×

শিক্ষা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ১২:২৭ পিএম

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ২০০৬ সালের ২৮ মে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। শালবন বিহারের কোল ঘেঁষে লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে সাতটি বিভাগ নিয়ে ২০০৭ সালের ২৮ মে স্বল্প পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়টি অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে মোট ১৯টি বিভাগ নিয়মিত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেখানে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পাহাড়ে ঘেরা এই অঞ্চলটির জ্ঞানচর্চার ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রাচীন সমতট নামে পরিচিত এই কুমিল্লা অঞ্চল সবসময়ই ছিলো নুতন জ্ঞান সৃষ্টি এবং বিতরণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। বিশেষ করে এই লালমাই-ময়নামতি অঞ্চলের জ্ঞান চর্চার উদাহরণ সারাবিশ্বেই ব্যাপক সমাদৃত। ইতিহাস বলে, বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ৬৩৮ সালে ময়নামতিতে আসার পর তিনি শুধু ময়নামতিতেই ৩৫টি শিক্ষাকেন্দ্রের দেখা পান। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে রাজা ভবদেব এই অঞ্চলের মানুষের জ্ঞান চর্চার জন্য গড়ে তোলেন শালবন বিহার। যা পরবর্তীকালে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশের যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় তার মধ্যে একটি। লাল পাহাড়ের কোল ঘেষে গড়ে ওঠায় প্রকৃতিপ্রেমী অসংখ্য পর্যটকদের পছন্দের তালিকায়ও প্রথম দিকেই থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বছরের প্রায় পুরো সময় জুড়েই এখানে প্রকৃতি তার সৌন্দর্য বিলাতে থাকে আপন মনে। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে নানা বাহারি ফুলের সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। যেমন শরতের কালে কাশফুলের রাজ্যে পরিণত হয় মায়াবী এই ক্যাম্পাসের আঙ্গিনা। সাদা ফুলের রাজ্যে পরিণত হয় তখন পুরো আঙ্গিনা। শরতের বিকালে নীল আকাশের নিচে দোলা খায় শুভ্র কাশফুল। যেন তরতর করে আপন সৌন্দর্যে প্রিয়জনদের আহ্বান করে। কাশবনের ফুলগুলো যেন দোল খায় একটির সঙ্গে আরেকটি। এ সময় অজান্তেই মানুষের মনে ভিন্ন রকম আনন্দের ঝিলিক বয়ে যায়। কবি জীবনন্দ দাশ শরতের সৌন্দর্যে আপ্লুত হয়ে বলেছেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যাই না আর। শরতের এই অপরূপ রুপ দেখে মুগ্ধ কবি অবলীলায় পৃথিবীকে আর দেখার প্রয়োজন নেই সিদ্ধান্ত নেন। আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় গনগনে সূর্যটা বুকে নিয়ে তখন আকাশের রং শান্ত নীল। শরতের শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ে সবুজ ঘাসের বনে। ক্যাম্পাস জুড়ে মায়া বিলায় তখন কাশফুল। রোদের ঝলকানির পাশেই মেঘের ছায়া। মেঘ ও রোদের লুকোচুরি খেলায় বৃষ্টিও অংশ নিচ্ছে। এমন দিনে আপনাকে স্বাগত জানাতে কাশফুল শুভ্র ডালি সাজিয়ে বসে থাকে। নাগরিক ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় করে যে কেউ ঘুরে আসতে পারে কাশফুলের রাজ্য থেকে। এমনি পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরুপ মোহনীয় শক্তি আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকৃতির নানা ধরনের উদ্ভিদ ও ভালোলাগার বিভিন্ন ধরনের ফুলের সমারোহ থাকে এখানে। এত গেল শরত এবং কাশফুলের মায়াময় সৌন্দর্যের কথা। তবে কৃষ্ণচূড়া ফুল কার না প্রিয়! কত গান, কবিতা, কত গল্প এই কৃষ্ণচূড়াকে ঘিরে! সবুজ পাতায় ঘেরা এই ফুলের লাল রং সবাইকে মাত করে রাখে। বৈশাখে এলে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে প্রকৃতিকে সাজিয়ে তোলে আপন মহিমায়। গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে একটু স্বস্তি দিতেই যেন প্রকৃতির এই আয়োজন। তাইতো কৃষ্ণচূড়া গাছ রঙিন সাজে সাজিয়ে নেয় কুবি ক্যাম্পাসকে। বৈশাখের শুরুতে ফুল ফুটতে শুরু করে গাছগুলোতে। পুরো গাছগুলো জুড়ে লাল ফুলের সমারোহ। লাল রঙের ফুল ঢেকে দেয় গাছের সবুজ পাতাগুলোকে। কৃষ্ণচূড়া ফুলের সৌন্দর্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য রকম শোভাবর্ধন করে তুলে। ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ পথিক, ভুলে যায় তার ক্লান্তি। গ্রীষ্মের ঘামঝরা দুপুরে কৃষ্ণচূড়ার ছায়া যেন প্রশান্তি এনে দেয় অবসন্ন পথিকের মনে। তাপদাহে ওষ্ঠাগত পথচারীরা পুলকিত নয়নে, অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করেন এই সৌন্দর্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার ভূমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় মুহুর্তেই ভালোবাসা কেড়ে নিবে যে কারোর। প্রকৃতির কথা বললে তার সাথে নতুন সৌন্দর্য এনে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শিল্পী হাশেম খান ও পরবর্তিতে শিল্পী রবিউল হোসাইনের যৌথকর্মে শহীদ মিনারটি কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশেই ২০১৩ সালে নির্মাণ করা হয়। তবে এই শহীদ মিনারের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর পর্যটকদের আনাগোনা থাকে এই ক্যাম্পাসে। বাংলা অক্ষর খচিত এই মিনারটি সহজেই মনে করিয়ে দিবে একুশ এবং মাতৃভাষার কথা। আহ্বান করে যেন ভাষার সুউচ্চ মর্যাদার কথা বলে যায় এটি। সর্বপরি, লাল পাহাড়ে সবুজ বৃক্ষবেষ্টিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে উঁচু-নিচু টিলা, আর আঁকাবাঁকা পথ। চারদিক সবুজের সমারোহ। দেখা মেলে শিয়ালসহ নানা প্রজাতির বন্য প্রাণী। মাঝে মাঝে সাপ ও অন্যান্য সরীসৃপেরও দেখা মেলে। টিলার ফাঁকে ফাঁকে সুউচ্চ দালান এবং ঐতিহাসিক ভাস্কর্য। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে পুরো প্রাঙ্গণ। যেন ছবির মতো সাজানো একটি বাগানবাড়ি। কুমিল্লা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান। কোন এক অবসর দিনে তাই আপনাকে আহ্বান জানাবে প্রিয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। আজ তার ১৬ মত প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। সৌন্দর্যের মতই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তীম পথচলা মসৃণ হয় এটিই একমাত্র কামনা। শুভ জন্মদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App