×

সারাদেশ

আকাশে মেঘ আর পানি ফুঁসলেই নির্ঘুম রাত কাটে উপকূলবাসীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ০৩:৪৮ পিএম

আকাশে মেঘ আর পানি ফুঁসলেই নির্ঘুম রাত কাটে উপকূলবাসীর

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য এখানে নেই কোন টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ

আকাশে মেঘ আর বিষখালী নদীর পানি একটু ফুঁসলেই নির্ঘুম রাত কাঁটে বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী মানুষের। নদী সংলগ্ন এ উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বেতাগী পৌরসভা। পৌরসভাটি বিষখালী নদী তীরে গড়ে উঠলেও ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য এখানে নেই কোন টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ। ফলে, দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে পৌরসভাসহ আশেপাশের কয়েক গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ। পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। এসব এলাকার বেশিরভাগ মানুষকে বসবাস করতে হয় জোয়ার ভাটার নিয়ম মেনে। এ নদীর স্রোত আর ভাঙ্গন কেঁড়ে নিচ্ছে জনবসতি, মাথা গোজার ঠাঁই বসতভিটাও। জোয়ার-ভাটার খেলায় সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অসংখ্য পরিবার। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’ ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধি করে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। এরই মধ্যে পায়রা এবং মংলা সমুদ্রবন্দরে ০২ নম্বর দূরবর্তী বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ উপকূলীয় এ অঞ্চলের অবস্থান পায়রা এবং মংলা সমুদ্রবন্দরের মধ্যখানে হওয়ায় এখানকার মানুষের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াশকে ঘিরে আতংক বিরাজ করছে। বিশেষকরে বিষখালী নদীর কোলঘেঁষে বসতি গড়া মানুষরা রয়েছে চরম আতংকে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে বেতাগী পৌরশহরকে রক্ষার জন্য ২০০১ সালে বিষখালী নদীতে ব্লক ফেলার কাজের উদ্ভধন করেন এডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। তারপর আর তেমন কোন কাজ হয়নি। এরপর ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় ভেঙে যাওয়া শহররক্ষা বাঁধ স্থায়ীভাবে রক্ষার জন্য ২০১১ সালে পুনরায় উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুধু ব্লক তৈরি করে বাঁশ, বালি ও বস্তার চট রেখে লাপাত্তা হয়ে যায়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ বাঁধ মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা লুট হয়েছে। পরবর্তীতে ছয় বছর পর ২০১৭ সালের ২০ মে বিষখালী নদীর তীব্র ভাঙন থেকে বেতাগী উপজেলাকে রক্ষা করতে বেতাগী পৌর শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার বিভাগের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক একটি প্রকল্প অনুমোদন করে এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একটানা ৩ বছর অতিক্রম হলেও প্রকল্পটি এখন কেবল শুধুই কাগজে-কলমে দেখা যায় এবং জনপ্রতিনিধিদের মুখে শোনা যায়। বাস্তবে এ প্রকল্পের কোনো দেখাই নেই। প্রকল্পের দৃশ্যমান যেটুকু ছিল তা শুধু শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর। এখন সেটিও ভাঙনের মুখে পড়ে বিষখালী নদীগর্ভে বিলীনের পথে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন কিলোমিটার ব্যাপী শহররক্ষা বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়ায় পাল্টে যাচ্ছে বেতাগী পৌরসভার মানচিত্র। বেতাগীর বন্দর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী কাঠবাজার, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরনো কালীমন্দির ও শ্মশানঘাট, পুরাতন ডাকবাংলো, পুরনো থানাপাড়া, কেওড়াবুনিয়া, ছোট মোকামিয়া, ঝোপখালী গ্রামসহ বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে ১০ হাজার পরিবার। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সর্বশেষ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে পুরো বেতাগী বন্দরসহ বেতাগী বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। এসময় পৌরসভার পার্শ্ববর্তী ঝোপখালী গ্রামের শতাধিক পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল । তাছাড়া বেতাগীর ঐতিহ্যবাহী একমাত্র কাঠবাজারের অর্ধেকের বেশি দোকান ও স’ মিল বিষখালী নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বিষখালী নদী তীরবর্তী পৌরবাসীসহ আশেপাশের এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশার যেন শেষ নেই। প্রায় প্রতি বছরই উপকূলে আঘাত হানে কোনো না কোনো ঘূর্ণিঝড়। নড়বড়ে শহররক্ষা বাঁধ এবং বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় সহস্র একর ফসলি জমি। জলোচ্ছ্বাসের স্রোতে ভেসে যায় শত শত মাছের ঘের। মুখ থুবড়ে পড়ে উপজেলার কৃষি ও মৎস্য খাত। নিঃস্ব হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। যুগ যুগ ধরে চলা প্রকৃতির এমন নিষ্ঠুরতার পরও মজবুত ও টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এ জনপদের মানুষ। কাঠবাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শিগগিরই পৌরশহর রক্ষা তথা কাঠবাজার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তা না হলে বিষখালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে কয়েক বছরের মধ্যে কাঠবাজারের অস্তিত্ব কিছুই থাকবে না। বেতাগী পৌরসভার বর্তমান মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন, নানা জটিলতায় বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি আটকে ছিল। ইতোমধ্যে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই তারা একটি প্রকল্প তৈরি করবেন। বেতাগী পৌরসভার শহররক্ষা বাঁধের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আহমেদ বলেন, সদর উপজেলা এবং বেতাগী উপজেলার মোট চারটি ভ্রমণ স্থানের বাঁধ নির্মাণের জন্য আমরা একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি। ওই প্রকল্পে বেতাগী শহর রক্ষা বাঁধ রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে এই প্রকল্প অনুমোদন করলে আমরা বেতাগী শহররক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করবো। চারটি ভাঙ্গন কবলিত স্থানকে একটি প্রকল্প করার সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি গত জুন মাসে মন্ত্রনালয় পাঠানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App