×

জাতীয়

আমূল পাল্টে যাচ্ছে ভূমিসেবা ব্যবস্থাপনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ০৮:৩৬ এএম

আমূল পাল্টে যাচ্ছে ভূমিসেবা ব্যবস্থাপনা

যেতে হবে না তহশিল ও এসিল্যান্ড অফিসে দুর্নীতি কমার আশাবাদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর, মিউটেশন ফি, খতিয়ান ফি, ই-নামজারিসহ যাবতীয় তথ্যের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় একটি অ্যাপ্লিকেশন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার পর দেশজুড়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিই খোলনলচে পাল্টে দিচ্ছে সরকার। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নাগরিকরা এখন ঘরে বসেই অনলাইনে সব ফি অর্থাৎ খাজনা দিতে পারবেন। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তহশিল অফিসে হাজির হয়ে জমির আদ্যোপান্ত জানতে হবে না। সবমিলিয়ে এক বাটনে ভূমির সব সেবা হাজির হয়েছে। আর তাতেই ভূমি খাতে ‘দুনম্বরি’ কমে যাওয়ার আশাপ্রকাশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমির রক্ষণাবেক্ষণ করা শুরু হলে কমে যাবে জমিসংক্রান্ত মামলা। পাশাপাশি বাড়বে খাজনা আদায়। আগামী ৩০ জুন থেকে ভূমির ডিজিটাল রক্ষণাবেক্ষণের পদ্ধতি শুরু হবে। তারপরও বিভিন্ন শ্রেণির দালালরা মাঠপর্যায়ে নানা ছুতোয় টাকা হাতানোর পাঁয়তারা করতে পারে। এক্ষেত্রে জমির মালিকদের সচেতন থাকার কথা বলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। প্রশাসনও কঠোর থাকবে। মন্ত্রণালয় বলছে, মানুষে মানুষে যোগাযোগ যত কমে আসবে দুর্নীতিও ঠিক ততটাই কমে আসবে।

জানতে চাইলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়া। আমাদের ডিজিটাল প্রসেসটা খুবই কার্যকরী হয়েছে। আমরা কথা ও কাজের সঙ্গে মিল রাখি। পেমেন্ট গেটওয়ে নিশ্চিতের ক্ষেত্রে ইউসিবি এগিয়ে এসেছে। উপায়, নগদ, বিকাশও এগিয়ে এসেছে।

ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। কারণ জানতে হবে মানুষটা কে? রেজিস্ট্রেশন প্ল্যাটফরমটা আমরা তৈরি করেছি, এনআইডির সঙ্গে ভেরিফাইড। একই সঙ্গে তার একটা মোবাইল নম্বরকে আমরা রেজিস্টার্ড করেছি। এই মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। চলতি সপ্তাহের শেষদিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের প্ল্যাটফর্ম খুলে দেয়া হবে বলে জানান ভূমি সচিব। তিনটি উপায়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে জানিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওয়েবসাইটে ঢুকে সরাসরি করা যাবে, ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে করা যাবে। কল সেন্টারে ফোন করেও রেজিস্ট্রেশন করা যাবে, এটা নতুন একটা ডাইমেনশন। রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর বাকি তথ্য আমাদের লোকজন এন্ট্রি করে দেবে। এরপর সেবা গ্রাহক মোবাইলে একটি এসএমএস পাবেন। এসএমএস পাওয়ার পর উনি যখনই জানতে চাইবেন আমার খাজনা কত, তাকে মোবাইলে জানিয়ে দেয়া হবে। সেইসঙ্গে দেয়া হবে একটা টোকেন নম্বর। সেই নম্বর দিয়ে যে কোনো এমএফএসে (মোবাইল ব্যাংকিং) ঢুকে নম্বর উল্লেখ করে পেমেন্ট দিলে আমাদের সিস্টেম বুঝবে এটা অত সালের এই লোকের খাজনা। এই হলো প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনলাইনে যাবতীয় ফি পরিশোধের জন্য ভূমিসেবা প্ল্যাটফর্ম, পেমেন্ট গেটওয়ে চ্যানেল ও ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় হবে। এই চুক্তির আওতায় ইউসিবিএল হবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়কারী তথা সেটেলমেন্ট ব্যাংক। সাধারণ মানুষ উপায়, নগদ, বিকাশ এবং অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়ে চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের জমির বিভিন্ন ফি দিতে পারবেন। ফি পরিশোধের পর সেবা গ্রহীতারা কিউআর কোড সমৃদ্ধ রশিদ পাবেন। উপায়, বিকাশ এবং নগদ ইত্যাদির মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে সেটেলমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়ে ই-চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে স্থানান্তরিত হবে।

এই প্রসঙ্গ টেনে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ই-পর্চা বা ডিজিটাল রেকর্ড রুম অলরেডি চালু করেছি। এক কোটি ৭৬ লাখ রেকর্ড আমাদের আছে। যে কেউ ওয়েবসাইটে গিয়ে এনআইডি নম্বর দিয়ে খতিয়ান দেখতে পারবেন। এই সার্ভিসটিও টেলিফোনের মাধ্যমে দেয়ার চিন্তা করছি। এটা খুব তাড়াতাড়ি চালু হবে। একজন মানুষ ঘরে বসে ফোন করে পর্চার আবেদন দিতে পারবে। পেমেন্টটা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ যখন উত্তরণ হলো মানুষকে আর ভূমি অফিসে যেতে হচ্ছে না।

এদিকে ভূমির রক্ষণাবেক্ষণকে ডিজিটাল করার জন্য এরই মধ্যে ৪৬০ জন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকদেরও বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তহশিলদারদের মাধ্যমে মৌজাওয়ারি জমির বর্ণনা অনলাইনে আপ করা হয়েছে। এরপরই ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল করার কার্যক্রম শুরু করে প্রশাসন। এরপরই সনাতন পদ্ধতিতে জমির খাজনা নেয়া হবে না বলে প্রচার শুরু করে। আগামী ৩০ জুন থেকে প্রচলিত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে আর ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হবে না।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর : ভূমিসংক্রান্ত যাবতীয় ফি অনলাইনে পরিশোধের সুবিধা সংবলিত সিস্টেম (কাঠামো) স্থাপনের জন্য গতকাল সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পেমেন্ট গেটওয়ে চ্যানেল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান উপায়, নগদ ও বিকাশ এবং ব্যাংকিংসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার দাস। অন্যদিকে ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরি, উপায়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুল এইচ খন্দকার, নগদের প্রধান পরিচলন কর্মকর্তা আশিস চক্রবর্তী ও বিকাশের মহাব্যবস্থাপক এস এম বেলাল আহমেদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App