রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে কাজ করছে জাতিসংঘ
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মে ২০২১, ০৯:৪৪ পিএম
বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্ষনে জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির। ছবি: ভোরের কাগজ
টেকসই অধিকার নিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে জাতিসংঘ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির।
বুধবার (২৬ মে) জাতিসংঘের ৭৫তম সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টা তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করেন। সকাল ৯টার দিকে জাতিসংঘের একটি বিশেষ ফ্লাইট যোগে (ফ্লাইট নং CL604) ভলকান বজকির নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান।
প্রতিনিধি দলের অন্যান্যরা হচ্ছেন- ঢাকাস্থ তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তফা ওসমান তুরান, অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের মিস থেগান ইলিজাবেথ ব্রিন্ক, পাকিস্তানে দূতাবাসের মি. ফারু খান, তুরস্কের মি. ওনসো কেচেলি, মিস. কেরেন হান্ডে ওজোর, মি. তঘরুল গুনাইদিন, ইন্দোনেশিয়ার মি. আহমদ আলমাদুদী আমরী, আয়ারল্যান্ড দূতাবাসের মিস.উরলা মেরী ও ত্রিনিদাদ এন্ড ট্যোবাগো দূতাবাসের মি. ফ্রান্সিস লিংক্লন কেরুন।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় সোয়া ১১টা পর্যন্ত ক্যাম্প-৪ এ রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) শাহ রেজওয়ান রেজওয়ান হায়াত (অতিরিক্ত সচিব) এবং অতিরিক্ত কমিশনার ( উপ- সচিব) শামসুদ্দোহা ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি), সহকারী ক্যাম্প ইনচার্জ গন, কক্সবাজার ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাইমুল হক , রামু সেনা নিবাসের ল্যাপটেনেন্ট কর্নেল সুলতান মাহমুদ পি এস সি ও বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় আরআরআরসি'র উপস্থাপনা করেন উপ-সচিব খলিলুর রহমান। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে ১/ক্যাম্প ১ ইস্ট / এফ ব্লকের হেডমাঝি মাহমুদুল্লাহ, ২/ক্যাম্প ৫ এর মহিলা সদস্য আফরোজা ৩/১ ডব্লিউ জি ব্লকের হেডমাঝি মো. রফিক ৪/ক্যাম্প ৪ এর মহিলা সদস্য রশিদা খাতুন, ৫/ক্যাম্প ৪ এর হেডমাঝি মো. হোসেন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সমস্যা এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। ৩৪টি রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পের অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি বৈঠক উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট ভলকার ভজকির বলেন, জাতিসংঘের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের সকল দুঃখ-দুর্দশার বিষয়ে অবগত আছেন।রোহিঙ্গাদের পক্ষে তাদের সব সময় অবস্থান রয়েছে। জাতিসংঘ সর্বদা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। মিয়ানমারের সামরিক শাসন নিয়ে আমরা অবগত আছি, এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। সামনের মিটিংয়ে আমরা তাদেরকে নিয়ে বসবো, আপনাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ সব সময় রোহিঙ্গাদের পাশে আছে এবং থাকবে। সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করবে এরূপ আশ্বাসও প্রদান করেন তিনি।
হেড মাঝি মাহমুদুল্লাহ বলেন, আমরা আমাদের নাগরিকত্ব, অধিকার এবং মর্যাদাসহ শান্তিপূর্ণভাবে মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই। অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মতো আমরা সমঅধিকার এবং সম্মান মর্যাদা সহকারে যাতে মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবর্তিত হতে পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করি।
রোহিঙ্গা মহিলা প্রতিনিধি আফরোজা বলেন, আমাদের বাংলাদেশে আগমনের চার বছর পূর্ণ হতে চলেছে। আমরা জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসে অবস্থান করছি। আমি আমার জীবনে তিনবার শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে এসেছি, ভবিষ্যতে আর আসতে চাইনা। সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিনীত অনুরোধ আমাদেরকে প্রত্যাবাসিত করা হলে তা যেন টেকসই এবং মজবুত হয়।
এসময় অন্যান্য রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা বলেন, জাতিসংঘ যদি আমাদেরকে প্রত্যাবাসন করে সেক্ষেত্রে আমরা জাতিসংঘের কথামতো মিয়ানমারে যেতে রাজি আছি। ১২ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জায়গায় আমাদের অবস্থানে কিছুটা কষ্ট হলেও বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় আমরা এখানে ভালো আছি। মিয়ানমারের ১৩৬ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ১৩৫ জাতিগোষ্ঠী নিবন্ধিত হলেও রোহিঙ্গারা আজও পর্যন্ত নির্যাতিত এবং অনিবন্ধিত রয়েছে। সমান অধিকার, মর্যাদা ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সহকারে মিয়ানমারে ফিরে যেতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
প্রতিনিধিরা দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট ভলকান বজকির উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ৮ ডব্লিউ পরিদর্শন টাওয়ারে আরোহন করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এর দৃশ্য দেখেন এবং রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সৌজন্যতাবোধ প্রদর্শন করেন। এছাড়া কুতুপালং ক্যাম্প ৯ এর জি ব্লকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ তুর্কি হাসপাতালের পুনঃনির্মাণ কাজ পরিদর্শন এবং তুর্কি হাসপাতালে ডাক্তারদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা বিষয়ে এবং কুশল বিনিময় শেষে দুপুর ১ টার দিকে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কয়েকবার চেষ্টার পরও মিয়ানমারের অনীহার কারণে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।