সঙ্কোচের বিহ্বলতায় নিজেরে অপমান
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২১, ১২:২২ এএম
১৩৩৬-এর পৌষে রবীন্দ্রনাথ জাপানি জুজুৎসু শিক্ষক তাকাগাকির রুমালে উপহার হিসেবে লিখেছিলেনÑ ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতায় নিজেরে অপমান/সংকটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ/মুক্ত করো ভয়, আপনা-মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়...’ । যদিও কারাতে ও জুজুৎসা চর্চার মাধ্যমে আত্ম প্রতিরক্ষা ও শক্তি অর্জনে উৎসাহিত করতে তিনি এটি রচনা করেছিলেন, পরবর্তীকালে এটি পরাধীন ভারতবর্ষের আত্মশক্তি, মর্যাদা অর্জনের সংগ্রামে জাতীয় সাধনার প্রেরণা হিসেবে গানটি তার স্বদেশ পর্যায়ের গান হিসেবে শ্রেণিকৃত ও সংকলিত হয়। করোনা মোকাবিলার এই মহাদুর্যোগময় মুহূর্তে, প্রেক্ষাপটে, আগামী ৩ জুন ২০২১-২২-এর বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনার দিকে সবাই যখন উৎসুক-উন্মুখ তখন রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী নিচয় কানে কেন জানি বারবার বাজছে। বড্ড প্রাসঙ্গিকতায় উঠে আসছে। সবাই নতুন বাজেট ঘোষণার সময় সরব হয় বরাদ্দ পাওয়ার বাড়ানোর বিষয়ে। এটা যেন দয়া-দাক্ষিণ্য, সুবিবেচনা প্রাপ্তির ব্যাপার। কিন্তু ‘প্রত্যাশিত’ বরাদ্দ ঘোষিত হওয়ার পর তার ‘প্রাপ্তির’ খতিয়ানে, প্রাপ্তিতে ফারাকের কারণ জানতে, দূরত্ব কমানোর কী উপায় তা নিয়ে বছরব্যাপী নিশ্চুপ, নিরুপায়, সংকোচ বোধ বড়ই অপমানজনক। আমজনতার জানার অধিকার পদ্ধতি প্রক্রিয়ার ঘেরাটোপে ‘হেনস্তার’ পরিস্থিতিতে উপনীত হচ্ছে। সেই ঔপনিবেশিক সময়ের মতো ‘জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের’ কর্তৃপক্ষের দয়া হিসেবে সদয় হয়ে বাজেট বরাদ্দ দিয়েই কৃতার্থ করা সবাইকে, জনস্বার্থকে বিকিয়ে দেয়ার কলাকৌশল সংগোপনে রাখার, কঠিন গোপনীয়তা অবলম্বনের মাধ্যমে কর শুল্ক আরোপ করার এবং সেই শুল্ককরের অর্থ কড়ায়-গণ্ডায় করদাতাকে সেবা ও সুযোগের মাধ্যমে সমবণ্টন নিশ্চিতকরণের পরিবর্তে ‘দুর্বলেরে রক্ষা করো, দুর্জনেরে হানো’ এবং সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদ-অনুশাসনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে অন্যায়-অনিয়ম দুর্নীতিকে সুরক্ষার মহাসুযোগ দিতে থাকলে, শত-সহস্র শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী (সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রারম্ভেই উচ্চারিত উদ্ভাসিত ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ’-এর দেশে) পরিবেশ পরিস্থিতিতে ‘নিজেরে অপমান’ বলে প্রতীয়মান হতে থাকবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষের বাজেট প্রস্তাবনা, পাস ও বাস্তবায়ন পরিস্থিতির সুরতহাল পর্যালোচনায় গেলে দেখা যাবে ক্রমে অনেক উন্নয়ন উন্নতি, সমূহ সংস্কার, সাফল্য, অগ্রগতির পাশাপাশি অনেক মৌলিক অধিকার অর্জন এখনো বাকির খাতায়, তার তালিকাও বেশ বড়। চেষ্টা চলছে, চেষ্টা অব্যাহত থাকুক, তবে করোনা বিপর্যয় মোকাবিলার এই পর্যায়ে চলতি বাজেট বর্ষের বরাদ্দ বাস্তবায়নের নির্মোহ মূল্যায়ন অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, এই অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীর কলাকৌশল, কর্মকৌশল আঁকতে হবে, থামাতে হবে, রশি টানতে হবে।
