কবিতা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২১, ১২:২৮ এএম
স্বপ্ন হেঁটে যায় : মৃণাল বসুচৌধুরী
সীমাহীন নিষ্ঠুরতা উন্মত্ত আগুন
কতটা পোড়াতে পারে রক্তমাখা লাশ
জ্বলন্ত বিবেক আর পবিত্র বিশ্বাস
ঊর্ধ্বমুখী হাত জানে শুদ্ধতম উচ্চারণে
কীভাবে গাইতে হয় জীবনের গান
কোথায় কখন সংগ্রামী মানুষের
পায়ে পায়ে প্রতিবাদী স্বপ্ন হেঁটে যায়
সেই ভূমিকায় খুনি : মাহমুদ কামাল
কত সহজেই মৃত্যুর হাতছানি
ঘরের ভেতরে রয়েছি তবুও জানি
মূল্যহীন-এই জীবনের টুঁটি চেপে
মধ্যপ্রাচ্য কথা বলে মেপে মেপে
দুপুর ক্রমশ ঢেকে যায় নীল বিষে
সুবিধাভোগীরা একাকার মিলেমিশে
সহসা রোদের দেখা মিলবে না ভাই
ধর্ম আমাকে সুরক্ষা দেবে না, তাই
মানুষ এবং মানুষের কথা বলি
পেছনে তাকাও দিনগুলি রাতগুলি
মনে কি পড়ে না মৃত্যুশিবির দিনের
মনে কি পড়ে না নাৎসী এন্টি-ম্যানের
আজ তোমরাই সেই ভূমিকায় খুনি
মৃত্যুর মুখে আমরা ফিলিস্তিনি।
ফিলিস্তিন : ফরিদ আহমদ দুলাল
মরুভূমি পাহাড়ের দেশে ঠিকানার খোঁজে প্রতিদিন
মৃত্যুর সমুখে যুগ যুগ জেগে আছে অমলিন
পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষের পরিচয় যেন ফিলিস্তিন!
আগ্রাসীরা স্বার্থান্ধতা জানে বস্তুত কূপমণ্ডূক
নেপথ্যে লালসা লুকিয়ে কৌশলে ওরা সর্বভূক
জাতিসংঘ-মানবাধিকার ক্ষমতার চৌবাচ্চায় যেন পালিত শামুক!
ইসরায়েল রক্তপিপাসু পেছনে সুতো নাড়ে ক্রীড়নক
অবাক পৃথিবী দেখে নৃশংসতা কী-নির্মম শোভন-ঘাতক
সভ্যতার আকাশে জাগে কি সন্দীপক!
যোদ্ধা ফিলিস্তিন জেগে থাকো তুমি আকাশের নীলে
কিছু প্রাণ নিচ্ছে কেড়ে ঈগলে ও চিলে
মানবমুক্তির দিশা খুঁজে নিতে ফোটাবেই আলো অনুপম নভোনীলে।
প্রশ্নের চিহ্নের মতো : ওমর কায়সার
প্রশ্নের চিহ্নের মতো দাঁড়িয়েছে বালিকা নাদিন
কীভাবে কবর হয় বাড়িঘর, সভ্যতারও ধ্বংসস্তূপ
জ্যৈষ্ঠের বাতাসে দেখ আজো কোনো হাহাকার নেই
অগ্নিময়ী কৃষ্ণচূড়া থমথমে কেমন নিশ্চুপ!
তারও কী রক্তের নেশা ইস্রাইলের লোভের মতো
ভূমধ্যসাগরে আজো ঢেউ খেলে কিসের উচ্ছ্বাসে?
