×

মুক্তচিন্তা

ক্রয়-বিক্রয়ের ঘেরাটোপে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ১২:০৬ এএম

আমাদের সমাজে সবার উচ্চাকাক্সক্ষা থাকবে। সেটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উন্নত জীবনের তাগিদে নানা পথে অগ্রসর হবে- তাতেও আপত্তির কারণ নেই। নিঃস্ব-রিক্ত কেউ কেউ আকস্মিক অর্থবিত্তের মালিক হবেন- সৌভাগ্যের দোহাই দিয়ে তাও নির্বিঘ্নে মেনে নিই। শ্রেণি উত্তরণের যে প্রতিযোগিতা সমাজে বিদ্যমান, সেটাও সমাজের স্বাভাবিক ধারা হিসেবেই গণ্য করে থাকি। ডাক্তার, প্রকৌশলী, উকিল-ব্যারিস্টার, সরকারি আমলা-চাকুরে, ব্যাংকার, বেসরকারি চাকুরেসহ সব পেশাজীবী পেশার বদৌলতে বিত্তবান-বিত্তশালী হবেন। সেটাও অস্বাভাবিক বলে বিবেচনা করি না। অথচ শিক্ষকদের বেলায় আমাদের যত আপত্তি। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করে থাকি। আমাদের প্রাচীন ভাবনায় শিক্ষকরা সৎ, নির্লোভ, নির্মোহ এবং অত্যন্ত সাদামাটা অতি সাধারণ জীবনযাপন করবেন। তাদের উচ্চাকাক্সক্ষা থাকতে নেই। তারা আর্থিক অনটনের মধ্যেই থাকবেন এবং মানবেতর জীবনযাপন করবেন। তাদের কষ্টে আমরা বড়জোর দুঃখিত হবো। এর বেশি কিছু নয়। তারা খেয়ে না খেয়ে আমাদের বিদ্যা বিতরণ করবেন। সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য তারা আমাদের যোগ্যরূপে গড়ে তুলবেন। আমরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবো। কিন্তু শিক্ষকরা হতদরিদ্র মানবেতর জীবনে আটকে থাকবেন। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাচীন ধারণা এরূপই বটে। আর শিক্ষকরাও ছিলেন অমনই। তখনকার বাস্তবতায় আমাদের শিক্ষকরা জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে নিজেরা অন্ধকারেই রয়ে যেতেন। এখন সময় পাল্টেছে। শিক্ষকরা আর পূর্বের অবস্থানে মোটেও নেই। তাদের শিক্ষাদান স্থানভেদে ভিন্নতর। প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে যেমন-শ্রেণিকক্ষে মোটেও তেমন নন। শিক্ষকরা সঙ্গত কারণেই নির্লোভ-নির্মোহ এখন আর নেই। দেশে শিক্ষার অবাধ বাণিজ্যিকীকরণে শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে শিক্ষা বাণিজ্যের মুনাফার সর্বোচ্চ ভোগী শিক্ষার বণিকরা। শিক্ষার বাণিজ্যে শিক্ষকও বাণিজ্যের উপাদানে পরিণত। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা মানসম্মত বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি-বেতন অত্যধিক। আর্থিকভাবে সচ্ছল যারা তাদের সন্তানদের পক্ষেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার উপায় আছে। সাধারণের পক্ষে নয়। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তুলনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ন্যূনতম পাঁচগুণ বেশি। দেশের শহরগুলোর শ্রেষ্ঠ স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিংয়ের জন্য শিক্ষার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও কোচিং করিয়ে শিক্ষকরা যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে থাকেন তা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। ভালো স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের আর্থিক রমরমা অবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুখ্যাতির কারণে তাদের পেছনে ছোটে শিক্ষার্থী-অভিভাবক। প্রত্যেকটি বিষয়ের আলাদা-আলাদা কোচিং। অর্থাৎ প্রতি বিষয়ের পেছনে আলাদা আলাদা অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন অভিভাবকরা। সম্প্রতি সরকার কোচিং সেন্টারগুলোতে শিক্ষকদের পাঠদানে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ জনের অধিক শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়ানো যাবে না। তবে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারে নির্বিঘ্নে পড়াতে পারবেন। এতে কোচিং সেন্টার নামক শিক্ষা বাণিজ্যকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। শিক্ষকদের কোচিং সেন্টার এবং প্রাইভেট পড়ানো থেকে বিরত রাখার একমাত্র পথটি হচ্ছে তাদের বেতন-ভাতা সম্মানজনক এবং মানসম্মত নিশ্চিত