×

অর্থনীতি

জনপ্রত্যাশার চাপে অর্থমন্ত্রী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ০৯:০১ এএম

করোনায় বিপর্যস্ত দেশ, টালমাটাল বিশ্ব। মানুষের জীবন ও জীবিকা- দুটোই অনিশ্চয়তার দোলাচলে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সরকার সবার জন্য টিকার ব্যবস্থাসহ যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হয়েছে দারুণভাবে। এ কারণে লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা এখন হুমকির মুখে। এর মধ্যে আছে প্রকৃতির বিরূপ আচরণ। সবার প্রত্যাশা, সরকার তাদের সুরক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। আর মাত্র চার দিন পর জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গণমানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকারের পরিকল্পনার প্রতিফলন থাকবে বাজেটে। হতদরিদ্র থেকে উচ্চবিত্ত; দিনমজুর থেকে সর্বোচ্চ চাকরিজীবী; ফুটপাতের হকার থেকে শত কোটি টাকার ব্যবসায়ী- সবাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছেন, বাজেটে কী আছে তাদের জন্য। কেউ চান সামাজিক সুরক্ষা, কেউ-বা কর্মসংস্থান; কারো চাওয়া করছাড়-প্রণোদনা। এত সব প্রত্যাশার চাপে হিমশিম অর্থমন্ত্রী। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাউকেই নিরাশ করা হবে না। করোনা মহামারি মোকাবিলার পাশাপাশি আসছে জীবন ও জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে চ্যালেঞ্জের বাজেট। থাকছে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথনির্দেশও। করোনার ক্ষত কাটিয়ে উঠে নতুন করে শুরু করতে আগামী বাজেটে বড় ধরনের করছাড়ের দাবি করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। নতুন করারোপের পরিবর্তে সেবা ও পণ্যে কর-ভ্যাটে ছাড়ের পাশাপাশি নগদ সহায়তাও চেয়েছেন তারা। করোনাকালে সাধারণ জনগণের ওপর করের বোঝা না চাপিয়ে সমাজে যারা বিত্তবান, যাদের আয়-রোজগার ভালো, তাদের কাছ থেকেই বেশি কর আহরণের চেষ্টা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ঘোষণাও দিয়েছেন দেশের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ীসহ সবার স্বার্থ বিবেচনায়

নিয়েই ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দেবেন তিনি। কিন্তু বাজেটে ব্যবসায়ীদের বিপুল ছাড়ের ফিরিস্তি কতটা ‘ব্যবসাবান্ধব’ হবে সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩ জুন পর্যন্ত। তার আগে সব মহলের প্রস্তাব ও দাবি দাওয়া শেষবারের মতো পর্যালোচনা করে দেখছেন অর্থমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতিতে সামগ্রিক উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং সামষ্টিক অর্থনীতিতে মন্দা বিরাজ করায় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরে রাখার পরিকল্পনা করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এদিকে করকাঠামোয় খুব একটা পরিবর্তন আসছে না। জনগণের কাঁধে নতুন করের বোঝা না চাপানোর কৌশল নিয়েছে সরকার। তবে আয়বর্ধক কর্মসূচি হিসেবে করজাল বিস্তৃত করা হবে। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে কমানো হতে পারে করপোরেট কর। এসব নিয়ে এ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। একদিকে সীমিত সম্পদ অন্যদিকে জনগণের বিশাল প্রত্যাশা। এছাড়া পূর্বের প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের চাপও রয়েছে। নতুন করে আরো প্রতিশ্রæতি দিতে হবে। এমন এক কঠিন বাস্তবতায় আগামী ৩ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার হতে পারে ছয় লাখ কোটি টাকার একটু বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটটি অর্থমন্ত্রীর তৃতীয় বাজেট এবং আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদের ত্রয়োদশ বাজেট। বাজেট ঘোষণার দিন এবার অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যও হবে আগের বারের মতো ছোট। তার বাজেট বক্তব্যের প্রতিপাদ্য হওয়ার কথা রয়েছে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’। শেষ মুহূর্তে এর কিছুটা বদলও হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। সূত্র মতে, যেহেতু দেশে করোনার ভ্যাকসিন ব্যাপক হারে প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাই ধরা হচ্ছে