×

মুক্তচিন্তা

পূর্ব পাকিস্তানের আকাশে শকুনের ছায়া

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ১২:০৬ এএম

বিদেশি ৬ জন সাংবাদিক পূর্ব পাকিস্তানে আসার শর্তযুক্ত অনুমতি পেয়েছেন। শর্ত : তাদের তত্ত্বাবধায়নে নিযুক্ত থাকবেন পাকিস্তানি কর্মকর্তা। পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আকবর খান বিদেশি সাংবাদিকদের ওপর চটে আছেন। ম্যালকম ডব্লিউ ব্রাউন ২৭ মার্চ ১৯৭১ ঢাকা থেকে বহিষ্কৃত সাংবাদিকদের একজন ছিলেন। অনুমতিপ্রাপ্ত ৬ জনের তিনিও একজন। ১৬ মে ১৯৭১ নিউইয়র্ক টাইমস ঢাকা থেকে পাঠানো তার যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে তার শিরোনাম : পূর্ব পাকিস্তান-আকাশের সেই ছায়াটি শকুনের- একটি জবরদস্ত শকুন। ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান : দেশের পূর্বাঞ্চলে একটার পর একটা দুর্যোগের যে ঘনঘটা তার বিবরণ দিতে গিয়ে ক্লান্ত এক গ্রামবাসী বললেন, ‘আমাদের শকুনগুলো পাকিস্তানে সবচেয়ে ভাগ্যবান। গঙ্গা (পদ্মা) ও শত শত শাখা নদী বিধৌত পূর্ব পাকিস্তান প্রকৃতিগতভাবেই ধান ও পাটের জমিন ও উষ্ণমণ্ডলীয় সুস্বাদু ফলের বাগানে পরিপূর্ণ শ্যামল প্রান্তর। কিন্তু গত এক বছরে ধ্বংসাত্মক বন্যা, তারপর পাঁচ লাখ মানুষকে ভাসিয়ে নেয়া ভয়ঙ্কর সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস (১২ নভেম্বর ১৯৭০) এবং গণযুদ্ধ (বরং বলা যায় ব্যাপক পরিসরে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ) সবকিছু তছনছ করে ফেলেছে। বিদেশি এক পর্যবেক্ষকের হিসাবে পাঁচ লাখ মানুষকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে, হয়তো তাতে অতিরঞ্জন নেই। নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানার কোনো উপায় নেই, কারণ গণনা করার আগেই মৃতদেহ নদীতে নিক্ষেপ করা হয়। বিদেশি বিশেষজ্ঞের মতে, এখন যে পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে দুর্ভিক্ষ এবং কলেরা মহামারি আসন্ন। এত বিপুলসংখ্যক মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরও সীমিত জমির বিপরীতে জনসংখ্যার দানব ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে, সত্তরের নভেম্বরের সাইক্লোনে ভেসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা পূরণ হতে লেগেছে মাত্র ৮৩ দিন (ম্যালকম ব্রাউন প্রতিদিন জন্মগ্রহণকারী শিশুর হিসাব থেকে দিনের এই সংখ্যাটি বের করেছেন)। যত দুর্যোগের মুখোমুখিই হোক তাদের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত এনেছে এই গণযুদ্ধ। অধিকাংশই পাঞ্জাবি সৈন্যের সমন্বয়ে গঠিত পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলার জনগণকে দমিয়ে রাখতে ভয়ঙ্কর নির্মমতায় যখন ঝাঁপিয়ে পড়ল তখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকাতে প্রায় ৪০ জন বিদেশি সাংবাদিক ও ক্রু অবস্থান করছেন। পশ্চিমের ইসলামাবাদ সরকার পূর্বে যা দেখছে বলে দাবি করছে বিদেশি সাংবাদিকরা তার চেয়ে বেশি দেখতে পাচ্ছিলেন বলেই তাদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই প্রদেশটি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৯০০ মাইল দূরে (প্রকৃতপক্ষে ১ হাজার মাইলেরও বেশি) ভারত দু’অংশকে বিভক্ত করে রেখেছে। সাংবাদিকদের নোটবই এবং ক্যামেরার ফিল্ম তারা বাজেয়াপ্ত করেছে। তারপর থেকে অনেক সাংবাদিক চোরাগোপ্তা পথে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তাতে এই ধারণাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, অঞ্চলটি এখন বিদেশি কোনো দখলদার সেনাবাহিনীর বুটের তলায়। সরকার বর্তমান প্রতিবেদক এবং কমিউনিস্ট চীনের একজন সাংবাদিকসহ মোট ৬ জন বিদেশি সাংবাদিককে পূর্বাঞ্চলে আসার অনুমতি দিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি এবং ইসলামাবাদ সরকারের প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে মার্চজুড়ে যে সহিংসতা বিস্তার লাভ করেছে তাতে নারী এবং শিশু কার হাতে প্রথম খুন হয়েছে তা নির্ধারণ করা এখন কঠিন ব্যাপার। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কোনো কোনো গোষ্ঠী যে কিছু সহিংসতা করেছে তাতে তেমন সন্দেহ নেই। এ ধরনের কিছু খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে যেখানে বাঙালিরা শ্রমিক আর তারা তাদের অবাঙালি ফোরম্যানের ওপর ক্রুদ্ধ, বিশেষ করে পাটকল প্রশাসনে। ফোরম্যানদের অনেকেই বিহারি যারা ভারত থেকে আসা মুসলমান অভিবাসী, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরিতে ভালো করেছে আর তা কম সফল স্থানীয়রা ঈর্ষার সঙ্গে বিবেচনা করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে আক্রমণ চালানোর সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এটা ইসলামাবাদ অস্বীকার করছে। কিন্তু বাস্তবে যেসব প্রমাণ ও সাক্ষ্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে তাই প্রমাণ করে সেনাবাহিনী নগরে ও শহরে গোটা আবাসিক এলাকা আগুনে পুড়িয়েছে, জানালা দিয়ে যে উঁকি দিয়েছে তাকেও উঠিয়ে নিয়ে হত্যা করেছে। পুরান ঢাকার ঘরবাড়ি ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছে। যশোরে একজন ইতালিয়ান ধর্মযাজক যখন হাসপাতাল ভবন থেকে বেরোচ্ছিলেন তার গায়ে বন্দুকের নল ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে- তার হাত ওপরে তোলা আর বুকে সাঁটা রেডক্রসের ব্যানার। পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের পথে যত হিন্দু মন্দির ও পবিত্র স্থান পড়েছে সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে, কাছাকাছি পথের দুপাশের ঘরবাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। ‘মুসলিম’ পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হচ্ছে হিন্দু আর তাদের সন্দেহ করা হচ্ছে জন্মশত্রু ভারতের এজেন্ট। তখন থেকেই ঝাড়পোছের কাজও চলছে। ধ্বংসাবশেষ সরানো হচ্ছে, বিদ্রোহীরা যে ব্যারিকেড দিয়েছিল তাও নিশ্চিহ্ন করা হচ্ছে; গ্যাস, টেলিফোন ও বিদ্যুতের লাইন পুনঃসংযোগ করা হচ্ছে। কিছুসংখ্যক মিস্ত্রি এবং সাইনবোর্ড পেইন্টার এনে কিছু মেরামত করা হচ্ছে, মোটামুটি। কিছুসংখ্যক শকুন গুলি করে মাটিতে ফেলা হয়েছে।