তাকে কি আনন্দ দেয় ভিটেহারা ট্রমার পৃথিবী
তারও কী উল্লাস জাগে রক্তমাখা শিশুদের লাশে।
ভূমিপুত্র : পীযূষ দস্তিদার
অন্ধ ইতিহাসের কলেরঘরে বানানো
সুবিস্তৃত প্রতারণার মানচিত্রে
প্রাকৃতরা বারুদের চক্রব্যূহে অভিমন্যু
রক্তাক্ত প্রান্তরে যে শ্যামল যুবক দাঁড়িয়ে
সন্ত্রাসী নয়, সে আসলে মাতৃভক্ত
জন্মভূমি আড়ালে রেখে নক্ষত্র দেখে না
অবিবেকের পৃথিবীতে মানুষের
প্রতিশ্রুত সুন্দর চিত্র আঁকে
ভূমিপুত্রদের বিষাদসিন্ধুতে নৌকা ভাসায়
জীবনের গানে পাল্টে দেয় সমস্ত দৃশ্যপট
আদিগন্ত পদধ্বনিতে মুখরিত করে
বিশ^জনীন অন্তহীন প্রভাতফেরি
সীমালঙ্ঘন : আরিফ মঈনুদ্দীন
সীমালঙ্ঘনের সংজ্ঞায় তাবৎ পৃথিবীর ভাগ্যের আকাশ
উল্লম্ফন তৃষ্ণায় আকাশ স্পর্শ করার ঔদ্ধত্য
হাতের মুঠোয় নিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়েছে একদল হায়েনা এবং তাদের নেপথ্য নায়কেরা
অসহায় কিছু আদম সন্তান তাকিয়ে আছেন
অপরিচ্ছন্ন সেই ঘোলাটে মহাশূন্যের দিকে
পৃথিবীর মানুষেরা মুখ ফিরিয়ে নিলেও আশ্রয় যেখানে
ফুলশয্যা রচনা করবে সেখানেই ঠিকানা খোঁজার মচ্ছবে শামিল
তারাÑ শহীদেরা,
হাহাকার ঝরে ঝরে পড়ে
এর মাশুলও গুনে গুনে নিতে হবে পৃথিবীর মানুষেরে।
রিমা তেলবানী ও মেঘবালক : বীথি রহমান
সে তার সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছিল
অপেক্ষা করছিল তার কোমল স্পর্শের
আর অপেক্ষা ছিল তার বাদামি চোখের প্রথম দৃষ্টির
অথচ, নিষ্ঠুর নেতানিয়াহু বোমারু বিমান সাজিয়ে রেখেছিল
তাদের দুজনের জন্যেই
অতঃপর জন্মের ক্ষুধা নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করল
রিমা তেলবানীর অনাগত সন্তান
সে মুহূর্তেই মেঘ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো এক যুদ্ধাহত দেবশিশু
তার মেঘরঙা চোখে জ্বলছিল গনগনে বারুদের আগুন
গুলি কিংবা বোমা নয়, সে অত্যাচারের বদলা নেয়
মুঠো মুঠো পাথর ছুড়ে
এবার কি তবে রক্তের পারাবার পেরিয়ে জন্ম নেবে সার্বভৌম স্বাধীন-প্রিয় ফিলিস্তিন?
ফিলিস্তিন : গোলাম কিবরিয়া পিনু
ধসে ধসে যাবেÑ খসে খসে যাবে মানবতা!
কার জন্য কার কাতরতা?
আগ্রাসনের লেজটি দিয়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ধরছে
পুরো ফিলিস্তিন,
ড্রাগনটি নাচতে নাচতে আরও বৃহদাকার হয়ে যায়
শরীরে আরও শক্তি পায়!
সেইসাথে ড্রাম বাজিয়ে চলেছে কারা?
তারা বলছেÑ ‘শান্তি’! ‘শান্তি’! ‘শান্তি’!
পরিষ্কার আকাশে বোমারু বিমানের কী গর্জন
গ্রাম ও নগরে ট্যাঙ্কের উন্মাদ চলাফেরা,
শুধুই হত্যার আনন্দে অর্গানে তোলে সুর
Ñকোন সে অসুর?
এরপরও সহনশীলতার মাত্রায়
বরফস্তব্ধতা নেমে আসবে?
