার্ড করার জন্য প্রায় ৯৯ শতাংশ নারী-পুরুষ এ কার্যক্রমে অংশ নেন। কেননা ভোটার লিস্ট করতে অনেকেই আসত না, কিন্তু এনআইডি করার আহ্বানে প্রচুর সাড়া পড়ে। এর সঙ্গে সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ের সম্পর্ক ছিল না। তবে সরকার যদি এখন এটা নিয়ে নিতে চায়, তাহলে তাদের স্বাধীনভাবে অফিস, লোকবল, সার্ভার ইত্যাদি তৈরি করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব। তার প্রশ্ন, তাহলে ইসি কেন ডাটা সংগ্রহ করবে? আইন অনুযায়ী সংবিধান এটা ইসির হাতে দিয়েছে। একটা চিঠি দিয়ে এটাকে নিয়ে নেয়া যায় না। এর জন্য সংসদে আইন পাস করতে হবে। এতে ইসির অঙ্গহানি হবে, এ নিয়ে সারা বিশে^ কথা উঠবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর সহায়তায় একটা সুন্দর এনআইডি সিস্টেম বা ডাটাবেজ চালু করেছে। এটা যদি স্বরাষ্ট্রে চলে যায় তাহলে সমস্যার সৃষ্টি হবে, খরচও বেড়ে যাবে। সাবেক আইজিপি ও সংসদ সদস্য নূর মোহম্মদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠির বিষয়ে বলেন, কেন চিঠি দিয়েছে তা জানি না। সরকার প্রস্তাব দিয়েছে, তবে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কেননা ইসি তো স্বাধীন কমিশন, তারা তো দিতে চাইবে না। তবে সরকার যদি মনে করে তাদের হাতে গেলে কাজটা ভালো হবে, তাহলে দুপক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে আসা দরকার।

উল্লেখ্য, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ভোটার আইডি কার্ড করে নির্বাচন কমিশন। আবার ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার আধার কার্ডের কাজ করছে। নেপালে নির্বাচন কমিশন এনআইডি বা ভোটার লিস্ট করে, শ্রীলঙ্কায় নির্বাচন কমিশন স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এনআইডি বা ভোটার কার্ড তৈরি করে, পাকিস্তানেও ইসি এ কাজটি করে। তবে আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে স্থানীয় কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে ভোটার হতে হয়। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশে নির্বাচন কমিশন রয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমান কমিশন ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ১১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি লাভ করে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App