×

ফিচার

সংগ্রামের নামে সাম্প্রদায়িকতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২১, ০৮:৪৪ এএম

বম্বেতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ কাউন্সিলে জিন্নাহ পাকিস্তানের দাবি তোলেন। ওই দাবি আদায়ে ডিরেক্ট অ্যাকশনের পথেই হাঁটল মুসলিম লীগ। ভারতবর্ষ সাক্ষী হলো অজস্র মৃত্যুর।

২৭ জুলাই ’৪৬ বম্বেতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগ কাউন্সিলের বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে জিন্নাহর বক্তব্যের সুর রীতিমতো আক্রমণাত্মক ছিল। জিন্নাহ দ্ব্যর্থহীনভাবে পাকিস্তানের দাবি তোলেন। মুসলিম লীগ কাউন্সিলের এই বৈঠকেই ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনাটি প্রত্যাখান করে এবং পাকিস্তানের দাবি আদায়ের পন্থা হিসেবে ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন’-এর পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জিন্নাহ এত দিন ধরে যে সাংবিধানিক পথে স্বাধীনতা অর্জনের কথা বলছিলেন, তা প্রকৃতপক্ষে একটি রাজনৈতিক চাল ছিল। জিন্নাহর সাংবিধানিক ভিত্তিতে স্বাধীনতা অর্জনের রাজনীতির যুগটি শেষ হলো। যদিও ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন’-এর জন্য গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে, আন্দোলনটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে, কিন্তু জিন্নাহ খুব ভালোভাবেই জানতেন, ‘এই থরোথরো ধর্মান্ধ আবেগ-বিস্ফোরণের’ পটভূমিকায় এমন একটি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত তীব্র হিন্দু বিদ্বেষের জন্ম দেবে।’

 ১৬ আগস্ট ১৯৪৬, কলকাতার মার্কিন কনস্যুলের রিপোর্ট অনুযায়ী ‘ডিরেক্ট অ্যাকশনের’ দিন, শুধু কলকাতাতেই ৩ হাজার মানুষের প্রাণ গেল। আহত হলেন আরো ১৭ হাজার ৫শত মানুষ। এ ঘটনার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব ভয়ংকর হলো। পরের কয়েকটা দিন ভারত অজস্র মৃত্যুর সাক্ষী হলো। বিহার, উড়িশা, উত্তর প্রদেশ, বম্বে এবং আরো অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষাক্ত আগুন ছড়িয়ে পড়ল।

[caption id="attachment_284880" align="aligncenter" width="595"] যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম বইটির কভার ফটো[/caption]

           কেবিনেট মিশন প্যান মেনে নিয়েছিল কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় দল। এ প্যান অনুসারে কথা ছিল ব্রিটিশ প্রদেশগুলোকে ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ভিত্তিতে তিনটি জোনে বিভক্ত হবে। প্রতিটি জোনে স্বায়ত্তশাসিত সরকার গঠন করা হবে। ১০ বছর পর যে কোনো জোনের অধিকার থাকবে স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে হয় পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করা বা স্থায়ীভাবে ভারতীয় ইউনিয়ন বা পাকিস্তানে যোগদান করা। এ পরিকল্পনা কংগ্রেস ও লীগ উভয়ই গ্রহণ করেছিল এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা, নোয়াখালী ও বিহার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সব সম্ভাবনাকে ভণ্ডুল করে দেয়। কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হলো। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক টেনশন। হিন্দু ও মুসলিম স¤প্রদায়কে মুখোমুখি করে তুলল। ১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি।  ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হাউস অব কমনস-এ ভারতের সাংবিধানিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ঘোষণার জন্য একটি শ্বেতপত্র দাখিল করেন। প্রধানমন্ত্রী অ্যাটলি জানালেন, ‘ব্রিটিশ সরকার চেয়েছেন, শাসনক্ষমতা সেই প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয়া হোক যারা ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের সব দলের অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই মুহূর্তে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান, এমনকি সংবিধান তৈরি হওয়ার আশাও দেখা যাচ্ছে না। এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক, খুব বেশি দিন আর তা টানা উচিত হবে না। ব্রিটিশ সরকার পরিষ্কার করে জানাতে চান যে, তাদের স্পষ্ট লক্ষ্য ১৯৪৮ সালের জুন মাসের আগে যে করেই হোক ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেওয়া।’ এ দিনই তিনি জানালেন যে লর্ড ওয়াভেল-এর উত্তরাধিকারী, পরবর্তী ভাইসরয় হতে চলেছেন লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেন।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে ‘যুক্ত বাংলা স্বাধীন-সার্বভৌম হবে’ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০, শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এ ছাড়া সংগ্রহ করা যাবে bhorerkagojprokashan.com থেকেও।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App