×

জাতীয়

নগরবাসীর আস্থা ফিরে আসছে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২১, ১১:০৩ এএম

নগরবাসীর আস্থা ফিরে আসছে

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ফাইল ছবি

দায়িত্ব নেয়ার ১ বছর পূর্ণ করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। নগরবাসীর দোরগোড়ায় মৌলিক সেবা পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি উন্নত ঢাকা গড়তে ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে সিটি করপোরেশনের এক বছরের অর্জন ও প্রতিবন্ধকতাসহ নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন ভোরের কাগজের সঙ্গে। বিস্তারিত তুলে ধরছেন প্রতিবেদক- মুহাম্মদ রুহুল আমিন।

ভোরের কাগজ : ঢাকা ঘিরে আপনি একটি মহাপরিকল্পনার কথা নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলেন, সেই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ কতদূর? শেখ তাপস : আগামী ৩০ বছরে ঢাকাকে আমরা কোন জায়গায় নিতে চাই, সেই চিন্তা-চেতনা থেকে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। উন্নত বাংলাদেশের উন্নত একটা রাজধানী থাকবে। একটা নতুন শহর তৈরি করব। একটা সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট স্থাপিত হবে, যেটা সাংহাই, হংকং এমনকি ম্যানিলাতেও হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা বেড়িবাঁধের সড়ক মাত্র দুই লেনের। সেটাকে আমরা ৬ লেনের করতে চাই। একটি ৫০ তলা সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করতে চাই। বালু নদী থেকে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়, যেটা নতুন করে আমাদের দেয়া হয়েছে, সেখানে বাঁধ নির্মাণ করে সুপ্রশস্ত সড়ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই; যাতে সেখানে ধীরগতির যানবাহনের পাশাপাশি দ্রুতগতির যানবাহনও চলতে পারে। এরকম বিভিন্ন মেয়াদি ৩০ বছরে অনেক পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

ভোরের কাগজ : আপনি নগরবাসীর মৌলিক অধিকারগুলো দ্রুত নিশ্চিতের কথা বলেছিলেন। এক বছরে তা কতটুকু পেরেছেন? শেখ তাপস : গত বছরের ১৬ মে দায়িত্ব নিয়ে নগর ভবনে আসি। ১৭ মে কাজ শুরু করি। দায়িত্ব নিয়েই প্রথমে ডেঙ্গু নিধনে কর্মপরিকল্পনা নেই। বছরব্যাপী সমন্বিত মশকনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু করি। মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম। এ সময় ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে মাঝখানে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কিউলেক্স মশার প্রকোপ কিছুটা বাড়লেও মার্চ মাসে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছি। আমাদের যে প্রস্তুতি আছে, ইনশাল্লাহ, এবারো এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

দ্বিতীয়ত, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যা আমাকে খুবই পীড়া দিত। এটা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। প্রথম পর্যায়ে আমরা বর্জ্য ওয়ার্ডভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় নিয়ে এসেছি। জাইকা বলেছিল ওয়ার্ডভিত্তিক অ্যাপ্রোচ নিতে হবে। সে অনুসারে চলতি বছরের মধ্যেই ৭৫টি ওয়ার্ডে ১টি করে এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) নির্মাণ করছি। তৃতীয়ত, মৌলিক সেবাগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো রাতের বাতি।

এ নিয়ে অনেক অভিযোগ আগে থাকলেও এখন তা কমে এসেছে। সব জায়গায় বাতি থাকছে। মৌচাক ফ্লাইওভারের উপর একটি অংশে বাতি ছিল না, সেটা আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সেখানে বাতি লেগে যাবে। চতুর্থত, জলাবদ্ধতা। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিক‚লতা। আমি এবং উত্তরের মেয়র দুজনই এ বিষয়ে সোচ্চার। মাননীয় এলজিআরডিমন্ত্রীর উদ্যোগে অল্প সময়ে আমরা ওয়াসা থেকে খালগুলো আমাদের অধীনে পেয়েছি। ২ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত খালের ডাউন এবং আপস্ট্রিম থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টন বর্জ্য এবং ৬ লাখ টন পলিমাটি অপসারণ করেছি। সেগুলো দখলমুক্ত করেছি। শহরের ভেতরে যেসব পাম্প স্টেশন আমরা পেয়েছি, তার মধ্যে যেগুলো অচল ছিল, সেগুলো সচল করছি। পাশাপাশি কালভার্টের কাজও শুরু করেছি। ধোলাইখাল, পরীবাগ আর বাসাবোর একটি অংশের কাজ জুনেই শেষ হবে, যেগুলো গত ৩০ বছরেও হয়নি। বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছি।

