×

বাজেট

বাজেটে উপেক্ষিত এমপিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ০৮:৪৬ পিএম

বাজেটে উপেক্ষিত এমপিরা

ফাইল ছবি

জাতীয় বাজেটে বরাবরই সংসদ সদস্যদের (এমপি) মতামত উপেক্ষিত থাকে। এমনকি বাজেট প্রস্তুতের আগে এমপিদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনাই করা হয় না। বাজেটের বিষয়ে চিঠি দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে কোনো বিশেষ বিষয়ে বরাদ্দের দাবি, কর কমানো-বাড়ানো বা ব্যাংক সুদের হার কমানো ও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়াতে এমপিদের প্রস্তাবও গুরুত্ব পায় না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের সদস্যরা, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং অপর বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রায় ৩০ জন

সাংসদ এমন মন্তব্য করেছেন। এ পরিস্থিতিতে বাজেট প্রণয়ন পদ্ধতি বদলানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এদিকে, আগামী ৩ জুন সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ৬ লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ এবং ২-৩ দিনে ৮-১০ ঘণ্টা আলোচনায় প্রায় কোনো সংশোধনী ছাড়াই পাস হয়ে যাবে বিশাল অংকের বাজেট। বাজেট পাসের ক্ষেত্রে এটাই রেওয়াজ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন এমপিরা। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৮ জন এমপি বাজেট আলোচনায় প্রায় ৫০-৬০টি সংশোধনীর প্রস্তাব দিলেও গৃহীত হয় মাত্র ২-৩টি।

এ বিষয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, বাজেটের আগে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনাই করা হয় না। বিরোধীদল হিসেবে আমাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বসতে পারতেন, আমাদের মতামত নিতে পারতেন। কিন্তু বরাবরই তা উপেক্ষিত হয়ে থাকে। এমনকি আমরা যেসব সংশোধনী দিই তাও অগ্রাহ্য করা হয়। এটা একটা আমলাতান্ত্রিক বাজেট। এখানে সাংসদদের এলাকায় চাহিদা বা উন্নয়নের বিষয়ে কোনো মতামত ছাড়াই ইচ্ছেমতো বাজেট পেশ করা হয়।

সরকারদলীয় সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক বলেন, এলাকার বিষয়ে আমাদের অনেক কথা থাকতে পারে। যেমন আমার এলাকায় নদী ভাঙন, পানীয় জলের সমস্যা, কিন্তু অর্থমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেন না। এমনকি আমি একটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি, অনেকগুলো কমিটির সদস্য, সে ক্ষেত্রে ওই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কোনো বিষয়েও তিনি মতামত নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। এটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলে আসছে। এমপিদের মতামতের মূল্যায়ন এখানে করা হয় না। এটাই নিয়ম হয়ে গেছে।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের বাজেট তৈরির নিয়মই বেশ গোপনীয়, কেন তা বুঝি না। সংসদের সাড়ে তিনশ এমপির কাছ থেকে তাদের চাহিদার বিষয়ে জেনে সে অনুযায়ী বাজেটে কিছুটা প্রতিফলন ঘটানো দরকার। কিন্তু বাজেট তৈরির আগে কিছুই আমরা জানতে পারি না। অনেক সময় আমরা অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দেই, কিন্তু তিনি তা প্রায়ই গ্রহণ করেন না। আবার বাজেট পেশের দিন মিনিট দশেক আগে আমাদের বাজেট বই দেয়া হয়। তা পড়ে আমরা তার ওপরে কিছু সংশোধনী প্রস্তাব রাখি। কিন্তু তাও প্রায়ই গ্রহণ করা হয় না। এটাকে খানিকটা আমলাতান্ত্রিক বাজেট বলা চলে।