করোনা মহামারির পর চাঙ্গা হয়ে উঠবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি। এতে সামনের বছর সরকারের আয় বাড়বে, যদিও এ বছর সরকারের আয় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য চাঙ্গা হলে আয় বাড়বে এমন ইতিবাচক ধারণা নিয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বাজেটের খসড়া রূপরেখায়। তবে বাজেটে এ অঙ্ক এখনো চ‚ড়ান্ত নয়। শেষ মুহূর্তে এসব বাড়তে-কমতে পারে। বাজেট ঘোষণার দিন ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটও সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। তার আগে জাতীয় সংসদ ভবনে বসবে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক। প্রতি বছরই বাজেট পেশ করার আগে মন্ত্রিসভার এ বিশেষ বৈঠক হয়ে আসছে। বাজেট নিয়ে মানুষের রয়েছে যেমন গগণচুম্বি আশা-আকাক্সক্ষা, পাশাপাশি কাজ করে তেমন আশঙ্কাও। বাজেটকে সুষম, গণমুখী, বাণিজ্যবান্ধব করতে প্রতি বছরই বিভিন্ন পর্যায়ের করদাতা, বিভিন্ন শিল্প ও বণিক সমিতি, পেশাজীবী সংগঠন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও দেশের বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে এনবিআর। করোনার অতিমারির মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সংগঠন ও অর্থনীতিবিদদের কাছে প্রস্তাবনা চায় এনবিআর। এমসিসিআই, ডিসিসিআই, সিপিডিসহ ১২০টির অধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে করছাড়ের এসব প্রস্তাব দেয়। তবে রাজস্ব খাতে সংস্কারের মাধ্যমে করের পরিধি বাড়াতেও পরামর্শ দিয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। করপোরেট করহার কমানো, ন্যূনতম করের বিধান প্রত্যাহার, ভ্যাটে সব ক্ষেত্রে রিফান্ড প্রদান, কোম্পানির প্রমোশনাল ব্যয়ের সীমা তুলে দেয়া, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, নতুন শিল্প স্থাপনে কর অবকাশ ?সুবিধাসহ বিপুল ছাড়ের এসব প্রস্তাব এরই মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দিয়েছেন সব পর্যায়ের ব্যবসায়ী। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন করে করারোপ না করেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার পরিকল্পনা করতে হবে সরকারকে। এজন্য রাজস্ব বাড়াতে হবে। সবার আগে এনবিআরের ভিত্তি মজবুত করতে হবে। তবে ব্যবসায়ীদের এ বিপুল ছাড়ের সব দাবি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, করোনার মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানুষের হাতে টাকা দেয়া। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প এবং অনুন্নয়ন ব্যয় বন্ধ হলে মানুষের হাতে টাকা থাকবে না। ফলে সংকট তৈরি হবে। এর সমাধানেই এনবিআরকে বেশি করে আয় করতে হবে। এনবিআরের আয় বাড়াতে হলে বেশি ছাড়ের সুযোগ নেই। করপোরেট করে ছাড়ের আবেদন : প্রতিযোগী যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করপোরেট করহার বেশি। করোনার এ সময়ে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিতে ও নতুন করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে করপোরেট করহার আগামী দুই বছরে ৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব করেছে সরকারের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষসহ প্রায় সব ব্যবসায়ী সংগঠন। বিডার পরিচালক মো. আরিফুল হক বলেন, প্রতিযোগী দেশের তুলনায় করহার বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। স্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। করোনার এ সময়ে এটি বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি। করপোরেট করে ছাড় দেয়ার দাবি করে এনবিআরে দেয়া প্রস্তাবে বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি রূপালী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে আটটি ক্যাটাগরির কোম্পানির কাছ থেকে ২৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত করপোরেট কর আদায় করা হয়। অন্যদিকে এসএমইর জন্য করপোরেট ট্যাক্স ১০ শতাংশ হারে নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। করপোরেট করের ক্ষেত্রে ছাড় চেয়েছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই)। ন্যূনতম কর প্রত্যাহার : করপোরেট করের বাইরে ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় দাবি লোকসানি কোম্পানির জন্য ন্যুনমত করের বিধান প্রত্যাহার। বর্তমানে কোনো কোম্পানিকে লোকসান দেখালেও টার্নওভারের ওপর ২ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এটিকে বৈষম্যমূলক বলছে মেট্রোপলিটন চেম্বার্স। