×

মুক্তচিন্তা

নিরাপদ মাতৃত্ব প্রত্যেক নারীর অধিকার

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ১২:১২ এএম

‘মা’ শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট একটি শব্দ হলেও সবচেয়ে বেশি মধুর ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত শব্দ এটিই। মায়ের মতো এমন মধুর শব্দ অভিধানে আর দ্বিতীয়টি নেই। এই ‘মা’ শব্দটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে পৃথিবীর সব মায়া, মমতা, আদর, স্নেহ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। আর একজন নারীর জীবন তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন তিনি মাতৃত্ব অর্জন করেন। এই মাতৃত্ব অর্জনে নিরাপত্তা লাভ প্রতিটি নারীর অধিকার। কিন্তু এই মাতৃত্ব অর্জন করতে গিয়ে একদিকে যেমন নারীদের সহ্য করতে হয় অসহ্য যন্ত্রণা, অন্যদিকে আবার থাকে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি। প্রায়ই সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয় নারীদের। এর কারণ হলো গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে অনিরাপদ থাকা। এই অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুবরণ থেকে মায়েদের রক্ষা করতে এবং মাতৃত্ব অর্জনে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ মে ‘বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালন করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৯৭ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি অবস্টেটিক্যাল এন্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) পালন করে আসছে। এই দিনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নিরাপদ মাতৃত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়। প্রতিবারের মতো এ বছরও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালন করা হবে। তবে করোনা মহামারির কারণে গতবারের মতো এবারো স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে কর্মসূচির আয়োজন করা হবে। নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণকে বোঝানো হয়। মূলত মাতৃস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখা, মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস করা ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর এই দিনে সারাদেশে নিরাপদ মাতৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন ও নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশের মাতৃ মৃত্যুহার আগের চেয়ে অনেকটা কমে এলেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো এখনো সম্ভব হয়নি। এর প্রধান কারণ হলো প্রচলিত ধ্যান-ধারণার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত বিশ্বাস, শিক্ষার অনগ্রসরতা ও অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা। এছাড়াও গ্রামাঞ্চলের ব্যক্তি পর্যায়ে আধুনিক মানসিকতার উন্মেষ পুরোপুরি ঘটেনি। গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত নানাবিধ জটিলতার কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার নারীর মৃত্যু হয় এবং ৩০ লাখ নবজাতকের অকাল মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ হাজার ৪৭৫ জন মা এবং প্রতিদিন প্রায় ১৫ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া বিশ্বের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেড়ে গেছে। ফলে নারীদের গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন সময়ের মৃত্যুহার ও আগের তুলনায় বাড়তে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় নিরাপদ মাতৃত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে পর্যাপ্ত সচেতনতা সৃষ্টি অত্যন্ত জরুরি। মা ও শিশু উভয়কেই স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে এবং গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়ে নারীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রদান করতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়া নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতকরণে সরকারকেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কেননা নিরাপদ মাতৃত্ব অর্জনের অধিকার প্রতিটি নারীরই রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে তাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হবে। সিদরাতুল মুনতাহা শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App