×

জাতীয়

মেয়াদ বাড়িয়ে লকডাউন শিথিল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২১, ০৮:২৫ এএম

চলমান বিধিনিষেধ ৩০ মে পর্যন্ত, দূরপাল্লার বাস-ট্রেন-লঞ্চ চলবে।

দেশে করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে মানুষের জীবন-জীবিকা এবং চলাচলে অসুবিধার কথা বিবেচনা করে সরকার এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত করোনা সংক্রমণ রোধে কতটা ভূমিকা রাখবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে এখনো পর্যন্ত লকডাউন কিংবা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পদ্ধতিকে সবচেয়ে কার্যকর মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

তারা বলছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা বরাবরই উল্টোপথে হেঁটেছি। বৈজ্ঞানিক কার্যকর হাতিয়ার লকডাউনকে আমরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বললেও এই কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারিনি। ফলে উদ্যোগগুলোর পুরোপুরি সুফল মিলছে না। তবে যানবাহনের চলাচল অব্যাহত রাখার বিষয়টি করোনার সংক্রমণ বাড়ার ওপর নির্ভর করবে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে যে কোনো সময় এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে গতকাল রবিবার জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

কোভিড-১৯ প্রতিরোধে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে যে লকডাউন দেয়া হয়েছে তা ‘নন মেডিকেল’ লকডাউন। এই লকডাউনের সঙ্গে মেডিকেল কম্পনেন্ট নেই। ফলে এই লকডাউন খুব একটা কাজে আসেনি। তাছাড়া লকডাউন দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধানও নয়। জীবন-জীবিকার কথাও আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আর তাই সরকার এখন যা দিচ্ছে তা চলাচলে বিধিনিষেধ। এটি মানার ক্ষেত্রেও মানুষের আগ্রহ নেই।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে যানবাহন চালুর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল ঈদের আগে এই সিদ্ধান্ত নেয়া। কারণ তাহলে মানুষ গাদাগাদি করে বাড়ি যেত না। তাতে কিছুটা হলেও সংক্রমণ কমত। তবে আমি বলব এখন আর করার কিছু নেই। যা করার ব্যক্তিকেই করতে হবে। এখন প্রত্যেককে নিজ থেকে সবকিছু মেনে চলতে হবে। যাদের সুযোগ আছে তাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া তো আর কিছু করার দেখি না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন গাড়ি বন্ধ থাকার কারণে কাজকর্মে বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। সব কিছু বিবেচনা করেই আমরা এক সপ্তাহের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হচ্ছে। যদি স্বাভাবিক থাকে, তাহলে সামনের সপ্তাহে সব খুলে দিতে পারি।

এর আগে জাতীয় পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে দোকানপাট খোলা রাখার সময়সীমা বাড়ানো, ঘর থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক পরা, অফিসে উপস্থিতি অর্ধেক করা- তবে উপস্থিতি এক-তৃতীয়াংশ হলে ভালো হয়, গণপরিবহন সক্ষমতার ৫০ ভাগ যাত্রী বহন করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে আমরা চেষ্টা করিনি, তা বলব না। কিন্তু আমাদের চেষ্টাটা দুর্বল চেষ্টা ছিল। কার্যকর চেষ্টা ছিল না। তা জনগণের পক্ষ থেকেও না, সরকারের পক্ষ থেকেও না। জনগণকে আমরা সচেতন করতে পারিনি। ব্যর্থতা দুই পক্ষেরই রয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, কঠোরতা বা আইন দিয়ে সব সময় সবকিছু হয় না। মানুষের আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। এর জন্যই মূলত কাজ করা উচিত। একটি সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। আর মানুষের আচরণগত পরিবর্তন না হলে করোনা ভাইরাসের মতো অতিমারি মোকাবিলা সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রতি মানুষের অনীহার কারণ কী- এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা মানুষের কাছে মহামারির প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছি। সামাজিক আদব-কায়দা না জানাটাও এর পেছনে একটি কারণ। মূলত এই দুই কারণেই আসলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মানুষ ১০ নম্বর বিপদ সংকেত বললে কিন্তু ঠিকই বোঝে। সাধারণ মানুষ ঘরে থাকে বা জেলে নৌকা নিয়ে বের হয় না। কিন্তু করোনা সম্পর্কে শুরু থেকেই প্রচারণাটা এমন যে এটি বিদেশি রোগ, বড়লোকের রোগ। একই সঙ্গে ‘স্টে হোম’, ‘আইসোলেশন’, ‘কোয়ারেন্টাইন’, ‘সোস্যাল ডিস্ট্যান্সিং’, ‘লকডাউন’ প্রভৃতি বিদেশি শব্দ ব্যবহার করেছি। নিজেদের ভাষায় নিজেদের সংস্কৃতির উপযোগীভাবে বোঝাতে সক্ষম হইনি বলেই সাধারণ মানুষের কাছে এই মহামারির ভয়াবহতার সঠিক বার্তা পৌঁছায়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App