×

মুক্তচিন্তা

কালোটাকা সাদা করার সংস্কৃতি কী চলতেই থাকবে!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১২:২৯ এএম

কালোটাকা সাদা করার সংস্কৃতি কী চলতেই থাকবে!

দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনকারীরা বরাবরই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রহিত করার দাবি জানিয়ে আসছে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, আসলে এ ধরনের সুযোগ দিয়ে দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। সরকার একদিকে সুশাসনের কথা বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বারবার উচ্চারণ করছে, আবার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিচ্ছে। প্রকারান্তরে এটা সরকারের দ্বিমুখী নীতির নামান্তর ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশে ঘোষণা দিয়ে প্রথম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১৯৭৫ সালে, সামরিক আইনের আওতায়। এ পর্যন্ত ১৭ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং বৈধ করা মোট টাকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা এবং এর আগে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। তখন রেকর্ড পরিমাণ ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঢালাওভাবে কালোটাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং কিছু লোক সেই সুযোগটি হাত ছাড়া করেনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য মতে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ১৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা কর দিয়ে বৈধ করেছেন ১০ হাজার ৩৪ জন করদাতা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন রেকর্ড! বাংলাদেশে ২০১২-১৩ সাল থেকেই জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার একটা স্থায়ী নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবারই বলা হয় এটাই শেষ সুযোগ কিন্তু কালো টাকা বিশেষ সুযোগ দিয়ে শেয়ারবাজার বা আবাসন খাতের মতো সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় এলে সেটি দেশের অর্থনীতিতে সত্যিকারভাবে কতটা ভূমিকা রাখে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ২০০৯ সালে নতুন সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগ আবারো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়। এমনকি আয়কর অধ্যাদেশে জারি করে ২০১২ সালে স্থায়ীভাবে নতুন একটি ধারা সংযোজন করে কালো টাকা সাদা করার আইনি সুযোগ রাখা হয়। এই ধারাটি হচ্ছে ১৯-ই। এর ফলে প্রযোজ্য আয়করের সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিলে যে কেউ অর্থ সাদা করতে পারবেন। প্রায় সব সরকারই অবাধে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে, নানা ধরনের হুমকিও দেয়া হয়। কিন্তু সেসব হুমকি কেবল বক্তৃতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে তেমন কেউ উৎসাহ দেখায়নি। অনৈতিক একটা বিষয়কে বৈধ করার সুযোগ দেয়া হলে সৎ করদাতাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয় এবং এটা সামগ্রিকভাবে দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে। প্রকারান্তরে এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিস্তারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। এ কারণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নির্মূলের জন্য কালো টাকা সাদা করার এ সুযোগটি চিরতরে বন্ধ করাই শ্রেয় বলে সংশ্লিষ্টদের দৃঢ় বিশ্বাস।

মো. জিল্লুর রহমান : গেণ্ডারিয়া, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App