বিঘ্নিত জীবন এই অঞ্চলে মানুষের জীবন এখনো বড় বেশি রকম বিঘ্নিত। বিস্ফোরক দিয়ে অন্তত আটটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। একটি সেতু দক্ষিণের নগরী চট্টগ্রাম ও উত্তরের শহরগুলোর একমাত্র সংযোজক। দখলদার সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামত করে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে এক বছর লেগে যাবে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক যে কর্মকাণ্ড- শিল্প খাত, সেবা খাত, বন্দর সুবিধা এবং নগরের ব্যবসা সবকিছুতে আনুমানিক কুড়িভাগ কাজকর্ম হচ্ছে। কেউ কেউ মাঠের কাজে ফিরে গেছে। দশ লাখেরও বেশি- ভারত সরকারের প্রতিনিধির জাতিসংঘে প্রদত্ত হিসাব অনুযায়ী এর মধ্যেই কুড়ি লাখ, দেশ থেকে পালিয়ে নদী ও সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। একজন পাকিস্তানি পণ্ডিত বলেছেন, ‘যাই ঘটুক পূর্ব পাকিস্তান ধ্বংস হয়ে গেছে। স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে এর কোনো গুরুত্বই থাকবে না; স্বাধীন হোক কি পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ- একই কথা। পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পূর্বাংশ ধরে রাখা হবে দুঃসহ অর্থনৈতিক, সামরিক ও সামাজিক বোঝা, তার পরও ধর্মীয় কারণ এবং জাতীয় প্রতিশ্রুতি কারণে আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে ফেলে দিতে পারছি না- সেটাই আমাদের ট্র্যাজেডি, সেটাই আমাদের সমস্যা।