প্রত্যাশা এই যে, আগামী বাজেটটি হবে মানুষকে কাজে রাখার বাজেট। গুরুত্বহীন ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় কমিয়ে উৎপাদনশীল, সামাজিক নিরাপত্তা ও কর্মসৃজন প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়বে। সরকারি খাতের বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ হবে। এ জন্য থাকবে সহায়ক নীতি ও বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা। যাতে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন বিনিয়োগে। আসন্ন বজেটে এসব কৌশল নেয়া হলে কর্মসৃজন বাড়বে। তখন মানুষ কাজ পাবে। এতে একদিকে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যা অর্থনীতির অচল চাকা সচল হতে হবে প্রয়োজন এবং বাড়ার পথে থাকবে জিডিপি। এ কারণে মানুষকে কাজের মধ্যে রাখতে হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশাকে বাস্তবায়নানুগ, গৃহীত পদক্ষেপকে প্রভাবক ভূমিকায় আনা দরকার হবে। ভ্যালু ফর মানি স্পেন্ট, গুডস এন্ড সার্ভিস প্রডিউস হলেই জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্থবহ হবে। সংখ্যায় জিডিপির অঙ্ক বাড়লে এবং সেই সংখ্যাভিত্তিক জিডিপিকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণে উল্লম্ফন ঘটবে ঠিকই, কিন্তু সম্পদ ও সেবার পরিমাণ না বাড়লে এবং সেই সম্পদ ও সেবা সবার মধ্যে পরিব্যাপ্ত, বণ্টিত না হলে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বৈষম্য বৃদ্ধির সহগ ও সূচকে পরিণত হবে। কাজির খাতায় গরুর হিসাব থাকলে হবে না, গোয়ালে গরুও থাকতে হবে।
করোনায় গত বাজেট বছরের তিন মাস অর্থনীতি একেবারে স্থবির ছিল। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সরকারের বড় বড় খরচগুলো ঠিকমতো হয়নি। স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ আগের চেয়ে তেমন বেশি দেয়া হয়নি। পরে বাড়ানো হলেও তার ব্যবহার নিয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কম থাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায় করতে পারেনি রাজস্ব। ব্যাংক, বিদেশ ও ব্যক্তি খাত থেকে কঠিন শর্তের ঋণ নিয়ে সরকারকে চলতে হয়েছে। মানুষ বেকার হয়েছে। কমেছে আয়। সব মিলে একটি অস্থির পরিবেশ গেছে। করোনার চাপ কমায় চলতি বাজেট বছরে এক পর্যায়ে রাজস্ব আয়ে কিছুটা গতি এসেছিল। কিন্তু গত এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ আবার সব কিছু থমকে গেছে। পরিস্থিতি এখন আবার জটিল হতে চলেছে। গত বছরের ক্ষতি এখন পর্যন্ত কোনো খাতই কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে এলো দ্বিতীয় ঢেউয়ের হানা। আবার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। করোনা বর্গী নিকট প্রতিবেশী দেশে যেভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে, বাংলাদেশ তার অগ্রযাত্রাকে কতটা থামাতে পারবে সে নিয়ে শঙ্কা প্রবল হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন এক অনিশ্চিত পর্বে অবস্থান করছে, তাকে বিবেচনার অবশ্যই অবকাশ থেকে যাবে নতুন বাজেটে। করোনার কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোথায় কী সমস্যা হয়েছে আগে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। বাজেট বর্ষের প্রথম ৯ মাসের বাস্তবায়ন হিসাব ও পরিস্থিতি অবহিত হতে হবে। এর মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করে ওইগুলো সমাধানে কাজ করতে হবে। সমস্যা জানলে তার সমাধান এবং উত্তরণের পথনকশা শনাক্ত সম্ভব হবে। আশা করা যায়, বাজেটে সংকট মোকাবিলার সুনির্দিষ্ট পথনকশা ও কর্মপরিকল্পনার প্রতিফলন থাকবে। শুধু বরাদ্দ বাড়ানো-কমানোর পরিসংখ্যান