×

মুক্তচিন্তা

বাজেটে দরিদ্র মানুষের কথা ভাবতে হবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১২:৩০ এএম

প্রতি বছরের নতুন বাজেট দেশের দরিদ্র মানুষগুলোর জন্য কল্যাণের থেকে অকল্যাণই বেশি হয়ে থাকে। প্রতি অর্থবছরের শুরুতে বাজেটের মাত্রা যে পরিমাণে ধরা হয় সেই পরিমাণে দেখা যায় প্রতি বছরেই ঘাটতি থাকে। আর সেই ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতি বছরই পণ্য সামগ্রীর ওপর ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। প্রতি বছর ভ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পায়। যার ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করে জীবনধারণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারণ মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় না। আবার তাদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করা হয় না। যার ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া চরম দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া বিগত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মানুষের আয়ের একটি বিরাট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। লকডাউনের কারণে এদের কর্মসংস্থান বন্ধ রয়েছে প্রায় অনেক দিন ধরে। এর ফলে এরা নিজেদের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর জোগান দিতে পারছে না। সরকার থেকে তাদের সাহায্যের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হলেও অনেকেই ত্রাণের এই সাহায্য পায়নি। আর যারা পেয়েছে তা তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। এমতাবস্থায় যদি আসন্ন বাজেটে ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে দৈনন্দিন পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করা হয় তাহলে সেটা দরিদ্র মানুষের জন্য চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। দেশের চার কোটি মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে। এখন যদি আসন্ন বাজেটে পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করা হয় তাহলে এই ৪ কোটি মানুষের অবস্থা হবে ভয়াবহ। তার মধ্যে আবার রয়েছে করোনা মহামারির জন্য লকডাউন, কর্মসংস্থানের অভাব। আবার এসব দরিদ্র মানুষের জন্য স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাতেও রয়েছে সংকট। তাদের আয় দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকার কারণে অসুস্থ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা তারা পায় না। পর্যাপ্ত আর্থিক সুবিধা না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। যদিও সরকার সারাদেশে এসব দরিদ্র মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ তাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আবার এসব মানুষদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থাও পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। সরকার যদিও শিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণ থেকে উপবৃত্তি, বিনা বেতনে অধ্যয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ অনেক পদক্ষেপ চালু করেছে। কিন্তু এসব পদক্ষেপ এর সুবিধা দরিদ্র মানুষের অনেকেই পাচ্ছে নাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে না হওয়ার কারণে। এই যে দেশের চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে মানবেতর জীবনযাপন করছে আসন্ন বাজেট যাতে এদের জন্য আর দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সেজন্য আসন্ন বাজেটে এসব দরিদ্র মানুষের কথা ভাবতে হবে। তাই অবশ্যই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করা যাবে না, কেননা মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তারা ইনফরমাল সেক্টরে কাজ করতেন। তাদের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। এদের মধ্যে যারা একেবারেই দারিদ্র্য তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। আয় রোজগার বাড়াতে হবে। দারিদ্র্য যাতে আর না বাড়ে সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি এসব মানুষের সুন্দরভাবে জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। যাতে তারা অসুস্থ হলে সহজেই চিকিৎসাসেবা নিতে পারে কম খরচে বা বিনামূল্যে। আবার শিক্ষা খাতেও বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে যাতে এসব দরিদ্র শ্রেণির মানুষ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পড়া শেষে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাধ্যমিকের পর একজন শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে অনেক খরচের প্রয়োজন হয়, যা দারিদ্র্যসীমার নিচে যারা বাস করে তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। প্রাথমিক-মাধ্যমিকের সুবিধাগুলো সবার জন্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার ব্যয় ও সবার জন্য সহজ করতে হবে। সেজন্য আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। সর্বোপরি এসব দরিদ্র মানুষের জন্য আসন্ন বাজেট যাতে আর দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে সেজন্য আসন্ন বাজেট বিগত বছরগুলোর তুলনায় প্রান্তিক মানুষদের জন্য যাতে অনুকূল হয় সেটাই সরকারের কাছে জাতির প্রত্যাশা।

সাদিয়া ইসলাম সম্পা : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App