নতুন পিরামিড : রেজাউদ্দিন স্টালিন
ফিলিস্তিনের আকাশে চাঁদ ওঠে
হেলমেট মাথায়,
বর্ম বুকে ওঠে সূর্য।
তারারা নিঃশব্দে কাঁপে ভয়ার্ত শিশির,
ধোঁয়াভারানত মেঘ চরে বেড়ায়
উঠোনে উঠোনে।
রক্তের নদী মরে পড়ে থাকে বিছানায়
মাথার ওপর চিলেরা চেঁচায়
চিৎকারে ছিঁড়ে যায় দিগন্ত।
বোমারু ঈগল আগুনের ডিম দেয় শূন্যে,
কোথাও কোনো আর্তনাদ নেই
ধ্বংস আর হত্যা স্বাভাবিক করে
দিয়েছে নিয়ম,
বরফ আর আগুনের স্বাদ
শিশুদের জিহ্বায় এক।
জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে স্মৃতিস্তম্ভ¢,
মানুষের মাথার খুলির পিরামিড
সম্পূর্ণ নতুন,
তাকে এখনো পাহারা দেয় স্ফিংস।
ফিলিস্তিনি শিশু : শাহিন শাজনীন
মোবাইলের স্ক্রিনে; ইহুদি বর্বরতায় নিস্তব্ধ
ফিলিস্তিনি শিশুকে দেখে আমরা কাঁদছি!
অথচ তাদের বিষণ্ন পাথর চোখ বলছেÑ কেঁদো না!
তোমাদের চোখের পানি এখন অশ্রুবিলাস!
বহুকাল ধরে-নিষ্ক্রিয়তার আঘাতে তোমরাও মরে আছো
জায়নাবাদ : আইউব সৈয়দ
দ্বন্দ্ব সংঘাত আগুনেই রাঙা
সার্বভৌম ধুঁকে ধুঁকে রয়,
মরণকামড়ে সম্প্রীতি কাঁদে
ভিটেমাটি ভূতুড়ে হয়।
ছিন্নভিন্ন ‘মূলমন্ত্র’ আহা!
উধাও চোখের ঘুমই,
মুহুর্মুহু হামলায় কাঁপে
ফিলিস্তিন ভূমি।
পড়ছে খসে কথার ঢেউ
অন্ধকারে ‘সংঘ’,
বাণীহীন বিমর্ষ শত
তর্জনীতে রঙ্গ।
ফোনালাপে চায় না ফাঁদ,
বন্যজাতক ‘জায়নাবাদ’।
ওমর আমার সন্তান : সালেক নাছির উদ্দিন
বিপর্যস্ত এক মানচিত্রের কথা বলছিÑ
যেখানে শুধুই ধ্বংসস্তূপ, ধসে পড়া ইট-কাঠ-পাথরের হাহাকার
জমা হচ্ছে একে একে হৃদয়বিদারক গল্পসম্ভার
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় হারিয়েছে সহস্র হাদিদি পরিবার!
চোখের সমুখে মারা গেছে স্ত্রী ও সন্তানেরা
অবিশ্বাস্য পাঁচ মাসের ওমর বেঁচে আছে অলীক মাতৃত্বে ঘেরা;
ধ্বংসস্তূপের আড়ালে মৃত মা আঁকড়ে ধরেছিলো তাকে;
মায়ের আশ্রয় বাঁচিয়ে দিয়েছে তাকে।
শিশু ওমরের এক পায়ে আছে সামান্য জখম
হয় তো ভেঙেছে পা তবু সে পেয়েছে খোদার রহম।
হামিদির শেষ সম্বল ওমর, খুদে চোখে চেয়ে আছে বিষণ্ন বাবার দিকে
মিষ্টি হাসি ওমরের ঠোঁটে, বাবার দু’চোখ ফিকে!
হঠাৎ বাবার বুক কেঁপে ওঠে শিশুর অমøান হাসিতেই
যেন কোথাও সামান্য ধ্বংসস্তূপ নেই, মৃত্যু নেই!
