×

সারাদেশ

ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে প্রায় ৩ শতাধিক বিঘা জমির ধান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২১, ১০:৫৫ পিএম

ইটভাটার ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে প্রায় ৩ শতাধিক বিঘা জমির ধান

ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পুড়ে গেছে চলতি মৌসুমের ৩ শতাধিক বিঘার জমির পাঁকা ধান

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে গেছে চলতি মৌসুমের ৩ শতাধিক বিঘার জমির পাঁকা ধান। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠেছে আকাশ। ধানি জমির পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠায় বিগত বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতির শিকার হন বলে ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করেন।

সরেজমিনে গত শুক্রবার (২৮ মে) বিকেলে চান্দহর ইউনিয়নের রিফাইয়েতপুর-চালিতাপাড়া চকে গিয়ে দেখা যায়, এমবিএম ও মেসার্স সার্ক কোম্পানীর ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় কৃষকের শত শত জমির পাঁকা-আধা পাঁকা ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ দু‘টি ছাড়াও ওই চকটিতে গড়ে ওঠেছে ৭-৮টি  ইটভাটা। এসব ভাটাগুলোর কারণে এমন ক্ষতির শিকার হয়েছেন বলে কৃষকেরা অভিযোগ করেন। ক্ষেতে ফলন হওয়া পাকা ধান নষ্ট হওয়ায় অনেক কৃষককে আহাজারি করতে দেখা যায়।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই চকের প্রজেক্ট মালিক আনোয়ার মাতবরের ৪৯ বিঘা, ইসলামের ১১ বিঘা, আব্দুল হকের ২৫ বিঘা, মুজিবুর রহমানের ১৬ বিঘা, শাহজাহানের ৮ বিঘা, রফিক সিকদারের ৫ বিঘা, নবু সিকদারের ৯ বিঘা, ও আনছার আলীর ৮ বিঘা ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাদের সারা বছরের খাদ্য জোগানোর এ ধান নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বেদনার নীল সাগরে ভাসছেন। ভবিষ্যতে যেন এমন পরিস্থিতির শিকার না হন সে জন্য ফসল ও পরিবেশ হননকারী ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানান তারা।

ভুক্তভোগী কৃষক আক্কাছ মেম্বার, জনাব আলী, মনির মাষ্টার, মজিবুর রহমান, কলিমুদ্দিন মিয়া, ও আব্দুর রশিদ মোল্লাহ জানান, পরিবারের খাদ্য যোগান দিতে ধান চাষ করে জমির পাশে গড়ে ওঠা ইটভাটার কারণে প্রতি বছর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন তারা। কখন যেন ভাটার ধোঁয়ায় ধান সর্বনাশ হয়ে যায়। পাশাপাশি মাটি খেকোদের কাছ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ফসলি জমির মালিকেরা। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভাটা মালিকেরা ও মাটি ব্যবসায়িরা দাপটের সাথে তাদের জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই।

এদিকে,উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের চাপরাইল হাতনী ও জামির্ত্তা চকের একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে গড়ে ওঠা ৪টি ইটভাটার ধোঁয়ায় প্রজেক্ট মালিক আছিয়া বেগমের ৯ বিঘা, আব্দুল মালেকের ৪০ বিঘা, আপলের ৪২ বিঘা,  রুপকুমারের ৪৫ বিঘা,  ইউসুফ আলীর ৪৫ বিঘা, আব্দুর রহিমের ৪০ বিঘা, করম আলীর ২৫ বিঘা, আজিমুদ্দিনের ৩৫ বিঘা . সেলিম মিয়ার ৩০ বিঘা, ও ভুট্টো মিয়ার ২৬ বিঘা ধান সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় আবু সায়েম অভিযোগ করে বলেন, ফসল জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটা বন্ধ না হলে কৃষকদের সারা বছরের আহার এভাবে জমিতেই ফেলে রেখে যেতে হবে। মহামারিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচাও তাদের জন্য দায়ী হয়ে পড়বে।

এ প্রসঙ্গে চান্দহর ইউনিয়নের রিফাইয়েতপুর চকের মেসার্স সার্ক ইটভাটার মালিক ফরিদ হোসেন বলেন, আমাদের ভাটার বন্ধের আগের দিন এমবিএম ভাটা বন্ধ হয়। বন্ধের আগে নির্গত ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট হতে পারে। তবে নষ্ট হওয়া কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে আমার পক্ষ থেকে কোন আপত্তি নেই। অপরদিকে,  জামির্ত্তা চকের ভাটা মালিকরা কৃষকদের ক্ষতির ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি ।

চান্দহর ইউনিয়নের মাধবপুর ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মনির হোসেন বলেন, ইটভাটার ধোঁয়ায় আবাদি জমির ৪০ ভাগ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। ফসলি জমি থেকে ইটভাটা বন্ধ না হলে প্রতি মৌসুমে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে কৃষকদের। দেখা দিবে খাদ্য খাটতি। আমি বিষষটি লিখিতভাবে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রনোদনা দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুনা লায়লা বলেন, আমি বিষয়টি অবগত। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতি গ্রস্ত কৃষকদের তালিকার কাজ চলছে। তালিকা অনুযায়ী জেলায় পাঠিয়ে অবশ্যই ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। পাশাপাশি ওই ইটভাটাগুলো চলবে কি না সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App