দিলে হবে না, কীভাবে তা ব্যবহার বা অর্জন সম্ভব হবে সে ব্যাপারে কর্মপন্থা ও কড়া পরিবীক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে, প্রেসক্রাইব করতে হবে। বাজেট বরাদ্দ বড় কথা নয়, বড় কথা হবে বরাদ্দ অর্থনীতি ও পরিস্থিতিতে কীভাবে কতটুকু প্রভাবক ভূমিকা পালন করতে পারবে সেটা নিশ্চিত হওয়া বা করা। গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার খাতগুলোতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য খাতকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। গত বছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও পুষ্টিকরভাবে তা খরচ করতে পারেনি। কেন খরচ করতে পারেনিÑ সেটা দেখতে হবে। গুণগতমানের খরচ ও সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দেয়াটা এখন জরুরি। কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। এতে কর্মসৃজন হবে। বেকারত্বে দুর্নাম ঘুচবে। সরকারের অনেক অগুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে, সেগুলো থেকে অর্থ কাটছাঁট করে কর্মসংস্থানমূলক খাতে বরাদ্দ দিতে হবে। তাহলে বেশি সুফল পাওয়া যাবে। শিক্ষা খাতের বিনিয়োগকে অর্থবহ করতে হবে, না হলে শিক্ষায় করোনার ভাইরাস জাতির ভবিষ্যৎ সুস্থতাকে বিকলাঙ্গ করে দেবে।
মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা থাকলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে রাজস্ব আয় বাড়বে না, এটা মনে রেখেই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতিকে সচল সক্রিয় করেই রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। মানুষকে কর্মমুখী করতে হবে। মানুষ কাজ করলে আয় হবে। ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। কেনাকাটা করবে। ফলে বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য। এতে বাড়বে রাজস্ব আয়। ব্যবসা না বাড়লে রাজস্ব আসবে না। চলতি বাজেট বছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। অর্থনীতির মন্দা অবস্থায় এটা অর্জন করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে যদি আগামী অর্থবছরে আরো বেশি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়, সেটিও অর্জিত হবে না। এ ধরনের বাজেট হবে অবাস্তব। রাজস্ব আয়ের বাস্তবভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাজেট করতে হবে। রাজস্ব বোর্ডকে সে মর্মে দায়িত্বশীল করতে হবে। তাহলে বাজেটের প্রতি মানুষের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে বাস্তবায়ন ও গ্রহণযোগ্যতাও। সবার আগে অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অর্থনীতির চাকা থেমে থাকলে বাজার থেকে রাজস্ব আসবে না।
করোনার কারণে যেমন বিনিয়োগ কম হয়েছে, তেমনি বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতার কারণে টাকা পাচারও কম হয়েছে। এসব টাকার কিছু অংশ এ বছর সরকার কর্তৃক কালো টাকা পোষণমূলক সুযোগ প্রদানের আওতায় সাদা হয়েছে। সেখান থেকে সামান্য কিছু রাজস্ব জুটেছে। কিন্তু কালো টাকা সাদা করার ক্ষেত্রে করের হার ১০ শতাংশ করায় প্রাপ্য রাজস্ব থেকে রাষ্ট্রবঞ্চিত হয়েছে, সৎ ও নিয়মিত করদাতাদের প্রতি কর-অবিচার করা হয়েছে এবং কালো টাকার উৎস সম্পর্কে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না বলার মাধ্যমে দুর্নীতিজাত অর্থ উপার্জনকে উৎসাহিত করা হয়েছেÑ এটি সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং পরিপন্থি। দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়ার মানে শুধু দুর্নীতিকে পুনর্বাসনে সীমিত থাকবে না, কজ এন্ড ইফেক্ট হিসেবে দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার বঞ্চিতকরণ বা অস্বীকৃতির নামান্তর। এ ব্যাপারে কিছু না বলতে পারার সংকোচের বিহ্বলতা নিজের অধিকার ও কর্তব্য বোধের অপমান বৈ কিছু নয়।