এ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে অভিভূত-অপলক আছি
যেন আমিও নির্ভয় ওমরের বাবা, ফিলিস্তিনেই দাঁড়িয়ে আছি।
বিধ্বস্ত ফিলিস্তিন : সৈয়দা দুলারী ইকবাল
জ্বলছে ফিলিস্তিন, বিবর্ণ গাজা
চলছে বিমান হামলা, অসহায় মানুষগুলো পাচ্ছে
এ কেমন সাজা।
বন্ধ হোক ইসরায়েলের বর্বরতা
ভেঙে যাক বিশ্ব বিবেকের নীরবতা,
গর্জে উঠুক বিশ^ মানবতা।
বন্ধ হোক নারী শিশু তথা মানুষ হত্যা
চাই না মোরা ওআইসির মৌনতা।
জলপাই বাগানে বারুদের গন্ধ : মোহাম্মদ ইকবাল
বাতাসের বুক চিরে ধেয়ে আসছে লেজার নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্রের বৃষ্টি
এফ-৩৫ থেকে বিছিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্লাস্টার বোমার আস্তরণ।
জলপাই বাগানে বারুদের গন্ধ
নিশ্চিহ্ন জনপদের পর জনপদ
উপাসনালয়েও কাপুরুষোচিত হত্যাযজ্ঞ
তারপরও টুঁ শব্দটি করা যাবে না
শিশু নারী নিরস্ত্র জনগণ,
মরবে,
মরুক ক্ষতি কি?
মানবতার অবতারগণ তো আমাদেরই মিত্র
মানবতার স্তুতি গান ইনাদেরই রচনা
যদিও কণ্ঠে তাদের পৈশাচিক গীতের কর্কশ অনুরণন।
আমি সেই শিশু পূর্ব জেরুজালেমের পথে যার লাশ পড়েছিল
দখলদার বাহিনীর সাঁজোয়া যান থেকে তেড়ে আসা বুলেটে খানিক আগে শহীদ সহোদর,
আমার কিসের ভয়,
চরম ঘৃণায় ছুড়ে দেয়া আমার পাথরের ভাষা পড়েও কি বুঝতে পারোনি
দখল করা ফসল ও ফসলি জমি ফেরত দিতেই হয়, দেয়া লাগে।
মনে খুনি হবার বাসনা ; অদ্বৈত মারুত
বিষাদ বুকে নিয়ে গলে পড়ছে দুধ-কুয়াশা; পাঁজরের হাড় বরাবর। ক্রমে ঢুকে পড়ছে অন্ধ অলিন্দে সঘন হয়ে। বিষাদিত মুখ আরো ঢেকে যাচ্ছে; হেঁটে-হেঁটে, যুদ্ধবিমানে, চোরাগুপ্তা পথ ধরে, নগর-বন্দর হয়ে সে ছুটে চলছে স্বাধীন ফিলিস্তিনের দিকে। আর তাতে ক্রমে ভারী হয়ে উঠছে ঊষর মরুভূমির চিরল পাতাগুলো।
হে জেরুজালেম, তোমার পবিত্র যোনিতে কপটের তীব্র ধ্বনি; গলে পড়ছে ঝুরঝুর করে আর তারই শ্বাসে, একান্তে, প্রতিদিন খুন হচ্ছে শত শত যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী, সদ্য জন্ম নেয়া শিশু, সেও।
বিষাদ বুকে নিয়ে গলে পড়ছে দুধ-কুয়াশা। অন্ধ তীরন্দাজ যেন; মনজুড়ে শুধুই খুনি হওয়ার বাসনা।
জেগে ওঠো মানবতা : সুব্রত চৌধুরী
গাজার শিশু নাদিনের কান্না শুনেছ?
সে কান্না তো নাদিনের নয়, বিশ্ব মানবতার।
বিশ্ব মোড়ল, তোমার কর্ণকুহরে পৌঁছেনি সেই কান্না?
কেন তুমি বারবার ভেটো দাও?
কেন তুমি চেটেপুটে খাও ওদের লোনা রক্ত?
করোনার শিক্ষা তুমি পাওনি?
করোনা কাঁদিয়েছে আলফ্রেড, মৌমিতা, নাসরিনকে...
ধনী গরিব সবাইকে এক কাতারে নামিয়ে এনেছে করোনা।
তারপরও কেন এত বিভেদ, হিংসা, হানাহানি, রক্তপাত?