করে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টারে পাঠদান স্থায়ীরূপে বন্ধ করা। এছাড়া অন্য কোনোভাবে প্রাইভেট এবং কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করা যাবে না এবং সেটা মানবিকও হবে না। আমাদের শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে যথার্থ শিক্ষাদান করেন না বলেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষার ঘাটতি রয়ে যায়। সেই ঘাটতি পূরণেই অভিভাবকরা নিজ নিজ সন্তানদের নিয়ে ছোটেন প্রাইভেট ও কোচিং সেন্টার অভিমুখে। সন্তানের ভালো ফলাফলের জন্য তারা বাধ্য হয়ে কোচিং নির্ভর হয়েছেন। কোচিং সেন্টারে এবং প্রাইভেট পড়ানোর কারণে শিক্ষার্থীদের নিশ্চয় ভালো ফলাফল হয়ে থাকে। নয়তো অভিভাবকদের অধিক মাত্রায় তা আকৃষ্ট করবে কেন? শিক্ষকরা যদি শ্রেণিকক্ষে যথার্থ পাঠদান করতেন তাহলে নিশ্চয় কোচিং ব্যবসার এমন রমরমা হাল আমাদের দেখতে হতো না। এ দায় থেকে শিক্ষকদের অব্যাহতির সুযোগ নেই। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেয় কিন্তু সব শিক্ষার্থীর পরীক্ষার উপযোগী করে শিক্ষাদান করেন না বলেই বাধ্য হয়ে তাদের ছুটতে হয় কোচিং সেন্টারে। প্রাচীন বা অতীতের শিক্ষকদের অঙ্গীকারের ধারণা আমরা পাই। যা বর্তমানের শিক্ষকদের মধ্যে বড়ই দুর্লভ। জাতি গঠনে শিক্ষকদের অঙ্গীকার নেই। হরেক পেশার মতো শিক্ষকতা এখন কেবলই অর্থ উপার্জনের পেশায় পরিণত। শিক্ষা এবং চিকিৎসা রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে সব নাগরিকের জন্য নিশ্চিত হবে। স্বাধীন দেশে সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু তা হয়নি। কেন হয়নি তাও আমরা কম-বেশি সবাই জানি। আমাদের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ে আমরা ভূখণ্ডের স্বাধীনতা পেয়েছি। সবার স্বাধীনতা আসেনি। মুষ্টিমেয় লোক কতিপয় স্বাধীনতার সুফলভোগী হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জন্য এই স্বাধীনতা অর্থপূর্ণ হয়নি। সে কারণে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের শিক্ষা-চিকিৎসাসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ-মানবিক হলেও রাষ্ট্র সে দায় থেকে দায়মুক্তি নিয়েছে। শিক্ষা এবং চিকিৎসাসেবাকে অবাধ বাণিজ্যিকীকরণে দেশে এখন সবচেয়ে ব্যয়াধিক্য শিক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা। যাদের অর্থ আছে তারাই কেবল সে সুযোগ ভোগ করতে পারছে। দেশে বিশ্বমানের অনেক বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও মোট জনসমষ্টির ১০ ভাগ মানুষ সেখান থেকে চিকিৎসাসেবা ক্রয়ে সামর্থ্য রাখে। বাকি ৯০ ভাগের পক্ষে অসম্ভব। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শিক্ষা এবং চিকিৎসাবঞ্চিত। হেকিম-কবিরাজের পথ্য, পীর-ফকিরের দোয়া-তাবিজ নিয়ে বিনে চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করছে। সরকারি হাসপাতাল জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। সেখানে ডাক্তার-নার্স আছেন সত্য, তবে তাদের থেকে রোগীরা যথার্থ সেবা পায় না। এমনকি হাসপাতালে বিনামূল্যে রোগীর ওষুধও থাকে না। রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষার সুযোগও নেই। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে রোগের পরীক্ষার জন্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অধিক অর্থ ব্যয়ের সঙ্গতি সাধারণের নেই। নেই লম্বা তালিকার ওষুধ ক্রয়ের সামর্থ্যও। এসব কারণে সরকারি হাসপাতালগুলো সর্বসাধারণের চিকিৎসায় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষকরা প্রাইভেট এবং কোচিং সেন্টারে পাঠদান করেন বলে তাদের তীব্র সমালোচনা আমরা করে থাকি। অথচ আমাদের ডাক্তাররা সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্রাইভেট প্রাকটিস করেন। ক্লিনিক ব্যবসার অপরিহার্য উপাদান স্বরূপ ক্লিনিকে রোগী দেখেন। শল্য চিকিৎসা করেন। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নিঃসঙ্কোচে কমিশন গ্রহণ করেন। এসব বিষয় ওপেন-সিক্রেট। আমাদের সবার তা জানা। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে টুঁ শব্দ করি না। জনগণের অর্থের সরকারি মেডিকেল কলেজে নামমাত্র বেতনে শিক্ষালাভ শেষে জনগণের প্রতি তাদের ন্যূনতম দায়বদ্ধতা নেই। একেকজন ডাক্তার অর্থের পেছনেই বিরামহীন ছোটেন। অর্থ উপার্জনই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে তবে সংখ্যায় অতি নগণ্য। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা অর্থ উপার্জনের যান্ত্রিক মেশিন বিশেষ। তাদের সাক্ষাৎ পেতে মাসাধিকাল অপেক্ষার পর সিরিয়াল পাওয়া যায়। ততদিন রোগীর বাঁচা-মরা সম্পূর্ণরূপে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিদিন তারা অর্ধশত রোগী দেখে যে পরিমাণ ফিস আদায় করেন তা সরকারি হাসপাতালে তিন মাসের বেতনের সমান। এছাড়া রোগীমাত্রই রোগের পরীক্ষার জন্য তারা লম্বা তালিকা ধরিয়ে দেন। সেসব পরীক্ষা তাদের মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করা ছাড়া অন্যত্র থেকে করানো চলবে না। প্রতিটি পরীক্ষার বিপরীতে তাদের কমিশন নিশ্চিত বলেই মনোনীত ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করাতে রোগীদের বাধ্য করা হয়। সরকারি হাসপাতালে অপারেশনের জন্য দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু ডাক্তারদের মনোনীত ক্লিনিকে তাৎক্ষণিক অপারেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত। তবে অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষে। আমাদের ডাক্তাররা সেবামূলক পেশার বিপরীতে অর্থ উপার্জনে এবং রাজনীতিতে অধিক মনোযোগী এবং সক্রিয়। শাসক দুই প্রধান দলে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে আছেন। দ্বিদলীয় রাজনৈতিক বিভক্তির অনুরূপ ডাক্তারদের পৃথক দুই সংগঠন। যার একটি অপরটির প্রবল প্রতিপক্ষ। শাসক দুই দলের যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের সমর্থক ডাক্তারদের সংগঠনটি সক্রিয় হয়ে ওঠে বদলি-পদোন্নতি বাণিজ্যে। দেশপ্রেমের স্থলে দলপ্রেম এবং জনপ্রেমের স্থলে অর্থপ্রেমের দৃষ্টান্তই তারা দিয়ে চলেছেন। তাদের থেকে সেবা পাওয়া যায় না। সেবা ক্রয় করতে হয়। ক্রয়-বিক্রয়ের ঘেরাটোপে মানবিক পেশাটি মোটেও মানবিক থাকেনি। হয়ে পড়েছে চরমভাবে বাণিজ্যিক। আমাদের সমাজ বাস্তবতায় নানা ক্ষেত্রে ব্যক্তির উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সমষ্টির নয়। ব্যক্তির উন্নতি সব ক্ষেত্রে আমরা দেখছি কিন্তু সমষ্টির অবনতি ছাড়া উন্নতির লক্ষণ দেখছি না। সমষ্টিকে পরাস্ত করেই ব্যক্তির উন্নতি সম্ভব। সে কারণেই সমষ্টিগত মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। বর্তমান ব্যবস্থা বহাল থাকাবস্থায় ব্যক্তির নজরকাড়া উন্নতি আমরা দেখব এবং একইভাবে দেখব সমষ্টির নিষ্ঠুর পরিণতি। আমাদের অতীতের ভিনদেশি শাসকদের আদলে স্বদেশী শাসকরা অভিন্ন পথ ও মতের অনুসারী। সে পথে সমষ্টিগত মানুষের মুক্তির উপায় নেই। সে কারণেই শিক্ষা যেমন সঙ্কুচিত হয়ে নির্দিষ্ট শ্রেণিতে সীমাবদ্ধ অনুরূপ চিকিৎসাও। রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা নির্লিপ্ত। অথচ স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার গণমুখী হবে, সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। অথচ অতীতের মতো রাষ্ট্র ও সরকার গণবিরোধীরূপেই দৃশ্যমান। শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রমেই সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমান ব্যবস্থা বহাল থাকলে অবস্থা আরো শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছুবে। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন ব্যবস্থার পরিবর্তন। ব্যবস্থাটির নাম পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার শিকার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা। আমাদের সমাজ জীবনে যার প্রভাব মাত্রাতিরিক্ত বলেই আমাদের সামগ্রিক দুর্ভোগ-দুর্দশা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ছাড়া সবার জন্য শিক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের উপায় নেই।

মযহারুল ইসলাম বাবলা : নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App