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে দেশে নিবন্ধন দেয়া ১ লাখ ৪৬ হাজার কোম্পানির মধ্যে বড় অংশই লোকসানি কোম্পানি। এ অবস্থায় মুনাফা না করে কর দেয়াটা সবার জন্য বোঝাস্বরূপ। বিডার নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের একটা বাঁধা লোকসানি হলেও ‘ন্যূনতম কর’ দিতে হয়। এ বিষয়টি পরিবর্তন হওয়া দরকার। টার্নওভার ট্যাক্স ফ্রি লিমিট ৫০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব : খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে বর্তমানে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রির ওপর টার্নওভার ট্যাক্স দিতে হয় না। যে কোনো দোকানদারের বার্ষিক বিক্রি ৩০ লাখ টাকা থেকে ৮০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে মোট বিক্রির ওপর ৪ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হয়। মূল্য সংযোজন কর বাবদ এ ট্যাক্স আদায় করে এনবিআর। ৮০ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হলেই ওই প্রতিষ্ঠানকে পণ্যভেদে ভ্যাট দিতে হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ছাড় দিতে আগামী বাজেটে টার্নওভার ট্যাক্সের এ সীমা ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন ছাড়াও নিজেদের কয়েক লাখ উদ্যোক্তার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে জোর দিয়ে বলছে এসএমই ফাউন্ডেশন। একই দাবি করেছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিও। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছেন যাদের পণ্য বিক্রির পর ৪ শতাংশ মুনাফা হয় না। সেখানে ৪ শতাংশ হারে ট্যাক্স পরিশোধ করে টিকে থাকা অসম্ভব। তাছাড়া এত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হিসাব সংরক্ষণও অনেক বড় দুর্ভোগ। তিন শতাধিক ছাড়ের প্রস্তাব এমসিসিআই, ডিসিসিআই ও বিসিআইর : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিআই) এবং চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) সঙ্গে বাজেট আলোচনা শেষ করেছে এনবিআর। করপোরেট করহার ও ন্যূনতম কর প্রত্যাহারের দাবি ছাড়াও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন, কোম্পানির আরএনডি খাতে অন্তত ৫ শতাংশ ব্যয় করমুক্ত রাখা, ডিভিডেন্ট করহার ১০ শতাংশ কমানো, রিফান্ড প্রদানের সময় ১ মাস করা, ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে করহার ১ শতাংশ করা এবং পুঁজিবাজারে গ্রিনফিল্ড অবকাঠামো বিনিয়োগের ৫ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দাবি করেছে বাংলাদেশ চেম্বার্স। বিসিআইয়ের মতো আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে শতাধিক সংস্কার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই। করপোরেটর ডিভিডেন্ডের আয়ের ওপর বিদ্যমান ২০ শতাংশ কর অর্ধেকে নামিয়ে ১০ শতাংশ করা, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হলে তাতে কর সুবিধা দেয়া, ব্যবসায়ীদের তিন কোটি টাকার উপরে মোট আয়ের ওপর বাধ্যতামূলক ০ দশমিক ৫ শতাংশ কর অর্ধেক কমানো, ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, পুরো আয়কর ব্যবস্থাকে অনলাইনের আওতায় আনার প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। ছাড় চান ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের উদ্যোক্তারা : বড় চেম্বারগুলো থেকে সামগ্রিক বিজনেস পলিসির জন্য ছাড় চাওয়া হলেও নিজেদের ব্যবসার জন্য ভিন্ন ছাড়ের প্রস্তাব করেছে উৎপাদন বা শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন তথা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। এর মধ্যে রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে নগদ সহায়তার পাশাপাশি উৎসে করহার দশমিক ২৫ রাখার দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ। বিপুল ক্ষতির কথা জানিয়ে টিকে থাকতে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে সব