×

পুরনো খবর

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ফের কয়রার নতুন গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি মানুষ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১০:৫৪ পিএম

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ফের কয়রার নতুন গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি মানুষ

প্লাবিত হয়েছে গ্রাম। ছবি: ভোরের কাগজ

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ফের কয়রার নতুন গ্রাম প্লাবিত, পানিবন্দি মানুষ

পানিতে ভেসে গেছে গ্রাম। ছবি: ভোরের কাগজ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে কয়রা উপকূলে আবারও বেড়িবাঁধ ভেঙে  নতুন করে  প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। এতে করে ফের ডুবল গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড় যশের ঝড়ো হাওয়ার তান্ডব ততটা না থাকলেও ভরা পূর্ণিমার সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ উপচে ও ভেঙে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রাম। এতে বিপুল সংখ্যক কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানিতে ভেসে গেছে শত শত চিংড়িঘের, ফসলি জমি, নষ্ট হয়েছে খাবার পানির পুকুর, নলকূপ, জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে ঘরের আসবাবপত্র, ধান চাল, ও নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্রামীণ জনপদের কাঁচা পাকা সড়ক। অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে না উঠলেও গবাদি পশু হাঁস হাঁস মুরগি ও ধান চাল নিয়ে অনেককেই উঁচুস্থানে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। তবে চিকিৎসাসেবা নেই বললেই চলে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

বুধবার (২৬ মে) সকালে জোয়ারের তোড়ে উপজেলার চার ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এর অন্তত ১৫/২০টি স্থান উপচে ও ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। এতে করে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ঐদিন দুপুরে কিছু কিছু এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাধ আটকানো সক্ষম হলেও ২৭ মে দুপুরের জোয়ারে ফের ভেঙে গিয়ে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে যাওয়ায় স্থানগুলি দিয়ে লাগাতার জোয়ারের পানি ওঠানামা করায় ভাঙা স্থানগুলির আয়তন ও গভীরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উপজেলার সবচেয়ে প্লাবিত মহারাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন লাভলু জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এর হোগলার দুইটি, দশালিয়ার দুইটি, মঠবাড়ির দুইটি পয়েন্ট, মোট ৬টি পয়েন্ট ভেঙে হোগলা, দশালিয়া, মঠবাড়ী, আটরা, গোবিন্দপুর, জয়পুর, শিমলারাইট, বাউলিয়া ঘাটা, মঠের ডাঙ্গা, সুতির কোনা, সুতির ধার, পোলাডাঙ্গার চক, মোড়লের চক, অন্তাবুনিয়া, দেয়াড়াসহ অন্তত ২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়েছে সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে শত শত একর জমির মৎস্য ঘের। আগামী ২৪ মে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো আটকানোর চেষ্টা করবেন বলে চেয়ারমান জানান।

উত্তর বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান সর্দার নুরুল ইসলাম জানান, গাতিরঘেরী হতে বীণাপাণি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধের চারটা স্থান ও পদ্মপুকুর এলাকার একটি স্থান দিয়ে লাগাতার পানি প্রবেশ করে হরিহরপুর পদ্মপুকুর গাতির ঘেরী বীণাপাণি সহ অন্তত সাত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ধসে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এরমধ্যে কিছু মানুষ হরিহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পদ্মপুকুর কপোতাক্ষ স্কুলকাম সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।

[caption id="attachment_286598" align="aligncenter" width="687"] পানিতে ভেসে গেছে গ্রাম। ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]

দক্ষিণ বেদকাশী ইউপি চেয়ারম্যান কবি শামসুর রহমান জানান, আংটিহারা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এর প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে লাগাতার জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় আংটিহারা, ঘড়িলাল, জোড়শিং, পাতাখালি, গোলখালী সহ ৫/৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, জলোচ্ছ্বাস এর প্রভাবে ২৬ মে দুপুরের জোয়ারে কয়রা সদর ইউনিয়নের ৪নং কয়রা লঞ্চ ঘাট হতে সুতির অফিস পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেরিবাধ উপছে ও দুই নম্বর কয়রা ঋষি বাড়ির পাশে একটি পয়েন্ট দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও এলাকাবাসীকে নিয়ে তাৎক্ষণিক স্বেচ্ছাশ্রমে আটকানো সম্ভব হয়। কিন্তু আজ দুপুরের জোয়ারে মহারাজপুর মঠবাড়ী এলাকার পানিতে আমাদের বৃহত্তর ৪ নম্বর কয়রা গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান  বলেন, ঘূর্ণিঝড় যশের আগেই কয়রায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে কয়রায় কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাত থেকে আট ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ার প্রবাহিত হওয়ায় ৬টি পয়েন্ট ভেঙে ও ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে বেড়িবাঁধ উপছে  উপকূলীয় এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ চলমান আছে। ভালোভাবে সংস্কার করতে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে । এ বাঁধ আমরা অচিরেই সংস্কার করব।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।এ ছাড়া দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা মজুত আছে। ইতি মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৪টি ইউনিয়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দের নিকট ইউনিয়ন প্রতি আড়াই টন চাউল ও নগদ ২৫ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং পরিবারের তালিকা প্রস্তুতের কাজও শুরু করেছি।পর্যায়ক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বানভাসি অসহায় সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App