মেগা প্রকল্প ব্যতিরেকে সরকারি বিনিয়োগ কম হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি বিনিয়োগ কম। অনেক বেসরকারি উদ্যোক্তা বিনিয়োগ করতে চাইলেও প্রয়োজনীয় সুবিধার অভাবে করতে পারছেন না। বিনিয়োগ সহায়ক উৎসাহ উদ্যোগ বা পলিসি নেই। আছে নানা জটিলতা। অনিশ্চয়তা। করোনা নতুন অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সংশ্লিষ্ট সব সেবা ও আইনি কাঠামো এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে হবে এবং দ্রুত কার্যকর করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যও করতে হবে।
১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে আবাসন খাত ও পুঁজিবাজারে। এ দুটিই আপাতত অনুৎপাদনশীল খাত। নতুন করে কর্মসৃজনও করতে পারে না। ফলে এর সুফল অর্থনীতি খুব একটা পাবে না। সরকার এখন বিনিয়োগ করছে মেগা প্রকল্পে। এগুলোতে কর্মসৃজন খুবই কম। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দূর ভবিষ্যতে হয়তো ভালো কিছু হবে। কিন্তু এখন দরকার জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প। যেগুলোতে দ্রুত কর্মসৃজন হয়। কালো টাকা যথাযথ পরিমাণে কর দিয়ে অর্থনীতির মূল ধারায় এনে সেগুলোকে টাকার মালিকের দায়িত্বে ও জিম্মায় কর্মসৃজনমূলক প্রকল্প, জনসম্পদ প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা খাতে অবকাঠামো নির্মাণে, এমনকি হাওর ও উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণে ব্যবহার করার জন্য তাদের বিশেষ কর অবকাশ, ভর্তুকি, প্রণোদনা দেয়া হলে আম-ছালা দুটিই রক্ষা পাবে।
গত দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এর মাধ্যমে মানবসম্পদের উন্নয়ন হচ্ছে না, শিক্ষা খাতের বিনিয়োগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে, শিক্ষা খাতের বরাদ্দ অপচয়িত হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা প্রয়োজন। সমাজ বা গ্রামভিত্তিক শিক্ষা চালু করা যেতে পারে। কারণ দেশের সব স্থানে করোনার থাবা নেই। শহরে ও নগরে করোনার প্রকোপ ঠেকানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে সেখানে অনলাইনে হলেও লেখাপড়ায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে করোনার প্রকোপ নেই বললেই চলে, সেখানে শিক্ষায়তন বা ব্যবস্থাপনা চালু রাখার বিষয়টি বাস্তবতার আলোকে অগৌন বিবেচনা প্রয়োজন। সেখানকার শিক্ষকরা স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে লাগসই পদ্ধতি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যুক্ত রাখতে হবে। মোট কথা, জরুরি মুহূর্তে স্থানীয় পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে স্থানীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। জাতীয় সমস্যার অজুহাতে স্থানীয় ব্যবস্থাপনার সক্ষমতাকে থামানো-কমানো সমীচীন হয় না, অন্তত শিক্ষার মতো অনিবার্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকে বৈষম্য সৃষ্টির সহগ হতে দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : কলাম লেখক, সাবেক সচিব ও সাবেক চেয়ারম্যান- এনবিআর।
[email protected]