রাজশাহী থেকে ম্যালকম ব্রাউন পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত এবং পাকিস্তানি গাইডের নিয়ন্ত্রণে সফরে বাধ্য ৬ জন সাংবাদিকের একজন ম্যালকম ডব্লিউ ব্রাউন ১০ মে ১৯৭১ রাজশাহী থেকে যে প্রতিবেদন নিউইয়র্ক টাইমসে পাঠালেন এবং সেদিনই প্রকাশিত হলো। ‘বিবমিষাকর হত্যাকাণ্ড’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি অনূদিত হলো : বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ধ্বংসাত্মক অভিযান আপাতদৃষ্টিতে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে বলে মনে করা যায়। এই শহরের লোকসংখ্যা ছিল ১ লাখ। মন্থর গতির গঙ্গার (পদ্মার) কর্দমাক্ত পাড়ে এই শহর- উল্টোদিকে ৩০০০ গজ দূরে ভারত। এ রকম সীমান্ত শহরগুলো ছিল এখন নিষিদ্ধ বিচ্ছিন্নতাকামী আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি; গত ৭ ডিসেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনে এই দল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের মূলত পাঞ্জাবি সৈন্যদের নিয়ে গঠিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মধ্য এপ্রিল নাগাদ সে অভিযান আপাতদৃষ্টিতে গুটিয়ে এনেছে বলে মনে করা যায়। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় শেষ প্রতিরোধও সামলে নিয়েছে, যদিও আর্মি প্যাট্রোলকে মাঝে মাঝেই গুলি চালাতে হচ্ছে- বিভক্ত জাতির পূর্বাংশ এখন সেনাবাহিনীর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণে। এসবের মূল্য এখন অশেষ যন্ত্রণা। সাংবাদিকরা হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া এবং দগ্ধ অবস্থায় দেখেছেন। শহরে কংক্রিটের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে যেখানে ফায়ারিং স্কোয়াড করা হয়েছে শত শত বুলেটের ক্ষতচিহ্ন বহন করছে সে দেয়াল। মৃতদেহ স্তূপ করা হয়েছে- জনব্যবহার্য পুকুরে; নিঃসঙ্গ ও হতশ্রী দশাই ঘটনার নির্মমতার সাক্ষ্য দেয়। এতকিছু কেমন করে ঘটল তার সবই স্পষ্ট নয়- সাক্ষীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও আনুগত্যের ভিন্নতা পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সাক্ষ্য তুলে ধরে। সেনাবাহিনী এবং দেশজুড়ে সৃষ্ট বেসামরিক ‘শান্তি কমিটি’ ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশের জন্য বিদ্রোহীদের এবং সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে আসা ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দায়ী করে। কিন্তু রাস্তায় বাঙালিরা সাংবাদিকদের কাছে ছুটে আসে এবং ফিসফিস করে ঘটনার বিবরণ দিয়ে যায়। শান্তি কমিটির সদস্যদের চোখে পড়ার আগে দ্রুত সরে যায়। সেনাবাহিনী শান্তি কমিটির অধিকাংশ সদস্যকে কিছু পরিমাণ বেসামরিক প্রশাসনের ক্ষমতা দিয়েছে, তারা সবাই মুসলমান বিহারি যারা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান-ভারত ভাগাভাগির সময় ভারত থেকে এসে বসত গেড়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকাংশই বিহারিদের অধিকারে যদিও তারা জনসংখ্যার বিচারে সাধারণ বাঙালিদের তুলনায় মাত্র অল্প ক’জন। কিন্তু এখানে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক হিন্দু সংখ্যালঘু রয়েছে। দরিদ্র অনেক বাঙালির অসন্তোষ এবং সাম্প্রতিক বিচ্ছিন্নতার আন্দোলনে অনেক দ্বন্দ্বের কারণ অপেক্ষাকৃত ধনী বিহারিরা। শত শত সাক্ষাৎকার নেয়ার পর এটা মনে হয়েছে যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় চলে আসছে এই শক্তিবলেই বাঙালিরা তাদের হত্যা করেছে, বাড়ি লুট করেছে এবং তাতে আগুন দিয়েছে। জাতীয় সেনাবাহিনীর বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করল, তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যোগ দেবে। পাঞ্জাবি সৈন্যে পরিপূর্ণ পশ্চিম পাকিস্তান যখন বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল, তাদের মিত্র হওয়ার অপেক্ষায় ছিল বিহারি সম্প্রদায়- তারা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উন্মত্ত হয়েছিল। তারপর তারা যে ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা ছিল বিবমিষা সৃষ্টিকারী। এই সহিংসতার কারণে অধিকাংশ বাঙালি এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের একটি বড় অংশ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এখানে শহরের বড় বাজারের আশপাশের অংশের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ১৪ এপ্রিল শহর অধিকার করার সময় মর্টার আক্রমণ চালানো হয়েছে। অতিরিক্ত সজ্জিত কাঠের ব্যালকনিঅলা পাঁচতলা ভবনগুলোর ওপরের অংশ মর্টার শেলে বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে শহরের বড় অংশই শেল আক্রমণ থেকে মুক্ত ছিল। রাস্তায় আবার বাইসাইকেল, রিকশা নেমেছে, হকাররাও রাস্তা জমিয়ে তুলছে। শহরে পানি, বিদ্যুৎ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি অভিযোগ গ্রহণের জন্য কমপ্লেইন্ট ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযোগ ব্যুরো স্থাপনের বিষয়টি হাস্যকর। কারণ অভিযোগের প্রায় সবই তাদের এবং তাদের বাঙালি অনুচরদের বিরুদ্ধে।