কে দেবে জবাব তার?
বিশ্ব মোড়ল? নাকি মানবতা!
নির্মমতা : মো. সাকীল খান
দানবের উৎপাত চলছে, নিরীহ জনপদে
আকাশ বাতাস হচ্ছে ভারী, বোমার প্রকম্পিতে।
নিরীহ মানুষের রক্তে ভাসছে, জনপদ ফিলিস্তিনে
তবুও তারা লড়াই করছে, মাতৃভূমির টানে।
ইমানী শক্তিতে বলীয়ান, তারা অগাধ বিশ্বাসে
ইহুদিদের সমূলে উৎপাটন করবে, আছে রক্তে মিশে।
জয়ী হতে তাদের দিতে হবে কত রক্ত নাহি জানে
স্বাধীন ফিলিস্তিনের জন্য তারা, মৃত্যুপরোয়ানা নাহি মানে।
জেগে উঠো ফিলিস্তিন : সুয়েজ করিম
জেগে উঠো ফিলিস্তিনÑ
জেগে উঠো শঙ্কার জঠর ফুঁড়ে
চোখের কর্নিয়া তোমার প্রতিরোধের অগ্ন্যুৎপাত
উড়াও মুক্তির বিজয় কেতন;
দ্যাখো হাসছে চূর্ণকুন্তলে স্বাধীন মশাল,
ভেঙে দাও হায়েনার হিংস্র দন্ত সোপান
আল-আকসার স্বর্ণখচিত মিনারে আঁকা
তোমাদের স্বাধীন আবাস।
বেঁচে থাকি : আমির আসহাব
অন্তর স্পর্শে আত্মাকে আত্মস্থ করেছি
গর্জে ওঠা হিংস্র থাবা, সহস্র বারুদের গন্ধ
ব্যথাতুর নির্মম নিমচাঘাতে রক্তাক্ত পথ।
আমিও চোখ মুদে বেরিয়ে যাই গন্তব্যে
হারিয়ে ফেলি রেটিনার ছবি
ঘামের গন্ধে নিজেকে পেলেÑ
ব্যর্থতার প্রচ্ছায় সংমূঢ় সাজে আত্মস্থ হই।
কবিতার কসম : মাহফুজ রিপন
পৃথিবীর সকল জটিল বিষয়ের সমাধান রয়েছে
বিমান থেকেÑ ক্ষেপণাস্ত্র হামলাই সমাধান নয়।
ধর্মকে পুঁজি করে তাহাদের সাপলুডু খেলা চলছে
রক্ত আর ধ্বংস মানুষকে প্রতিশোধী করে তুলছে।
পৃথিবীর সকল শিশু আজ এক জোট হয়েছে
যুদ্ধকে সবুজ শিশুরা লালকার্ড দেখিয়েছে।
পৃথিবীর সমস্ত কবি শান্তির পক্ষে
কবিরা শপথ নিয়েছেনÑ
যুদ্ধ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত,
বোমা ফেলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত
তারা আর প্রেমের কবিতা লিখবে না।
ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করো কবিতা বন্ধ করো না
কবিতা বন্ধ হলেÑ বসুধার প্রেম উড়াল দেবে।
প্যালেস্টাইন : কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান
একদলে বেচে তারে, একদলে কাড়ে
নিজ ভূমি ছিনতাই, গুলি করে মারে।
একদলে দু’আ মাগে, বিনিময়ে তক্ত
অকাতরে প্রাণ দেয় তাঁর কিছু ভক্ত।
আজও কাঁদে শালুকলতারা : আদ্যনাথ ঘোষ
এখনো সন্ধ্যানদীর জল
কেঁপে ওঠে নিদ্রাতুর চোখের ভেতর।
সূর্যের শরীর বেয়ে যে বিবেক মানুষের জাগায়
সেও আজ থই থই চোখে কালো চশমার অভিযানে মত্ত।
আজও কেন জাগেনি শালুকলতারা আলোর অন্তর ছুঁয়েÑ
আজও কেন কেঁদে ওঠে মানবতার উঠোন
ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতার দহনের লালায়।
অথচ বুলিভরা বাক্সরা জেগে থাকে মানুষের মুখোশের ডগায়।
ভালোবাসা মানে আজ যুদ্ধ যুদ্ধ বারুদ আগুন,
ভালোবাসা মানে আজ স্বপ্নহীন রঙিন ক্যানভাসÑ
বিষাক্ত কীটের কামড়ানো আয়ুহীন মানচিত্রের ধূম্রজাল।
জাগ্রত ফিলিস্তিন : এস এম তিতুমীর
কাকের কোরাস নেই, বিষণ্ন ভোর
নিম স্বাদে ভিজে গেছে মননের গলি
আমরা কি মানুষ আছি! আছে কি মনুষ্যত্ব!
