×

সারাদেশ

রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙ্গে জমজমাট ঈদের বাজার, বাড়ছে উদ্বেগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২১, ০৯:৪৯ পিএম

রাজশাহীতে স্বাস্থ্যবিধি ভেঙ্গে জমজমাট ঈদের বাজার, বাড়ছে উদ্বেগ

রাজশাহীতে ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি

রাজশাহীতে ঈদ পূর্ব সময়ে করোনা ভাইরাস ভিন্নরূপ ধারণ করেছে। করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়েছে আক্রান্ত এক শিশুর। করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রতিদিনিই মৃত্যু হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসা পেয়েও করোনায় মারা গেছেন ক্ষমতাসীন দলের জেলার শীর্ষ নেতা। তবুও প্রতিদিনিই রাজশাহীর বিপণী বিতানগুলোতে থাকছে উপচেপড়া ভিড়। মাস্ক পরিধান ছাড়া কোনো স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না। গত এপ্রিল মাসে মার্কেট খোলার দাবিতে আন্দোলনের সময় ব্যবসায়ীরা সকল স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারী নির্দেশনা মেনে ক্রয় বিক্রয় করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে সবকিছুই উপেক্ষিত হচ্ছে। ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার ঠাঁই নেই সড়কে। কেনাকাটা চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত।

সোমবার (১০ মে) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নগরীর আরডিএ মার্কেট, নিউ মার্কেট, কোর্ট বাজার, উপশহরসহ বড় বড় মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছেন তারা। শিশু সন্তানদের সাথে এনে কিনছেন পছন্দের জিনিস। এদিন কাপড় ও কসমেটিকসের দোকানে বেশি সমাগম ছিল ক্রেতাদের। দোকানগুলোতে পাঞ্জাবি, গেঞ্জি, লুঙ্গি, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজ, ওড়না, শাড়ির বাহারি ডিজাইন তাদের নজর কাড়ছে। ক্রেতাদের চাহিদা দেখে অতিরিক্ত দাম হাকাচ্ছেন দোকানীরা। দাম নিয়ে দর কষাকষির এক পর্যায়ে কোনো কোনো ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বাকবিতণ্ডাও হয়। মার্কেটের মূল ফটকের সামনে দু’জন করে আনসার সদস্য ও একজন করে মার্কেট কমিটির অফিস স্টাফকে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে ছিল না উল্লেখযোগ্য পুলিশের উপস্থিতি।

ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পূর্ব প্রস্ততি স্বরূপ কেনাকেটা করতে এসেছেন তারা। করোনার প্রকোপ বাড়লেও অনেক দিন থেকে করোনা স্থায়ী হওয়াও তারা এখন আর আগের মতো শঙ্কিত নন। এছাড়া মৃত্যু হলেও মারা যাওয়ার পূর্বে শখ অপূর্ণ না রাখার জন্যই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা। জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে ঈদের বাজার করতে আরডিএ মার্কেটে আসেন মো. দেলোয়ার হেসেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে মা-বাবা অসুস্থ। তাদের খুশি করতে এবং বছরের ঈদ উৎসবকে উপভোগ্য করতে মার্কেট করতে এসেছি। করোনার জন্য তো আনন্দ মাটি করতে পারি না। তবে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীদের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে মার্কেট বন্ধ থাকায় তারা চরম লোকসান গুনছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা। সেজন্যই কিছুটা বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে। তবে ঈদের পর সবকিছু স্বাভাবিক হলে বাড়তি দাম নেয়া হবে না। আর স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তারা বলেন, ক্রেতারা নিজে থেকে সচেতন না হলে তারা তো জোর করে মানাতে পারবেন না। এটি নিয়ে বিক্রেতাদের কিছুই করার নেই। ফুটপাত ব্যবসায়ী আসগর জানান, প্রথমে লকডাউন থাকায় বেচাকেনা হয়নি। এখন কিছুটা বেড়েছে। এভাবে বেচাবিক্রি হলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন তিনি।

ঈদের বাজার করতে প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। শিশু সন্তানদের সঙ্গে করে মার্কেটে নিয়ে আসায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এছাড়া সড়কে গাড়ি চলাচল করছে স্বাভাবিকভাবে। এমনকি ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজিপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ রাজশাহী আসছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্য অনেকে মাইক্রোবাস ভাড়া করে ফিরতে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অন্য যাত্রীর সন্ধান করছেন এবং ভাড়া পুষিয়ে নিতে এক গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তবে সবকিছুতে প্রশাসনের শিথিলতা থাকলেও কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগের মতোই চালানো হচ্ছে তৎপরতা। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতে তারা সক্রিয় রয়েছেন। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দিবাগত রাতেই হাসপাতালটিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারা গেছেন। করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৮৮ জন। আর আইসিইউতে চিকিৎসা চলছে ১২ জনের। এছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, করোনায় বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত ৫০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০৪ জন মারা গেছেন বগুড়ায়। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজশাহীতে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App