×

জাতীয়

ভয়াবহ সংক্রমণের আশঙ্কা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মে ২০২১, ০৯:১৮ এএম

করোনা থেকে বাঁচতে সরকার এবং বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে পরামর্শ দিয়েছেন তা বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে জীবনের চেয়ে ঈদের কেনাকাটা ও গ্রামের বাড়িতে যাওয়াই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে। সড়কে গাড়ি না থাকলেও পথে পথে মানুষের ঢল। দূরপাল্লার গাড়ি না থাকায় একাধিক জায়গায় যানবাহন পাল্টে দুর্ভোগ সঙ্গী করে গ্রামে যাচ্ছে মানুষ। গেল বার ঈদের পর দেশে ব্যাপক হারে করোনার সংক্রমণ বেড়েছিল, বেড়েছিল মৃত্যুও। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা আর বর্তমানে মানুষের অসচেতনতার চিত্র ভাবিয়ে তুলেছে সরকার ও বিশেষজ্ঞদের। চিন্তার ভাঁজ আরো গভীর করেছে দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশের বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সতর্ক না হলে ঈদের পরে চরম খারাপ পরিণতি ঘটতে পারে। আগের চেয়েও সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে। তা সামাল দেয়ার সক্ষমতা বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেরও নেই। আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেইনি। এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশে জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে উদাসিনতা বরাবরই ছিল। দিন দিন পরিস্থিতি যখন জটিলের দিকে যাচ্ছে তখন মানুষের এই উদাসিনতা যেন আরো বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু যারা এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে তারা কাজটি ঠিকমতো পালন করছেন না। যদি করতেন তাহলে কীভাবে ঢাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ বের হয়ে ফেরিঘাটে গিয়ে ভিড় করল? কেন ঢাকা থেকে বের হওয়ার পয়েন্টে তাদের আটকে দেয়া হলো না? এ বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত। যে কোনো মূল্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থায় যেতে হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সেনাবাহিনী নামানো যেতে পারে। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যবিধির শিথিলতার কারণে ভারতে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশেও মার্চে একই কারণে সংক্রমণের হার বেড়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, ভিড়, ফেরিতে গাদাগাদি করে ওঠা এবং ঈদের জামাতে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঈদের ২ সপ্তাহ পর সংক্রমণ আবারো বাড়বে। ভারতীয় বা অন্য যে কোনো ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন ভাইরাস রোধ করার নিয়ম একই। আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। এদিকে গতকাল রবিবার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে করোনা সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এটি আশা জাগানিয়া খবর

হলেও এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। কারণ রাজধানী থেকে গাদাগাদি করে গ্রামের বাড়ি ফেরার ঘটনা উদ্বেগজনক। লকডাউন শিথিলতার কারণে যদি এমনটা চলতে থাকে তাহলে ঈদের পর পরিস্থিতি ভালো থেকে খারাপের দিকে চলে যেতে পারে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রসঙ্গে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ভারতীয় যে ভ্যারিয়েন্টটি দেশে এসেছে সেটিকে সতর্কতার সঙ্গে দেখা উচিত। এর প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগ আছে। দেশবাসী ভয় না পেয়ে এ পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারলে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের যে স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছেÑ তা ধরে রাখা সম্ভব হবে। ভ্যারিয়েন্ট যেটাই হোক না কেন চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায় একই। সুতরাং করোনা সংক্রমণমুক্ত হতে চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, অক্সিজেন নিয়ে আপাতত কোনো সংকট নেই। আগামী দিনগুলোতেও সংকটের কারণ দেখি না। বর্তমানে যে পরিমাণ অক্সিজেনের চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে আড়াই থেকে তিনগুণ অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশ থেকে অক্সিজেন জেনারেটর আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে হাইফ্লো ন্যাজেল ক্যানুলা ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পর্যাপ্ত সংখ্যক সরবরাহ করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা এখন ২০ হাজারের বেশি রয়েছে। করোনা নমুনা শনাক্তে ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়িয়ে ৪৪৩টি করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App