[ম্যালকম ব্রাউন একাত্তরের বাংলাদেশ-বান্ধব সাংবাদিকদের একজন। তিনি আমেরিকান সাংবাদিক লেখক ও ফটোগ্রাফার। তবে তার ব্যাপক পরিচিতি ও খ্যাতি এনে দেয় ১৯৬৩ সালে তোলা বৌদ্ধ পুরোহিত থিক কোয়াঙ দুক-এর আত্মহননের ছবি। এ ছবি ১৯৬৩ সালে তাকে এনে দেয় পুলিৎজার পুরস্কার। তার জন্ম নিউইয়র্ক সিটিতে ১৭ এপ্রিল ১৯১৩। মা ছিলেন যুদ্ধবিরোধী সক্রিয় কর্মী, বাবা রোমান ক্যাথলিক, স্থপতি ছিলেন। প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তিনি মানহাটানের ফ্রেন্ডস সেমিনারিতে পড়াশোনা করেন। তারপর পেনসিলভানিয়ার সোয়ার্থমোর কলেজে রসায়ন শাস্ত্র পাঠ করেন। কোরীয় যুদ্ধের সময় তাকে বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হয়; তাকে ‘স্টার্স অ্যান্ড স্ট্রাইপস’ পত্রিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় সংস্করণে কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। দু’বছর পর তিনি ‘টাইমস হেরাল্ড রেকর্ড’-এ যোগ দেন। তারপর এপিতে (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) যোগ দিয়ে ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত বাল্টিমোর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছর তিনি ইন্দোচীনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখনই আত্মহননের ছবিটি তোলেন। ১৯৬৫-তে এপি ছেড়ে এবিসি টেলিভিশনে যোগ দেন, ফ্লিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেন। তারপর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াশোনা করে ১৯৬৮ সালে আবার সাংবাদিকতায় ফিরে আসেন, নিউইয়র্ক টাইমসের দক্ষিণ আমেরিকার সংবাদাতার দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ছিলেন কেমিস্ট, ১৯৭৭ সালে তিনি বিজ্ঞান বিষয়ে লিখতে শুরু করেন এবং ‘ডিসকভার’ পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সম্পাদক হন। ১৯৮৫-তে টাইমসে যোগ দিয়ে ১৯৯১-এর উপসাগরীয় যুদ্ধের সংবাদদাতা হন। ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘মাডি বুটস এন্ড রেড সকস’। এর আগে ১৯৬৫ সালে প্রকাশ করেন ‘দ্য নিউ ফেইস অব দ্য ওয়ার’। পার্কিনসন’স ডিজিজ ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংকটে ২৭ আগস্ট ২০১২ ম্যালকম ব্রাউন মারা যান।]

ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App