কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২১, ১২:১০ এএম
আমি জেনারেল : হাবীবুল্লাহ সিরাজী
আমি জেনারেল হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
আমার কাছে সংবাদ আছে শস্য, প্রাণি ও খনির,
পোশাক এবং বারুদ ইতিহাস পেতে দিলে
মুঘল মাথায় তোলে পানিপথ। পাটিগণিত
ডানা বাড়িয়ে সব্জি, পশু ও জলের ফলাফল ঢাকে।
ব্যাঙের ভাষা জানি, খবর রাখি ঐরাবতের
শিস দিতে পারি, চামড়া তুলে এঁকে দিই
পলাশীর প্রান্তর। ভক্তকে রক্ত দিয়ে আড়াল ক’রলে
রসায়নে প্রস্তুত করি আমার তারকা
আমিই তো জেনারেল সিরাজী।
আমি জেনারেল হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
বুঝতে পারি দিক, রঙের বর্ণনা
পদ্য ও গদ্যের মধ্যে বসিয়ে দিতে পারি একাত্তর
কেন্দ্রীয় কোষাগার খুলে বিতরণ করি
পিতা, প্রগতি ও পিস্তলÑ
বুঝতে পারি জ্যামিতির ধাক্কায় ক্ষুণ্ন হ’লে ন’ড়ে ওঠে পদার্থবিজ্ঞান,
ধৈর্যও মাটিতে টেকে না!
আমি জেনারেল সিরাজী।
চিরবঙ্গে চিরকবি : মুহম্মদ নুরুল হুদা
ভোরের গাড়িতে তুমি এসেছিলে
ফিরে গেলে ভোরের গাড়িতে;
হাওয়াকালে জোড়াগাড়ি,
কবিতা বসত করে চিরকাল
চিরবঙ্গে কবির বাড়িত।
এ কেমন ভাবতরঙ্গ বিস্ময়,
ঠেকাতে চেয়েছো তুমি কবিজন্মে
অঙ্গঅনঙ্গের সব মোমশিল্পেরও ক্ষয়;
জয় সব কবিমানবের জয়।
তোমার চলার পথে হেসে ওঠে
বনে-মনে এ বাংলার সব পুষ্পরাজি,
ষাটের কালিক কবি, সৃষ্টিজয়ী,
তুমি মহাকালিক সিরাজী।
সিরাজীতৃষ্ণার নতুন পাঠ : রবিশঙ্কর মৈত্রী
সমুদ্রে সৃষ্ট ঝড় যেমন নতুন নতুন
নামে ধেয়ে আসে লোকালয়ে
কিছু মেঘ তেমন নাম পায় না বলে
অভিমানে উড়ে উড়ে সুদূরে মিলায়;
কিছু মেঘ চৌচির মাঠের প্রার্থনায়
শূন্যমাঝে পুঞ্জীভূত হয়
সিরাজীতৃষ্ণা ও প্রত্যয় ঊর্ধ্বগামী হয়Ñ
‘আকুল হ’য়ে আছি,
বৃষ্টির আগেই উপযোগী হব’
অবশেষে বৃষ্টিই আসে, তুমুল তীব্র বৃষ্টি
ধুয়ে মুছে সকল জঞ্জাল নিয়ে যায়
রেখে যায় কিছু পলি, বিশুদ্ধ পবিত্র উর্বর;
পলিমাটিতেই অপঠিত কবিতার
নতুন পাঠ শুরু হয়।
অন্তিম অভিবাদন : ফরিদ আহমদ দুলাল
তাকানো যাচ্ছে না কবি তোমার বিষাদভরা মুখে
এ বিষাদ ছড়িয়েছে সহস্রের ব্যথাতুর বুকে!
তুমি তো প্রার্থনা করেছিলেÑ ‘দাও বৃক্ষ দাও দিন’
‘মোমশিল্পের ক্ষয়ক্ষতি’ ভেবে ‘মধ্যরাতে দুলে ওঠে গ্লাস’ শব্দহীন
‘হাওয়া কলে জোড়া গাড়ি’ জুড়ে ‘নোনা জলে বুনো সংসার’ বুনন
‘স্বপ্নহীনতার পক্ষে’ যারা তাদের বিপক্ষে তুমি সন্দীপন!
‘আমার একজনই বন্ধু’ বলে পরিচয় দিয়েছিলে সিরাজীর দ্যুতি
অতঃপর দেখেছ ‘পোশাক বদলের পালা’ শেষে ভগ্নস্তূপ অনুভূতি।
‘কৃষ্ণ কৃপাণ ও অন্যান্য কবিতা’ নিয়ে যুদ্ধ রেখেছিলে জারি
‘সিংহদরজা’ তো ‘ম্লান ম্রিয়মাণ নয়’ বুঝে করো আহাজারি।
প্রথম যেদিন বৃষ্টিতে ভেজার পর রাতে তৃষ্ণার্ত দুজন
ভাগাভাগি করেছিলে নিঃশর্ত-বন্ধুর অমৃতের উজ্জীবন।
কী-জানি কী বুঝেছিলে ‘বিপ্লব বসত করে ঘরে’
‘ছিন্নভিন্ন অপরাহ্নে’ ‘সারিবদ্ধ জ্যোৎস্না’য় ‘সুগন্ধ ময়ূর লো’ বলে এসেছো অন্দরে।
এরপর সব ইতিহাস ‘মুখোমুখি’ কত গান
মান-অভিমান বিনিদ্র রাতের অমৃত সন্ধান;
কবিতার বাঁক ঘুরে শিরোনাম খোঁজো নির্ঘুম উদ্বেল
জানি না কখন নিজের অজান্তে হলে ‘জেনারেল’।
তোমার সম্মানে কাঁদে সহস্র বিউগল
বৃষ্টির ক্রন্দন পৃথিবীতে ঝরে পড়ে অবিরল।