×

জাতীয়

উপনির্বাচনে এত মধু!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০২১, ০৯:৩৫ এএম

উপনির্বাচনে এত মধু!
উপনির্বাচনে এত মধু!

ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ আসলামুল হকের মৃত্যুর পর ওই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিভিন্ন নেতার পোস্টারে ছেয়ে গেছে মিরপুর। গতকালের ছবি -ভোরের কাগজ

আ.লীগের ৬৭ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী

আসলামুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হয়েছে জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকার প্রবেশদ্বার এই আসনটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। মিরপুর, দারুসসালাম, শাহআলী ও রূপনগর থানার (আংশিক) নিয়ে আসনটি গঠিত। আসন্ন উপনির্বাচন ঘিরে আসলামুল হকের এই আসনে এবার প্রার্থী হতে চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৬৭ জন। দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতারাও আছেন এ তালিকায়। তালিকায় আছেন ঢাকা-১৫ ও ১৬ আসনের প্রার্থীরাও। রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রভাবশালীরাও। প্রত্যেকেই নিজের যোগ্যতা তুলে ধরে এ আসনে হতে চান নৌকার কাণ্ডারি। প্রার্থীদের অনেকেই লবিংয়ে করছেন দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে। এখনো তফসিল ঘোষণা না হলেও পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। এত পোস্টার এর আগে ঢাকার কোনো নির্র্বাচনী এলাকায় দেখা যায়নি। যদিও গত এক বছরে ঢাকা-১০, ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনে সংসদীয় উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের এত প্রার্থী ছিল না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচনী এলাকার অলিগলি ও রাস্তার মোড়গুলো নিজেদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনে সয়লাব করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এলাকাবাসীর সমর্থন চেয়ে অনুসারীরাও পোস্টার করেছেন। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অসংখ্য নেতাও নিজেদের প্রার্থিতা প্রচার করেছেন। করোনা ও রমজান মাস কেন্দ্র করে তাদের অনেকেই বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা, এতিমখানা ও বস্তিতে ত্রাণসামগ্রী, নগদ অর্থ এবং ঈদে বস্ত্র বিতরণ করেছেন। আর সেসব ছবি অনুসারীরা প্রচার করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

স্থানীয় ভোটাররা জানিয়েছেন, আসলামুল হকের সঙ্গে সবার সখ্যতা ছিল। ফলে এত প্রার্থী তখন ছিল না। তার মৃত্যুর পরপরই এই আসনটি দখলে তৎপর হয়ে উঠেন অনেকেই। দারুস সালাম থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল কবির খোকন জানান, ঢাকা-১৪ আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন চান ৬৭ জন প্রার্থী। তবে উল্লেখযোগ্য প্রার্থী ৫ থেকে ৬ জন। বাকি সবাই নিজেদের পরিচিতি ও স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটাতে প্রার্থী হয়েছেন। জানা গেছে, এখানকার নির্বাচন ও নেতৃত্বের সঙ্গে জড়িত গাবতলী পশুর হাট, বাসটার্মিনাল, ট্রাক টার্মিনাল, বালু ও পাথর ঘাট, বড় বড় শপিং মল, ফুটপাত, বোটানিক্যাল গার্ডেন, মিরপুর চিড়িয়াখানার ইজারা, খেয়াঘাট, মাজার, মাছের আড়তসহ বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তি। তাই অনেকের দৃষ্টি আসনটিতে। দলীয় মনোনয়ন পেলেই নিশ্চিত বিজয় এই ধারণাও প্রার্থীদের মধ্যে। এমপি হলেই সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হওয়া সহজ। তাই এত প্রার্থীর ছড়াছড়ি। অনুসারীরাও বাদ যাবে না এই সুবিধা থেকে। অনুসারীরাই পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ব্যানার-ফেস্টুন টানাচ্ছেন।

ঢাকা-১৪ আসনে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীরা হলেন- প্রয়াত আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ যুব মহিলা লীগ নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মাজহারুল আনাম, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশে^র চৌধুরী, বৃহত্তর মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা দেলোয়ার হোসেন, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল, গাবতলী পশুর হাটের ইজারাদার লুৎফর রহমান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এছাড়া কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একাধিক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং ২ জন বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম ও আবু তাহেরও দলীয় মনোনয়ন চান। ঢাকা-১৬ আসনের সাংসদ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ভাই এখলাসউদ্দিন মোল্লাও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মফিজুল ইসলাম বেবু, বিএনপির সাবেক সাংসদ এস এ খালেকের পুত্র এবি সিদ্দিক সাজুসহ অনেকেই।

সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি এরই মধ্যে মিরপুরের একটি রেস্তোরাঁয় স্থানীয় থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। প্রার্থী হতে গিয়ে কেউ যেন দলীয় নেতাদের চরিত্র হনন না করে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেন তিনি। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয় বৈঠকে। সবাইকে দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।

সর্বশেষ দুই জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে আসলামুল হকের দলীয় মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ সাবিনা আক্তার তুহিন। তখন মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও হাল ছাড়েননি তিনি। এলাকায় থেকে নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ত্রাণ বিতরণ, পরিচ্ছন্নতা অভিযানসহ নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তুহিন জানান, এই এলাকায় আমার বেড়ে ওঠা। বিগত দিনেও আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। মনোনয়ন না পেলেও দলের নির্দেশ মেনে নৌকার প্রার্থীকে জেতাতে নিরলস কাজ করেছি। এবার আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।

আরেক প্রার্থী মোবাশে^র চৌধুরী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর আগে তিনি ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতির মাধ্যমে এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেন। ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও। এলাকার প্রতিটি অলিগলিতে তার বিচরণ। ভোটারদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক ভালো। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তিনি ত্রাণ কার্যক্রমসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন এলাকায়। তিনি বলেন, আমি প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছি। মানুষের সাড়া পাচ্ছি। দল মনোনয়ন দিলে আসনটি দলকে উপহার দিতে পারব। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আরো আছেন- দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী। তিনি আসলামুল হকের ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত। বিগত নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারও মনোনয়ন পেতে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন।

এ বি এম মাজহারুল আনাম বলেন, ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমার রাজনীতিতে যাত্রা শুরু। মিরপুর বাংলা কলেজ ছাত্রসংদের জিএস ছিলাম। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। বিগত তিনটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। না পেলেও দলের প্রার্থীকে জেতাতে কাজ করেছি। এলাকার প্রতিটি মানবিক ও সামাজিক কাজে আমি মানুষের পাশে আছি। করোনায় মানুষের পাশে ছিলাম। এবারো দলের মনোনয়ন চাইব। দল আমাকে মনোনীত করলে বিজয়ী হতে পারব।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি বিগত নির্বাচনগুলোতে ঢাকা-১৬ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তিনি এবার ঢাকা-১৪ এর উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল গত নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে নিখিলকে প্রার্থী করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার অনুসারীরা। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চাইলে নিখিল প্রার্থী হবেন বলে ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App