×

জাতীয়

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে: ঈদে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার মাশুল!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২১, ০৮:২৩ এএম

দেশে ঈদ পরবর্তী করোনা সংক্রমণ বাড়ার যে শঙ্কা করেছিলেন জনস্বাস্থ্যবিদরা তা সত্যি হতে চলছে। ঈদের দিন এবং তার পরের দুদিন দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল হাজারের কম। ?১৭ মে এ সংখ্যা হাজার ছাড়ায়। এরপর থেকে গতকাল শনিবারও হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। ১৪ মে ৮৪৮ জন, ১৫ মে ২৬১ জন, ১৬ মে ৩৬৩ জন, ১৭ মে এক হাজার ৫৮ জন, ১৮ মে এক হাজার ২৭২ জন, ১৯ মে এক হাজার ৬০৮ জন, ২০ মে এক হাজার ৪৫৭ জন, ২১ মে, এক হাজার ৫০৪ জন এবং ২২ মে এক হাজার ২৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঈদুল ফিতরে করোনা স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কেনাকাটা এবং সড়ক ও ফেরিতে মানুষের ঢল নামার মাশুল গোনা এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। অনেকটাই কমে আসার পর দেশে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। এই প্রেক্ষাপটে চলমান বিধিনিষেধ বা লকডাউনের মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। আজ রবিবারই আসতে পারে এ সিদ্ধান্ত। ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন মার্কেট ও দোকানে ঈদ কেনাকাটায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়, সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করে মানুষের ঈদযাত্রার চিত্র দেখে ঈদের পর করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সময় আগামী ১৪ দিন দেশের জন্য কঠিন সময় বলেও মন্তব্য করেছিলেন। আর এখন প্রতিদিনই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার বিষয়টিকে সেই শঙ্কারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন তারা। কোভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, ঈদের পর সংক্রমণ বাড়বে তা আগেই বলেছিলাম। নির্দেশনা, এত অনুরোধ, এত সতর্কতা কোনো কিছুতেই তাদের ভ্রæক্ষেপ নেই। এর মাশুলতো দিতেই হবে। ভারতও দিচ্ছে। আমাদের দেশেও মানুষের ড্যামকেয়ার ভাব দেখে মনে হয়, তারা নিজেরা করোনার ভয়াবহতাকে ডেকে আনছে।? স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা সংক্রমণের ১৯তম সপ্তাহের (৯ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) তুলনায় ২০তম সপ্তাহে (১৬ থেকে ২২ মে পর্যন্ত) নমুনা পরীক্ষা ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আর কমেছে সুস্থতা ও মৃতের সংখ্যা। ১৯তম সপ্তাহে ৮৮ হাজার ৩০৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। রোগী শনাক্ত হয়েছে সাত হাজার ৬৬৯ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৬০২ জন, মৃত্যু হয়েছে ২৪৬ জনের। আর ২০তম সপ্তাহে এক লাখ তিন হাজার ১২১টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় সাত হাজার ৯৩০ জন। সুস্থ হয়েছেন আট হাজার ৩৬৩ জন। মৃত্যু হয়ছে ২২৪ জনের। শতকরা হিসাবে নমুনা পরীক্ষা ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ আর রোগী শনাক্ত ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে। সুস্থতা ৪২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, আর মৃত্যু ৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজীর আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, লকডাউন প্রভাব ও চলাচল সীমিতকরণ করোনার সংক্রমণের বিস্তার রোধে ব্যাপক প্রভাব রেখেছে। বাংলাদেশে গত ৫ এপ্রিল থেকে যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছিল তা দৈনিক সাত হাজারের থেকে দেড় হাজারে নেমেছে।? যদি সব কিছুতে আরো? কঠোর হওয়া যেত, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টাইন অর্থবহ করা যেত তা হলে সংক্রমণ শূন্যতে নামিয়ে আনাও সম্ভবপর ছিল। কিন্তু এখন আবার সংক্রমণ বাড়ছে। রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরুর বছর অর্থাৎ গতবছর আমরা দেখেছি দুই ঈদে মানুষের অসচেতন চলাফেরা, ঈদের কেনাকাটায় স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। এর ফল হিসেবে ঈদ পরবর্তী সময়ে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলোতেও ক্রিসমাসের পর দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দিয়েছিল। কারণ, সে সময় লোকসমাগম বেশি হয়েছিল। এ বছরও ঈদের কেনাকাটার জন্য বিপণিবিতানে, ঈদযাত্রায় ফেরিতে ও বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এসব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।? এর ফলে সংক্রমণ বাড়ছে।? মানুষের আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। মানুষের আচরণগত পরিবর্তন না হলে করোনা ভাইরাসের মতো অতিমারি মোকাবিলা সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্যবিদ ও মেডিকেল অ্যান্থপলোজিস্ট ডা. চিন্ময় দাস ভোরের কাগজে বলেন, ঈদের পর সংক্রমণ বাড়ার যে আশঙ্কা আমরা করেছিলামÑ মনে হয় সংক্রমণের গতি বাড়ছে।? মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতাও কমে গেছে এবং বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানও শুরু হয়ে গেছে।? এ সবই সংক্রমণের গতি বাড়াবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা মানুষ মানছে না। এরই মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোগী শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করছে কিন্তু মানুষের মধ্যে গা ছাড়া ভাব। তাদের এমন ভাব যে তারা করোনাকে জয় করে ফেলেছে। তারা মৃত্যুকেও ভয় পায় না। আমরা অনেকটা নিরুপায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App