পঞ্চমত, রাস্তাঘাটগুলো মেরামতে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ওয়ার্ডভিত্তিক মেরামত কাজ নিজস্ব অর্থায়নে চলছে। এটা প্রত্যেক বছর চলবে, যাতে কোনো রাস্তা আর ভাঙাচোরা না থাকে। এই ৫টি মৌলিক সেবা নিয়ে আমরা ঢাকাবাসীকে সুফল দিতে পারছি বলে আমি মনে করি। ভোরের কাগজ : ডিএসসিসিকে দুর্নীতিমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে কাজে কতটুকু সফল হয়েছেন? শেখ তাপস : এভাবে তো বলা সম্ভব না, সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত হয়েছি। তবে আগে যে উন্মুক্ত দুর্বৃত্তায়ন ছিল, সেটা বন্ধ হয়েছে। এখন হয়তো টেবিলের নিচ নিয়ে ছিঁচকে চুরি অনেকেই করে, কিন্তু উন্মুক্তভাবে করার সাহস কারো নেই। শিষ্টের পালন, দুষ্টের দমন- এভাবে করার কারণে একটা পরিবেশ ফিরে এসেছে। আগের থেকে অভিযোগের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। এভাবে নগরবাসীর মধ্যে একটা আস্থা ফিরে আসছে।

ভোরের কাগজ : ট্যাক্স না বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সে বিষয়ে কতদূর সফল হয়েছেন?শেখ তাপস : মে মাসে দায়িত্ব নিলেও কাজ শুরু করেছি সেপ্টেম্বর থেকে। এখন আমাদের রাজস্ব আহরণ প্রায় ৫২০ কোটি টাকা হয়ে গেছে। আশাবাদী ছিলাম এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করব। কিন্তু মহামারির ধাক্কায় সেটা হলো না। আইনগতভাবে রাজস্ব আয়ের ২৯টি খাত আমাদের আছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে মাত্র ৯টি খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হতো। আমরা সেটা বাড়াচ্ছি। আগে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার থেকে কোনো আয় হতো না। এখন চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ন্যায্য পাওনা ৬০ লাখ টাকা করে বছরে ৬ কোটি টাকার ওপরে পাচ্ছি। বর্জ্য সংগ্রহকারীদের নিবন্ধনের আওতায় আনায় প্রায় ৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। ডিএসসিসির আওতাধীন আবাসিক হোটেলগুলো থেকে দীর্ঘদিন কর আদায় হয়নি। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল একাত্তর, পূর্বাণী এসব হোটেলের সঙ্গে কথা বলেছি। এখান থেকে একটা অর্থ পাব। রিকশাসহ প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন দিচ্ছি, যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। সেখান থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকার ওপরে আয় করছি। ট্রেড লাইসেন্স মাত্র সোয়া ২ লাখ ছিল, যেটা ৫ থেকে ৬ লাখ হওয়ার কথা। মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারগুলো টাকা দিত না। এখন গ্রামীণ এবং বাংলালিংক টাকা দিচ্ছে। রবিও দেবে।

ভোরের কাগজ : সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মার্কেট থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের একটা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এখন সেটা বন্ধ। এ নিয়ে কী ভাবছেন? শেখ তাপস : না, উচ্ছেদ কাজ বন্ধ হয়নি। আমাদের ৯০টির মতো মার্কেট আছে। আমাদের কাছে তথ্য আছে ২১ থেকে ২৬টি মার্কেট অবৈধ দখলে আছে। আমরা সেগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করব। আরো কিছু নতুন আধুনিক মার্কেট করব। সেখানে নিচে কাঁচাবাজার আর উপরে মার্কেট থাকবে। ভোরের কাগজ : মহানগর হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল করার কথা ছিল। আপনি পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন। সেটার কী অবস্থা? শেখ তাপস : দুঃখজনক হলেও সত্য, এখন পর্যন্ত আমরা পর্যাপ্ত জনবল পাইনি। সম্প্রতি আবারো চিঠি দিয়েছি। আনুষঙ্গিক কিছু বিষয় আছে, সেগুলো আর জনবল এই দুটি হলেই চালু করতে পারব।

ভোরের কাগজ : ঝুলন্ত তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার একটা পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সেটার কী অবস্থা? শেখ তাপস : অনেক দূর এগিয়েছি। প্রথমে এটা নিয়ে আমার খুবই চাপ এসেছিল। এখন তারা উপলব্ধি করতে পেরেছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের সময় দিয়েছি। পরবর্তীতে মার্চ মাস পর্যন্ত তা বাড়িয়েছি। কিছু কিছু জায়গায় তার কেটে দেয়ায় এখন উপরের তার কমে এসেছে। আমি আশাবাদী পর্যায়ক্রমে ঢাকাকে সম্পূর্ণভাবে তারের জঞ্জালমুক্ত করতে পারব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App