×

আন্তর্জাতিক

গাজায় এবার কী লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছে ইসরায়েল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২১, ০৯:২৮ এএম

গাজায় গত সোমবার থেকে ইসরায়েল যে ভয়াবহ মাত্রায় বিমান হামলা করছে তার নজির বিরল। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর দেওয়া হিসাবেই শনিবার পর্যন্ত গাজার ৬৫০টি টার্গেটে বিমান হামলা হয়েছে। অর্থাৎ সোমবার থেকে গড়ে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ বার ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমান গাজায় উড়ে গিয়ে বোমা ফেলছে। সেই সঙ্গে চলছে সীমান্ত থেকে দূরপাল্লার কামানের গোলা।

গাজায় স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দু’শর কাছাকাছি যার মধ্যে ৫২ জন শিশু। ফলে গাজায় মতো অত্যন্ত ঘনবসতি একটি এলাকায় নির্বিচারে বোমা হামলা নিয়ে জাতিসংঘসহ বহু দেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিন্তু এখনও এসব নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই ইসরায়েলের। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখনও বলছেন, ‘যতদিন প্রয়োজন‘ গাজায় বিমান হামলা চলবে। খবর বিবিসি বাংলার।

প্রশ্ন হচ্ছে, ঠিক কোন প্রয়োজনের কথা বলছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী? গাজায় এ দফার এই সামরিক অভিযান থেকে কোন উদ্দেশ্য তারা হাসিল করতে চাইছে?

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা জেরুজালেম ইন্সটিটিউট অব স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড সিকিউরিটি‘র (জেআইএসএস) গবেষক ড. জনাথন স্পায়ার  বলেন, আমি মনে করি ইসরায়েল হামাসের রকেট নিক্ষেপের জবাবই দিচ্ছে। হামাসকে এমন একটি বার্তা দিতে চাইছে যে ভবিষ্যতে যেন এমন সাহস তারা না দেখায়। এছাড়া, গোপন জটিল কোনো উদ্দেশ্য ইসরায়েলের আছে বলে মনে হয়না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দেওয়া হিসাবে হামাস গত সাতদিনে গাজা থেকে তেল আবিবসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে প্রায় তিন হাজারের মত রকেট ছোঁড়া হয়েছে. যার আঘাতে মারা গেছে দশজন। রবিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে তারা গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে টার্গেট করে এবং তার বাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। দাবি করা হয়েছে গত কদিনে হামাসের হামাসের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কজন নেতা মারা গেছেন। ইসরায়েল কি তাহলে গাজা থেকে হামাসকে উৎখাত করতে চাইছে?

ড. স্পায়ার বলেন, তিনি মনে করেন না এই দফায় ইসরায়েলের তেমন কোনো লক্ষ্য রয়েছে। সামরিকভাবে সেটা হয়তো ইসরায়েলের পক্ষে সম্ভব, কিন্তু তার জন্য যে মূল্য দিতে হতে পারে ইসরায়েল তার জন্য প্রস্তুত নয়।

তিনি বলেন, প্রথম কথা, হামাসকে গাজা থেকে সরাতে ইসরায়েলকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যাপক মাত্রায় স্থল অভিযান চালাতে হতে পারে। তার অর্থ বহু প্রাণহানির আশঙ্কা, ইসরায়েলি নাগরিকের প্রাণহানি ইসরায়েলে খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়, রাজনীতিকরা সেই ঝুঁকি নিতে চাননা।

অনেক পর্যবেক্ষকই বিশ্বাস করেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া ইসরায়েলের রাজনৈতিক স্বার্থেরও পরিপন্থী, কারণ হামাসের কারণেই ফিলিস্তিনিরা রাজনৈতিকভাবে এবং ভৌগলিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত রয়েছে যা রাজনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সুবিধা দিচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রখ্যাত রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এফরাইম ইনবার মনে করেন ইসরায়েল এই বাস্তবতা মেনে নিয়েছে যে হামাস বা লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী হেযবোল্লার মত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নিশ্চিহ্ন করা হয়তো সম্ভব নয়, এবং সে কারণে ইসরায়েল এসব গোষ্ঠীর ব্যাপারে, তার ভাষায়, ‘মোয়িং দি গ্রাস‘ অর্থাৎ “ঘাস চেঁছে রাখার” কৌশল অনুসরণ করছে।

২০০২ সালে ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদা, ২০০৬ সালে হেযবোল্লার সাথে যুদ্ধ এবং ২০০৬ এবং ২০০৮ সালে গাযায় হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে ২০১৩ সালে তার এক গবেষণাপত্রে অধ্যপক ইনবার লেখেন- “ইসরায়েল মেনে নিয়েছে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে তাদের লড়াই হবে দীর্ঘ এবং জটিল। সাময়িক শক্তি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ এবং নিশ্চিত বিজয় সম্ভব নয়। ফলে মাঝেমধ্যে তীব্র শক্তি প্রয়োগ করে এসব শত্রুদের শক্তি কিছুটা খর্ব করার কৌশল তারা নিয়েছে যাতে কিছুদিনের জন্য তারা ঠাণ্ডা থাকবে, ইসরায়েলের ওপর হামলা করতে ভয় পাবে এবং সীমান্ত কিছুদিন ঠাণ্ডা থাকবে।”

ড স্পায়ারও মনে করেন, ইসরায়েল এবারও হামাসের ব্যাপারে সেই নীতিই অনুসরণ করছে এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো এ দফার অভিযান বন্ধ হবে।“ইতিমধ্যেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতার কথা উঠছে। আমেরিকা বলছে, মিশর বলছে। আমার মনে হয় আর খুব বেশিদিন এই অভিযান চলবে না।“ড. মনে করেন, ইসরায়েলি সরকার ও সেনাবাহিনী “বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ“ লক্ষ্য অর্জনের দাবি করবে।

এদিকে, গাজায় দিনের পর দিন বোমাবর্ষণ এবং বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি নিয়ে মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ এবং অস্বস্তি বাড়ছে।

সৌদি আরবের জেদ্দায় রোববার ইসলামি ঐক্য জোট বা ওআইসির একটি জরুরি বৈঠক হচ্ছে। আল আকসা মসজিদ চত্বরে ইসরায়েলি পুলিশের হামলা এবং তারপর গাজায় প্রাণহানির জেরে ‘আব্রাহাম চুক্তি‘ নামে পরিচিত যে শান্তিচুক্তি কয়েকটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের হয়েছে সেটি চাপের মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাঙ্ক গার্ডনার। মধ্যপ্রাচ্যের আরো অনেক বিশ্লেষকই সেই সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App