×

জাতীয়

দুর্ভোগ সঙ্গী করেই ফেরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২১, ০৮:৩৫ এএম

দুর্ভোগ সঙ্গী করেই ফেরা

স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এভাবেই ঈদে বাড়ি যেতে দেখা গেছে। ছবি: ভোরের কাগজ।

সড়কে ঢাকামুখী ঢল, চোরাগোপ্তা চলেছে দূরপাল্লার বাস

পথে পথে ভোগান্তি স্বীকার করেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে ঢাকা ছেড়েছিলেন প্রায় এক কোটি মানুষ। ফেরি চলে না, যানবাহন সংকট- কোনো কিছুই বাধা হতে পারেনি ঈদযাত্রায়। ছুটি শেষ, এবার কর্মস্থলে ফেরার পালা। যে দুর্ভোগ আর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে নাড়ির টানে ছুটে গিয়েছিলেন মানুষ ; ফেরার পথেও সেই ঝুঁকি আর দুর্ভোগই সঙ্গী তাদের। ঢাকামুখী সব পথেই গতকাল সোমবার ছিল মানুষের ঢল। আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সড়কে যানবাহনের তীব্র সংকট। ছোটাছুটি করে কোনো একটি গাড়ি চড়তে পারলেও ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিছু কিছু দূরপাল্লার বাস চলাচল করলেও পুলিশ মাঝপথে বাস আটকে যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে ঈদযাত্রার চেয়ে ফিরতি যাত্রায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুরের সালনা এলাকায় শতাধিক দূরপাল্লার বাস আটক করে মামলা দিয়েছে। ১০টি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এই ভোগান্তি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবহন সংকটের ভোগান্তি মেনে নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। সোমবার সকাল থেকেই সব জেলার বাস টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড ও মহাসড়কের বিভিন্ন মোড় ও ফেরিঘাটে ছিল উপচেপড়া ভিড়। জেলার ভেতরে চলাচলরত স্থানীয় ছোট পরিবহন, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে গাদাগাদি করে লোকজন ঢাকায় ফেরার লড়াই করছে। যে যেভাবে সুযোগ পাচ্ছে সেভাবেই যানবাহনে চেপে বসেছে। লেগুনাতেও গাদাগাদি করে যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরছেন। প্রচণ্ড গরম ও দীর্ঘ সময়ের পথযাত্রায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে দূরপাল্লার বিপুলসংখ্যক বাস রবিবার বিকেল থেকে সরকারের বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই যাত্রী নিয়ে ঢাকায় চলাচল শুরু করে। অনেকেই এসব বাসে আমিনবাজার ও টঙ্গী পর্যন্ত পৌঁছেছেন। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের সালনা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ কঠোর অবস্থান নেয়। দুপুর পর্যন্ত পুলিশ এই সড়কে চলাচলরত শতাধিক দূরপাল্লার বাস আটক করে মামলা দেয়। ১০টি বাস ডাম্পিংয়ে পাঠায়। এসব বাস থেকে যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে দেয়। এর ফলে যাত্রীরা আরো ভোগান্তিতে পড়েছেন। গাবতলীতে পৌঁছে রংপুর থেকে আসা যাত্রী মুসফিক জানান, ১৭০০ টাকা ভাড়ায় তিনি একটি বাসে ওঠেন। গাজীপুর পৌঁছলে পুলিশ যাত্রীদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে বাসটি আটক করে মামলা দেয়। এর পর ৩ দফায় ভেঙে ভেঙে আমিনবাজার পর্যন্ত আসেন। যারা বাস পাননি তারা মাথাপিছু ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়ায় মাইক্রোবাসে আসার চেষ্টা করছেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর থেকেই পুলিশের ভয়ে অনেক বাস ও মাইক্রোবাস যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে নিয়ে আবার ঘুরে টাঙ্গাইলের দিকে চলে যাওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। এখান থেকে আব্দুল্লাপুর আসার যানবাহন মিলছে না। পকেটে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় অনেকে হেঁটেই রওনা হয়েছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ বলেন, সবার নিরাপত্তার কথা ভেবেই স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। আমার সে নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য। আমরা ভেবেছিলাম ঈদের আগে সরকার বাস চলাচলের অনুমতি দেবে, প্রস্তুতও ছিলাম। দূরপাল্লার বাস চলাচল থাকলে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদযাত্রা করতে পারত। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকত না। এখন মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে, করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে। এই অবস্থায় স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছেন। এই সব মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে পারছে না। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কের মোড়ে মোড়ে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কখনো কখনো কোনো ট্রাক বা মিনিট্রাক পেলে ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদি করে তাতেই উঠে পড়ছেন। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন ভেঙে ভেঙে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে এসে নামছে। কিন্তু এরপর ঢাকাগামী যানবাহনের অভাবে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এই এলাকায় মানুষের উপচেপড়া ভিড়। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুপুর থেকেই যানবাহন ও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ রয়েছে। প্রতিটি যানবাহনেই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের ছুটিতে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে মানুষ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক-পিকআপে গাদাগাদি করে যাচ্ছে। আবার অনেকেই মাইলের পর মাইল হেঁটে এবং ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হচ্ছে। পথে পথে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি ভিত্তিতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার নন-এসি বাস সার্ভিস চালু করা হলে যাত্রীদের ভোগান্তি এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে। যানবাহন সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা। সব জেলা থেকে বিভিন্নভাবে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পৌঁছার পর তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। শতশত যাত্রী ও যানবাহনের চাপ রয়েছে উভয় ফেরিঘাটে। পরিবহন না থাকায় যানবাহনের ভোগান্তির পাশাপাশি প্রখর রোদ ও গরমে যাত্রীরা দিশাহারা। ফেরিঘাটে যাত্রী ছাউনি বা টার্মিনাল নেই। যানবাহন থেকে নেমে রোদ উপেক্ষা করেই হেঁটে ফেরিতে উঠতে হয়। এরপর ফেরির খোলা ডেকে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যাত্রীর চাপ ও বিশৃঙ্খলা সামালাতে ফেরিঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার ভোররাত থেকেই হাজার হাজার মানুষ ঘাটে আসছে। মানুষের পাশাপাশি মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও অন্যান্য যানবাহনের চাপও বেড়েছে। সবাই নদী পাড় হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ফেরিগুলোতে যানবাহন আর যাত্রীর চাপে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। বরিশাল থেকে ঢাকায় আসা বাদশা মিয়া জানান, ফেরিঘাট পর্যন্ত আসতেই ১৩০০ টাকা খরচ হয়েছে। টাকা খরচ করেও ভোগান্তি থেকে বাঁচা যাচ্ছে না। ফেরিতে অনেক ভিড়। ফেরিপার হওয়ায় পর আবার গাড়ি ধরার পালা। এই গরমে পথে পথে ভোগান্তি। ঈদের আগে বাস ও লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেয়া হলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে পুলিশের শিথিলতার কারণে দূরপাল্লার বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল অবাধে চলাচল করছে। যানবাহন ও মানুষের চাপে এই সড়কের সাভার থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত গতকাল থেমে থেমে যানজট হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App