বরফ সাদা বিশ্ববিবেক পাষাণ যেনÑ
অথর্ব, পঙ্গুত্বের অভিশাপে কাতর সংঘ
জাতিরক্ষী পাড়া। ফিলিস্তিনের কান্না
পুড়ে যাওয়া ঘর, ভাঙে না তাদের আয়েশ
দেখে না হাহাকার... ওই রক্তাক্ত সিনার।
রাতদিন, ক্ষতবিক্ষত ফিলিস্তিন। জেগে আছে
আমাদের পাশে। শিশু বৃদ্ধ জায়া জননীর আর্তনাদÑ
ছুঁয়ে জেগে আছি আমরা, জেগে আছে আর
ধ্বনি অবরুদ্ধ কেবলার... ওই ঊর্ধ্ব মিনার।
যেন নরকের কোনো তীর্থ : সৈয়দ শরীফ
এই শান্তির ভূমি আজকে
যেন নরকের কোনো তীর্থÑ
যদি পিপাসার টানে শান্তি
এই পৃথিবীর দিকে ফিরতো!
ফের দুনিয়ার সব মানুষও
হতো কালকেই যদি এক রে,
নুয়ে পড়তো জানি শীঘ্রই
যত দাজ্জাল, যত নেকড়ে!
যদি সব ভুলে ওই ইসরাইল
শুধু মানুষের প্রেমে পড়তো,
জেরুজালেমের সব মুসলিম
তবে শান্তিরই পথ ধরতো!
ও গো আল্লাহ, এই হত্যা
আর কতকাল ধরে চলবে?
চুপ থেকো নাÑ ওগো দয়াময়
কবে কুদরতি সুরে বলবে?
অগ্নিশিখা : এলিজা খাতুন
ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা
বিধ্বস্ত শিশুটিÑ প্রসূতি পৃথিবীর কোলে
সদ্য ভূমিষ্ঠ অগ্নিশিখা!
যেন সাদরে আদরে বেড়ে ওঠা
মানবশিশু হওয়ার কথা নয় তার!
দুখবর্ণে হিব্রুগান : সাইয়্যিদ মঞ্জু
ইস্পাত নজরে ক্ষয়ে যায় মাটি
তারপর দেখ! স্বভূমে তাড়িত উদ্বাস্তু যাপন
আয়ুর পাতায় ভিড় করে দুখবর্ণ
আগ্রাসন ধ্বংসলীলা মৃত্যু-কান্না কাতরোক্তি
ঘরপোড়া পদ্য লিখি, পড়ে নিও দারবিশ।
আমাদের প্রার্থনায় আবাবিল পাখি ডাকি
সুলাইমান নবীর দেশে
জাতটান ভেবো না আবার একচোখাজন
মানুষিক এই দায় ভর করে তোমার আমার ঘাড়ে।
মোড়ল মুখের হিব্রুগান ছলচাতুরির সুর
আগুন আগুন খেলা উপভোগে রক্তÑ খুন
‘দখলদারের মাংস’ নয় শুধু, পিপাসায়Ñ
পিয়াবো খুনির রক্ত, শান্ত পৃথিবীর প্রয়োজনে
শুনছো কি কমরেড শুনছো কি মাহমুদ দারবিশ।