প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারণ বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার দাবি জানিয়েছেন চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা। এনবিআরের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে মোবাইল উৎপাদনে বিদ্যমান করছাড়ের সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করেছেন মোবাইল আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোটার্স এসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুবও। টিভি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও কেবিনেটে শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সোহেল খান। বিদ্যুতের কাজে ব্যবহৃত পণ্য নিত্যপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে বেশ কয়েকটি যন্ত্রপাতি আমদানিতে করছাড় চেয়েছেন বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাত হোসেন। মোবাইল ফোনের সিমের ওপর আরোপিত ২০০ টাকার কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের সংগঠন (অ্যামটব)। সংবাদপত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিলেও অন্যান্য শিল্পের ন্যায় এ খাত সুবিধা পাচ্ছে না জানিয়ে কাঁচামাল হিসেবে নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি করেছে পত্রিকা মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। এছাড়া প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং শিল্পের ওপর থেকে আয়কর প্রত্যাহার, রপ্তানিমূল্যের ওপর অগ্রিম আয়কর কমানো, কাঁচামাল আমদানির ওপর থেকে অগ্রিম মূসকের মতো অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে প্লাস্টিক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকরা। করোনার সময় লোকসান বিবেচনায় নিয়ে এসি বাস ও লঞ্চের বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির দাবি করেছে উভয় খাতের ব্যবসায়ীরা। এছাড়া টায়ার আমদানিতে শুল্কহার কমানো, অবৈধ থ্রি-হুইলার আমদানি বন্ধসহ আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক খাতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে তারা। নগদ ২০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ ছাড়াও আগামী এক বছর নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিউটি পার্লার, ফুড ও দেশীয় পণ্য বিক্রির ব্যবসায় ভ্যাট ৪ শতাংশ নির্ধারণসহ ১০টি কর সুবিধা চেয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৩ শতাংশ ‘অসমন্বয়যোগ্য’ অগ্রিম আয়কর এবং সরবরাহের ওপর ৩ শতাংশ কর প্রত্যাহার চেয়েছে সিমেন্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হোসেন সাধারণ হোটেল-রেস্তোরাঁয় সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেন। বিশ্বব্যাপী মোটরযানে জ্বালানির ব্যবহার কমে আসছে উল্লেখ করে দেশে ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানিতে কর অব্যাহতির সুযোগ চেয়েছে দেশে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলার্স এসোসিয়েশন (বারভিডা)। দেশে উৎপাদিত টাইলস ও স্যানিটারি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন দেশের সিরামিকস পণ্য উৎপাদনকারীরা। সিরামিক উৎপাদনের জন্য আমদানিকৃত কাঁচামালের শুল্ক অনেক বেশি উল্লেখ করে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অলাভজনক সংস্থা হিসেবে এ খাতের আয়ের ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি এম এ মুবিন খান। এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি জানানোর সুযোগ না থাকলেও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও কম নয়। তাদের এসব দাবি উঠে আসে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। সংসদস্যরা বাজেট আলোচনায় নিজ নিজ এলাকার জনগণের হয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে এসব দাবি তুলে ধরেন। বিশেষত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখা, সড়ক-সেতু, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা- এই শত প্রত্যাশা পূরণের চ্যালেঞ্জ উৎরাতে অর্থমন্ত্রী তার আস্তিনের ভেতর থেকে কী ম্যাজিক বের করেন তাই এখন দেখার বিষয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App