×

মুক্তচিন্তা

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মোকাবিলায় সতর্কতা ও করণীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১২:৩০ এএম

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মোকাবিলায় সতর্কতা ও করণীয়

করোনা থেকে সেরে উঠার পরও মানুষের মাঝে স্বস্তি নেই। করোনার পর এখন নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। মূলত কোভিড থেকে আরোগ্য লাভের পর শরীরে বিরল যে সংক্রমণ হয় তার নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো মিউকোরমাইসিস, যা খুবই বিরল একটি সংক্রমণ। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস মূলত এক ধরনের ছত্রাক সৃষ্ট রোগ। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগটি মূলত বায়ুবাহিত। বাতাসে ছত্রাকের বীজগুটি বা স্পোর ভেসে বেড়ায়। শ্বাস গ্রহণের সময় সাইনাস ও ফুসফুসে জীবাণু প্রবেশ করে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কারণে সাইনাস ও ফুসফুস সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে মূলত এই সংক্রমণ হয়। মাটি বা জৈব সারের মতো স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই ছত্রাক তৈরি হয়। এই ছত্রাক সাধারণত পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার এবং পচন ধরা ফল ও শাকসবজির মধ্যে। এই ছত্রাক সাইনাস, মতিষ্ক ও ফুসফুসকে আক্রান্ত করে থাকে। যাদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, এইচআইভি এইডস রয়েছে কিংবা করোনার কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে তাদের এ মিউকর থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় মূলত অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। ফলে করোনা থেকে সেরে উঠার পর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহারে অতি সতর্ক হতে হবে। যাদের ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হার্টের রোগ রয়েছে তারা যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে তাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক শনাক্ত হয়েছে। এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২১৯ জন। ভারতে করোনা ভাইরাসের চেয়েও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। ভারতের অন্তত ১৫টি রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ভারতের তামিলনাড়ু, গুজরাট, ওড়িশা, রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা এই পাঁচ রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকেরই বেশি রোগী মূলত গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের। গত ২৫ মে বাংলাদেশে বারডেম হাসপাতালে ২ জনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। জানা যায়, গত ৮ মে ৪৫ বছর বয়সি এক রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। পরে গত ২৩ মে ৬০ বছর বয়সি আরেক জনের দেহে রোগটি শনাক্ত হয়। উল্লেখ্য, তারা দুজনই আগে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার পর তারা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ এড়াতে কিছু বিষয়ে নজর দেয়া অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে নিয়মিত মাস্ক পরতে হবে। বিশেষত ধুলোবালিময় এলাকা বা নির্মাণ স্থানে গেলে মাস্ক অবশ্যই পরতে হবে। বাগানে বা মাটি নিয়ে কাজ করলে হাতে গ্লাভস, ফুলহাতা জামা পরতে হবে। স্ক্রাবার দিয়ে গা ঘষে গোসল করতে হবে। বাড়ির চারপাশ সবসময় পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খোলা জায়গায় ছত্রাক জমতে পারে এমন কিছু রাখা যাবে না। ডায়াবেটিস ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে কেউ আক্রান্ত হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর ওষুধ খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ছত্রাক প্রতিরোধী কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। সিটি স্ক্যান ও নাকের এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। করোনা পরবর্তী ও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে গ্লোকোজের মাত্রার দিকে নজর রাখতে হবে। স্টেরয়েড, অ্যান্টিবায়োটিক, আ্যন্টিফাঙ্গাল ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে। ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনা করে, মানুষের জীবন তথা রাষ্ট্রের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো মেনে চলতে হবে। কেবল তখনই আমরা সবাই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস থেকে নিজেকে, নিজের পরিবার ও রাষ্ট্রকে সুরক্ষিত রাখতে পারব।

মো. আশরাফুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App