×

মুক্তচিন্তা

জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূগর্ভস্থ পানির দুষ্প্রাপ্যতা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২১, ১২:০৭ এএম

বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব একটি দেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান এবং জলবায়ুর ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করবে। তবে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এভাবে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১১ শতাংশ ভূমি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে। এর পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির সংকট যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশুদ্ধ পানির চাহিদার নিশ্চয়তা প্রদান করা দুষ্কর। পৃথিবীর মোট জলভাগের মাত্র ২.৫ শতাংশ হলো সুপেয় পানি। কিন্তু এর সিংহভাগ উত্তর এবং দক্ষিণ গোলার্ধে হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ এই বিশাল জলরাশির মাত্র ০.৭ শতাংশ হচ্ছে সুপেয় পানি, যা প্রতিনিয়ত এই গ্রহের ৮০০ কোটি মানুষের চাহিদা মিটাতে হিমশিম খাচ্ছে। মূলত ভূগর্ভস্থ পানিই আমাদের খাবার পানির চাহিদা পূরণ করে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা দেখা দিতে শুরু করেছে। ঞযব ঝধভব উৎরহশরহম ডধঃবৎ ঋড়ঁহফধঃরড়হ (ঝউডঋ ২০১৮)-এর মতে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো ৮০ ভাগ রোগ পানিবাহিত। অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানির অভাবেই তারা আক্রান্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতে পানির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর ৩০০ কোটি মানুষ খাবার পানির সংকটে পড়বে। গবেষকরা বলছেন, গত ৫০ বছরে ঢাকার পানির স্তর নেমে গেছে প্রায় ৭০ মিটার। পানিচক্র হলো প্রাকৃতিক প্রভাবে ক্রমাগত রূপান্তরের মাধ্যমে পানির চক্রাকারে সঞ্চারণশীলতা। এই চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ভূগর্ভস্থ পানি। বৃষ্টির পানি পৃথিবীপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে পরিশোধিত হয়ে মাটির একটি নির্দিষ্ট স্তরে জমা হয়। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় পূর্বের তুলনায় বেশি পরিমাণ পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে চলে যাবে এবং ভূগর্ভে কম পরিমাণে পানি সঞ্চিত হবে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের দেশের ঋতুবৈচিত্র্যেও প্রভাব ফেলছে। এর ফলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সময়কাল, পরিমাণ ও স্থায়িত্বকালে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বাতাসে আর্দ্রতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে আমরা দুভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রথমত, জলীয়বাষ্পও গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সরাসরি ভূমিকা রাখছে। দ্বিতীয়ত, ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশি পরিমাণ পানি বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে চলে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ বেশি পরিমাণ পানি বাষ্পাকারে বায়ুমণ্ডলে গেলেও আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হচ্ছে না এবং ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয়কে বাধাগ্রস্ত করছে। যা আমাদের পানির চাহিদা পূরণে প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে শুধু পানির পরিমাণেই প্রভাব ফেলছে না, বরং গুণগতমানেও প্রভাব ফেলছে। উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃষ্টি পাচ্ছে এবং উপকূলবর্তী এলাকার সুপেয় পানির আধারে লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশের ফলে পানি লবণাক্ত হয়ে পানের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। পানির অপচয় রোধ ও বিকল্প আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধেও আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এজন্য আমাদের বৃক্ষ নিধন বন্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং বৃক্ষরোপণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যানবাহন, কলকারখানা, গৃহস্থালির কাজে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো যেন নিঃসরণ সীমিত রাখে সে জন্য তাদের ওপর ক্রমাগত আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। জলবায়ুর এই ক্রমাগত পরিবর্তনের লাগাম যদি এখনই শক্ত হাতে টেনে না ধরা হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে। আর উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে। নাফিস সাদিক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App