১৪ দলীয় জোটের অন্যতম সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বাজেট তৈরির আগে আমাদের কোনো বিষয়েই জানানো হয় না। এমনকি আমি একটি সংসদীয় কমিটির সভাপতি হলেও আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাই অর্থমন্ত্রী করেন না। তাই আমাদের এলাকার চাহিদা বা আমাদের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অর্থমন্ত্রী যে বাজেট পেশ করেন তার ওপরে সাধারণ আলোচনা হয়, সেখানেও আমরা অনেক বিষয়ে মতামত বা সুপারিশ দেই কিন্তু তাও গৃহীত হয়েছে এমন নজির নেই।

বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের বাজেট তৈরি ও পেশ অগণতান্ত্রিক। এখানে ২০০২-০৪ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সময় এমপিদের নিয়ে মাসব্যাপী আলোচনা হতো। বিভিন্ন ফোরামে তিনি আলোচনা করে এমপিদের চাহিদা নিতেন। কিন্তু তারপরে আর কোনো সরকার বাজেটের আগে সাংসদ এমনকি সংসদীয় কমিটির সভাপতিদের সঙ্গেও বসেন না। এটাকে আমলাতান্ত্রিক বাজেটে পরিণত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পাশের দেশ ভারতে ৩ মাস আগে থেকে এমপিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বাজেট চ‚ড়ান্ত করা হয়। কিন্তু আমাদের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন, এখানে বাজেট পেশের দিন আমরা বই পড়ে জানতে পারি। তার ওপর ১০-১৫ মিনিট আলোচনার সুযোগ পাই, কোনো বিষয়ে পরিবর্তন পরিমার্জনের আহŸান জানাই। কিন্তু তা প্রায়ই গ্রহণ করা হয় না।

সরকারদলীয় এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, বাজেটের আগে আমরা তেমন কিছু জানতে পারি না। কেননা, বাজেট নিয়ে এমপিদের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো কোনো বিষয়ে আমরা চিঠি দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে জানাই। তিনি তা নিতেও পারেন আবার নাও নিতে পারেন। এটা একটা গোপনীয় বিষয়। পরে আলোচনায় অংশ নিয়ে মতামত জানানোর সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের মতামতের প্রতিফলন থাকে না। এমপি হাবিবে মিল্লাত ভোরের কাগজকে জানান, বাজেট তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ বেশ কিছু আমলা কাজ করেন। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এখানে মন্ত্রণালয়গুলোর চাহিদা জানতে চাওয়া হলেও সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ এমপিদের কোনো মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। এটা পরিবর্তন প্রয়োজন।

জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, দেশের বাজেট আমলাতান্ত্রিক বাজেট, প্রস্তুতের প্রক্রিয়াটা বদলানো প্রয়োজন। কেননা, বাজেট সাধারণত তৃণমূল থেকে আসা উচিত। মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট হওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এটা মান্ধাতার আমলের এক অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি। সাসংসদ পীর ফজলুর রহমানও বাজেট সম্পর্কে একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছেন, বাজেটে এমপিদের মতামত দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া স্বল্প সময়ে এমপিরা বাজেটের ওপর আলোচনায় যে সংশোধনী বা মতামত দেন তাও গ্রহণ করা হয় না। এ পদ্ধতি বদলিয়ে বাজেট তৈরি আগে এমপিদের নিয়ে অর্থমন্ত্রী বসে তৃণমূল স্তরের চাহিদার বিষয়ে অগ্রাধিকার নিয়ে বাজেট প্রস্তুতের আহ্বান জানান তিনি।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বাজেট তৈরির পদ্ধতিকে অগণতান্ত্রিক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বাজেট চ‚ড়ান্ত করার আগে এমপিদের মতামত নেয়ার সুপারিশ করেন। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন এমপি ও মন্ত্রী জানান, বাজেটের আগে তাদের মতামত না নিলে তৃণমূলের চাহিদা উপেক্ষিত থেকে যাবে। সে কারণে কোনো বাজেট তৈরির আগে এমপিদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান তারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App