×

মুক্তচিন্তা

আদৌ কি নিরসন হবে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২১, ১২:২৯ এএম

আদৌ কি নিরসন হবে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত?

মধ্যপ্রাচ্যে কেন ইসরায়েলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইহুদিরা বিশ্বাস করে বাইবেলে বর্ণিত তাদের পিতৃপুরুষ আব্রাহাম এবং তার বংশধরদের জন্য যে পবিত্রভূমির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, আজকের আধুনিক ইসরায়েল সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই অবশ্য এই ভূমি নিয়ে সংঘাত চলছে। আসিরিয়ান, ব্যাবিলোনিয়ান, পার্সিয়ান, ম্যাসিডোনিয়ান এবং রোমানরা সেখানে অভিযান চালিয়েছে, সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। রোমানরা সেখানে ‘জুডেয়া’ বলে একটি প্রদেশ তৈরি করেছিল। তবে এই ‘জুডেয়া’ প্রদেশের ইহুদিরা কয়েকবার বিদ্রোহ করেছেন। রোমান সম্রাট হাড্রিয়ানের আমলে ১৩৫ খ্রিস্টাব্দে এক বিরাট জাতীয়তাবাদী ইহুদি বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। তিনি সেটা দমন করেন। এরপর তিনি জুডেয়া এবং রোমানদের অধীন সিরিয়াকে যুক্ত করে তৈরি করেন এক নতুন প্রদেশ, যার নাম দেয়া হয় সিরিয়া-প্যালেস্টাইন। অষ্টম শতকে যখন ইসলামের উত্থান ঘটল, ফিলিস্তিনি জয় করল আরবরা। এরপর অবশ্য ইউরোপীয় ক্রুশেডাররা সেখানে অভিযান চালায়। ১৫১৬ সালে এই এলাকায় শুরু হয় তুর্কি আধিপত্য। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই অঞ্চলটি একনাগাড়ে শাসন করেছে তারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপে যে ইহুদি নিধনযজ্ঞ (হলোকাস্ট) চলে, তার শিকার হন লাখ লাখ ইহুদি। ফলে একটি স্বতন্ত্র ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং এর স্বীকৃতির জন্য তখন আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু আরব আর ইহুদিদের মধ্যে এ নিয়ে যে বিরোধ, ব্রিটিশরা তার কোনো সমাধান করতে পারছিল না। তারা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের দ্বারস্থ হয়। পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখার জন্য জাতিসংঘ একটি বিশেষ কমিশন গঠন করে। ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিন ভাগ করার এক পরিকল্পনা অনুমোদন করে। এই পরিকল্পনায় একটি আরব এবং একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ছিল আর জেরুজালেম নগরীর জন্য একটি বিশেষ কৌশল গ্রহণের কথা বলা হয়। পরিকল্পনাটি মেনে নিয়েছিল ইসরায়েল, কিন্তু প্রত্যাখ্যান করেছিল আরবরা। এই পরিকল্পনাকে আরবরা দেখেছিল তাদের ভূমি কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হিসেবে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে ইহুদিরা ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করে দিল। ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর যখন লাখ লাখ ফিলিস্তিনি সেখান থেকে উচ্ছেদ হয়ে গেল, তখন ফিলিস্তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। আরব-ইসরায়েলের মধ্যে যে ১৯৫৬, ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরো তিনটি যুদ্ধ হয়। এতে ফিলিস্তিনের ভাগ্যে দুর্ভোগ ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফিলিস্তিনিকে একটি পর্যবেক্ষকে রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু জাতিসংঘের স্বীকৃতি না মিললেও এই বিশ্ব সংস্থার ৭০ ভাগ সদস্য রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে একটি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে ফিলিস্তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও স্বীকৃতি মিলে। সংকট সমাধানের সর্বশেষ উদ্যোগটি নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এটিকে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে নাকচ করে দিয়েছিল ‘একতরফা উদ্যোগ’ বলে। যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগ মোটেই সফল হয়নি। ভবিষ্যতে যে কোনো শান্তিচুক্তির আগে দুপক্ষকে জটিল সব সমস্যার সমাধানে একমত হতে হবে। সেটি যতদিন না হচ্ছে, দুপক্ষের এই সংঘাত চলতেই থাকবে।

মো. মারুফ মজুমদার : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App