×

মুক্তচিন্তা

ফলে বিষ মেশানো বন্ধে নজরদারি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ মে ২০২১, ১২:১২ এএম

বাংলাদেশে জ্যৈষ্ঠ মাস মধু মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে বাহারি ও ভিন্ন স্বাদের অসংখ্য ফল পাওয়া যায়। এসব ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, বাঙ্গি, বেল, আতা, তরমুজ, লটকন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গরমে তাপ যত বাড়ে পাকা কাঁঠালের ম-ম গন্ধ ততই ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের উঠানগুলোতে। গ্রাম-বাংলায় একসঙ্গে মিলেমিশে ফল খাওয়ার দৃশ্য এখনো চোখে পড়ে। ঘরে ঘরে চলে ফল খাওয়ার উৎসব। গ্রাম-বাংলায় একে অন্যের বাড়িতে উপহার হিসেবে ফল পাঠানোর রেওয়াজ এখনো চালু আছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ বেশকিছু মৌসুমি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। গ্রামের বাজার ও শহরের অলিগলিতে ইতোমধ্যে হরেক রকমের ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে ভরে মধু মাসের এসব ফল আসছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এসব ফলের অধিকাংশেই মেশানে হচ্ছে বিষ। বিষ মেশানো এসব ফল বিক্রি হচ্ছে সারাদেশের শহর, বন্দর ও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এখন রমজান মাস থাকায় মৌসুমি এসব ফলের কদরও বেশি বাজারে। মুসলমানরা প্রতিদিনই ইফতারিতে রকমারি ফল দিয়ে তাদের রমজানের ক্লান্তি দূর করেন। কিন্তু বাজারের এসব ফল কতটুকু নিরাপদ এ নিয়ে প্রশ্ন জাগে সবার মনে। মৌসুমি ফল ও খাদ্যে বিষ প্রয়োগ বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, বাঙ্গি, তরমুজসহ বেশ কিছু ফলে মেশানো হচ্ছে বিষ। বাজার এখন বিষ মেশানো ফলে সয়লাব। বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর কারণে ফলে পুষ্টি ও স্বাদ কোনোটাই পাওয়া যাচ্ছে না ঠিকমতো। অনেকে ভয়ে মৌসুমি এসব ফল কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। আবার অনেকে বাজার থেকে আনা ফল খেয়ে অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। অথচ করোনা মোকাবিলায় দৈহিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মৌসুমি পুষ্টিকর ফল গ্রহণ করা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফ লাভের আশায় ফলকে দীর্ঘক্ষণ তাজা রাখার জন্য ব্যবহার করছে বিষাক্ত ফরমালিন, যা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যার কারণে বিষ মেশানো এসব ফল খেয়ে প্রতিদিনই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। অন্যদিকে কাঁচা ফলকে দ্রুত পাকানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে কারবাইড। অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিমাত্রায় মুনাফা লাভের নেশায় আম গাছে না পাকিয়ে কাঁচা আম পেড়ে ফেলে আর সুবিধামতো সময়ে দূর-দূরান্তে পাঠানোর সময় কারবাইড মিশিয়ে পার্সেল করে, যাতে এক রাতের মধ্যে আমগুলো পেকে যায়। কারবাইড ও ফরমালিন মূলত সরাসরি বিষ। আর বিষ মেশানো এসব ফল খেয়ে প্রতিদিন নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। মৌসুমি ফল ও খাদ্যে বিষ প্রয়োগ বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো ফল খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ফরমালিন দেহে গেলে ক্যান্সার, লিউকেমিয়া ও চর্ম রোগ হয়। কারবাইড মেশানো আম খেলে জন্ডিস, গ্যাসট্রিক, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় কিডনি ও লিভার কষ্ট হয়ে যেতে পারে। বিষ মেশানো ফল খেয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। দিন দিন শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া বিষ মেশানো ফল খেলে গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত ফল খেলে প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিরাপদ খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। নিরাপদ খাদ্য মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম পূর্বশর্তও বটে। বিষমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে অবশ্যই কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি জনগণের মাঝে সচেতনতাও তৈরি করতে হবে এবং ফলমূল দেখে বুঝে কিনতে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জনশক্তি ও কর্মপরিধি উভয়ই বৃদ্ধি করতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে। ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্যে বিষ প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো বন্ধে সরকারকে কার্যকর ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষের রোগব্যাধি যেমন বাড়বে, তেমনি তৈরি হবে মেধাশূন্য জাতি, যা দেশের জন্য এক ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। আগামী প্রজন্মকে সুস্থ ও সবলভাবে গড়ে তুলতে নিরাপদ বিষমুক্ত খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই।

মো. আশরাফুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App